লিটন-মিরাজে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সেশন

একটা সেশন নির্বিঘ্নেই পার করে দিলেন লিটন ও মিরাজ।ছবি: শামসুল হক

২৭ ওভার। ৯১ রান। শুধু রানের হিসেবেই বেশ ভালো একটা সেশন। তবে বাংলাদেশের জন্য রানের চেয়েও এই মুহূর্তে  বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেশনের অন্য হিসেবটা। উইকেটের সংখ্যার ঘরে মিরপুরে আজ দ্বিতীয় সেশনে একটা শূন্য রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।

লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজকে সেজন্য ধন্যবাদ দেবে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন প্রথম সেশনে যা করতে পারেননি, দ্বিতীয় সেশনে ঠিক তা-ই করে দেখিয়েছেন লিটন-মিরাজ। ঝুঁকি না নিয়ে ব্যাটিং করে গেছেন।

তাতে ফলোঅনের শঙ্কা তো কেটেছেই, এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১৩৭ রান পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ আশা দেখে, এই দুজনের ব্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে করা ৪০৯ রানের আরও কাছে যেতে পারবে। একটু দুঃসাহসী মনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানটা পেরিয়ে যাওয়ার আশাও হয়তো জাগছে, তবে এখনই সে আশায় ঘর বাঁধা হয়তো বাড়াবাড়ি।

লিটন ও মিরাজ দুজনই ফিফটি পেয়েছেন। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি পাওয়া মিরাজ চা-বিরতির সময়ে অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে। আর চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি পাওয়া লিটন পেয়েছেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি, চা-বিরতিতে গেছেন ৬৬ রান নিয়ে। বাংলাদেশের রান ৬ উইকেটে ২৭২।

মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ ছিল হতাশ। বিরতির কিছুক্ষণ আগে ২৫ বলের ব্যবধানে ফিরে গেছেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিঠুন ও মুশফিক। দুজনই বলতে গেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন, এর মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে ২২তম ফিফটি তুলে নেওয়া মুশফিকের আউটটা বেশি চোখে লেগেছে। হয়তো তাঁকে ঘিরেই প্রত্যাশা বেশি ছিল বলেই তাঁর আউটের ধরণটা বিরক্তি কুড়িয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।

দারুণ ব্যাটিং করছেন লিটন।
ছবি: প্রথম আলো

আগের বলেও ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া মুশফিক কর্নওয়ালের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। বাংলাদেশ তখনো ফলোঅন থেকে বাঁচার জন্যই দরকার ছিল ৫৫ রান! মধ্যাহ্নবিরতির সময়ে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ২২৮ রানে, ফলোঅন এড়াতে দরকার ছিল ২৯ রান।

দুরু দুরু শঙ্কায় আজ মিরপুরে দিনের দ্বিতীয় সেশনটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ, লিটন ও মিরাজের সৌজন্যে বুকে কিছুটা প্রাণ ফিরেছে। এখন পর্যন্ত ৩৮ ওভার ৪ বল মেয়াদী ১১৭ রানের জুটিতে দুজনে খেলেছেন ঝুঁকিহীন ক্রিকেট। দু-একবার পরাস্ত হননি, এমন নয়। বাজে বল পেলে চারও মেরেছেন। তবে এই উইকেটে যে চাইলেই টিকে থাকা যায়, উইকেটে যে ব্যাটসম্যান বাজে শট না খেললে তাঁকে আউট করা কঠিন – সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন লিটন ও মিরাজ।

মিরাজ পেয়েছেন টেস্টে তৃতীয় ফিফটি।
ছবি: প্রথম আলো

৮০তম ওভারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন বল নেওয়ায় জুটিটা ভাঙার শঙ্কা আবার ঘিরে ধরেছিল। নতুন বল পেতেই আক্রমণে ফিরেছেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। গতি-বাউন্সে ভয় ধরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাঙতে পারেননি জুটি।

এখনই অবশ্য বাংলাদেশের আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কিছু নেই। একটা সেশন ভালো কেটেছে, সম্ভবত মিরপুর টেস্টে তিন দিনে এই প্রথম কোনো সেশনে একচ্ছত্র দাপট বাংলাদেশের। তবে চা-বিরতির পর সেটি টেনে না নিয়ে যেতে পারলে এই দাপটও ব্যর্থই হয়ে যাবে।