শারজায় অনেক স্মৃতি বাংলাদেশের

১৯৯৫ এশিয়া কাপে শারজার মাঠে বাংলাদেশ দলছবি: শামসুল হক

শারজা ক্রিকেট মাঠের আজ বাংলাদেশের নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে বড্ড স্মৃতিকাতর করে তোলারই কথা। কিন্তু স্মৃতির কাছে ফেরার সুযোগ তিনি আজই পাচ্ছেন না। ভিসা জটিলতায় তিনি দলের সঙ্গে যেতে পারেননি। থেকে গেছেন মাসকাটেই। হয়তো সেখানে বসেই তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠবে ১৯৯৫ সালের শারজা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ যে মাঠে খেলবে বাংলাদেশ, সে মাঠেই ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হয়েছিলেন হাবিবুল। কী আশ্চর্য! সেদিনও যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। পার্থক্য একটাই, ২৬ বছর আগে সে ম্যাচ ছিল ওয়ানডে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণ ক্রিকেট দুনিয়ায় তখনো অজানা এক বিষয়।

আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। শারজার এ ম্যাচ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে স্মৃতিকাতর করে তুলবে। হাবিবুল বাশারই নন, এ মাঠের সঙ্গে যে জড়িয়ে আছে দেশের বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের অভিষেক-মুহূর্তের স্মৃতি—খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, জাভেদ ওমর, আনিসুর রহমান, হাসিবুল হোসেন, নাঈমুর রহমান, সাজ্জাদ আহমেদ, এনামুল হকদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক যে এ মাঠেই।

শারজায় বাংলাদেশ প্রথম খেলেছিল টেস্ট মর্যাদা পাওয়ারও ১০ বছর আগে—১৯৯০ সালে। সে বছর এপ্রিলে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছিল খেলার। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে অনুষ্ঠিত সেই অস্ট্রেলেশিয়া কাপে বাংলাদেশ পড়েছিল সে সময়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে কিউইদের ৩৩৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ১৭৭। সে সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। সে ম্যাচেই আজহার হোসেনের ব্যাট থেকে এসেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অর্ধশতক।

দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করে ৮ উইকেটে ১৩৪ করা বাংলাদেশ হেরেছিল ৭ উইকেটে। সে ম্যাচে স্টিভ ওয়াহ, মার্ভ হিউজ, সাইমন ও’ডোনেল, পিটার টেইলরদের বল খেলেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘নবীন’ দল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আমিনুল ইসলাম করেছিলেন সর্বোচ্চ ৪১। শারজা বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনের বিদায়–মঞ্চও। ১৯৯০ অস্ট্রেলেশিয়া কাপের পর গাজী আশরাফ বিদায় নেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।

১৯৯৫ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচেই ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক আকরাম খানের সঙ্গে ভারতীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ছবি: শামসুল হক

পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৫ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ আবার মাঠে নামে শারজায়। সে আসরেই অভিষেক হয় একঝাঁক ক্রিকেটারের, যাঁরা পরবর্তীকালে মাতিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট। দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। দলকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। পরবর্তীকালে তাঁরাই দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছেন। নিজেদের পরিণত করেছেন ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে।

শারজার মাঠ এমনিতেই স্মৃতিময়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কতশত স্মৃতি এ মাঠে। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে সে স্মৃতিগুলো অনেকের মনেই জড়ো হতে বাধ্য। ১৯৮৬ সালে ভারতের বিপক্ষে জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই শেষ বলে ছক্কা, ১৯৯১ সালে ভারতের বিপক্ষে আকিব জাভেদের হ্যাটট্রিকসহ ৭ উইকেট, ১৯৯৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্রায়ান লারার সেই ১৬৯ রানের ইনিংস, শচীন টেন্ডুলকারের দর্শকদের হৃদয়ে ঝড় তোলা একাধিক ইনিংস; কোনটা ছেড়ে কোনটা মনে করবেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেই সঙ্গে এ মাঠের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বেশ কয়েকটি দারুণ স্মৃতি, এ মাঠেই যে প্রথম কোনো টেস্ট দলকে অলআউট করেছিল বাংলাদেশ (১৯৯৫ শারজা এশিয়া কাপ, শ্রীলঙ্কা)।

মাঝে ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড। শারজায় টস করতে নামছেন আকরাম ও আজহার
ছবি: শামসুল হক

আজ এই শারজায় ২৬ বছর পর বাংলাদেশ মাঠে নামছে। এটাও একটা অদ্ভুত ঘটনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত হওয়ার পর সারা দুনিয়ায় এত মাঠে বাংলাদেশ খেলেছে, কিন্তু শারজায় কেন যেন কখনোই খেলা হয়নি। শারজার প্রতিবেশী শহর আবুধাবি, দুবাইয়েও খেলা হয়েছে, কিন্তু শারজা সব সময়ই বাংলাদেশ থেকে দূরে সরে থেকেছে। আজ সে বৃত্তটা পূরণ হচ্ছে বাংলাদেশের।

স্মৃতিময় শারজায় আজ বাংলাদেশে নতুন গল্পের জন্ম দিক—গল্পটা হোক আনন্দের, মনে রাখার। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের এটাই চাওয়া।