মাহমুদউল্লাহর বলা ‘দক্ষতা’র প্রয়োগ কোথায়

কাল দুঃস্বপ্নের একটা ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে প্রথম সাক্ষাতেই দুঃস্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাটিং করে ইংলিশ বোলারদের বিপক্ষে লিটন, নাঈম, মাহমুদউল্লাহরা ছিলেন রীতিমতো অসহায়। অথচ এমন কোনো দুর্ধর্ষ বোলিং ইংল্যান্ড কাল করেনি। হতাশ করা ব্যাটিংয়ে স্কোরবোর্ডে সাকল্যে ১২৪ রান তুলে আর যা-ই হোক জেসন রয়, জস বাটলার, মঈন আলীদের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করা যায় না।

কাল ম্যাচ হারার পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ফেলার সমস্যাটা যে বাংলাদেশ দলে প্রকট, সেটি বলেছেন। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মেরে খেলা বা পাওয়ার হিটের প্রসঙ্গে ব্যাটসম্যানদের দক্ষতার বিষয়টি টেনেছেন। বলেছেন, ‘আমরা পাওয়ার হিটের চেয়ে ব্যাটসম্যানদের দক্ষতার ওপর জোর দিই। আর এ ব্যাপার বদল করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষতা দিয়েই ভালো রান করতে পারি।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ভুল সময়ে ভুল শট খেলেন
ছবি: বিসিবি

মাহমুদউল্লাহ যে দক্ষতার কথা বলেছেন, সেটি কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দক্ষতা দেখিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম আর মুশফিকুর রহিম। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের ব্যাটেও দক্ষতার ব্যাপারটি দেখা গেছে। কিন্তু প্রতি ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আউটের ধরন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। লিটন দাস প্রায় প্রতি ম্যাচেই শুরু করেছেন। কিন্তু সেটকে বড় করার দক্ষতা দেখাতে পারেননি।

নাঈম পাওয়ার হিটার নন, সেটি তিনি নিজেই বলেছেন। কিন্তু দক্ষতা দেখাতে গিয়ে তিনি প্রচুর বল খেলে ফেলছেন, যেটি পরবর্তী সময়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য চাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মুশফিকুর রহিম খুবই দক্ষ, দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু কাল উইকেটে মোটামুটি সেট হয়েও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইংলিশ লেগ স্পিনার লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। মুশফিক রিভার্স সুইপ আর স্কুপ-জাতীয় অপ্রচলিত শট খেলতে গিয়ে যে কতবার উইকেট দিয়েছেন, এর হিসাব নেই।

মুশফিক দক্ষতা দেখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে। সে ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং মাহমুদউল্লাহর দাবির সঙ্গে মেলে। কেবল মৌলিক ক্রিকেট শট খেলেও যে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুতগতিতে রান তোলা যায়, সেদিন সেটি দেখিয়েছেন। যদিও সে ম্যাচে তিনি স্কুপ খেলেছিলেন, ম্যাচের একেবারে শেষ বলে সফলও হয়েছেন। কিন্তু এর আগে দুবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও বলেন এ কথা। আসলেই বাংলাদেশ দলে কোনো পাওয়ার হিটার নেই। আমাদের ব্যাটসম্যানরা কাইরন পোলার্ড কিংবা আন্দ্রে রাসেলেরে মতো তুলে তুলে মারতে পারেন না। কিন্তু যে দক্ষতা আছে, সেটিতে তাঁরা আস্থা রাখতে পারেন না বলেই বারবার বিপদে পড়ে দল। আশরাফুলের মতে, কেবল মৌলিক ক্রিকেট খেলেই বাংলাদেশ প্রতি ম্যাচে খুব সহজে ১৫০ থেকে ১৬০ রান স্কোরবোর্ড তুলতে পারে। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় শট খেলার প্রবণতা সেটি হতে দিচ্ছে না।

এ মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে যাওয়া প্রায় সব ব্যাটসম্যানই দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। পাওয়ার হিটার, কিন্তু শীর্ষ ব্যাটসম্যান—এমন কয়জন আছেন ক্রিকেট-বিশ্বে? এই যে পাকিস্তানের হয়ে দুর্দান্ত খেলছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান আর বাবর আজম—তাঁরা কেউই পাওয়ার হিটার নন। বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুলও ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ মেনে, নিজেদের মৌলিক দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। আমাদের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে রিজওয়ান-বাবর-কোহলি-রাহুলদের পার্থক্য একটা জায়গাতেই। তারা নিজেদের দক্ষতার ওপর আস্থা রেখে সেই দক্ষতা বাড়িয়ে চলেছেন, আর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-লিটনদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে দক্ষতা প্রয়োগে ধারাবাহিকতার অভাব।

ভুল সময়ে ভুল শট খেলার অভ্যাস বদলাতে না পারলে আসলে দক্ষতার কথা বলে লাভ নেই। ব্যাপারটি নিয়ে একটু ভাবতে পারেন মুশফিক-সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা।