শেষ ওভারে সানরাইজার্সকে হারাল লক্ষ্ণৌ

বোলারদের দৃঢ়তায় জিতেছে লক্ষ্ণৌছবি: আইপিএল

আইপিএলে ১৬৯ রানের সংগ্রহ লড়াকু হলেও তেমন আহামরি কিছু না। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভার শেষে জয়ের পথে থাকলেও শেষ ১০ ওভারে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বোলারদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে।

তাতে ৭ উইকেটে ১৬৯ রানের পুঁজি নিয়ে লড়ে শেষ পর্যন্ত সানরাইজার্সের বিপক্ষে ১২ রানের জয় পেয়েছে লক্ষ্ণৌ।

জয়ের জন্য ওভারপ্রতি গড়ে সাড়ে ৮ রান করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জে তেমন ভালো হয়নি সানরাইজার্সের। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৪০। কেন উইলিয়ামসন (১৬) ও অভিষেক শর্মাকে পাওয়ারপ্লের মধ্যে তুলে নেন লক্ষ্ণৌ পেসার আবেশ খান। এখান থেকে তৃতীয় উইকেটে এইডেন মার্করাম ও রাহুল ত্রিপাঠির ৩১ বলে ৪৪ রানের জুটিতে চাপ কাটিয়ে ওঠে সানরাইজার্স। ১০ ওভার শেষে সানরাইজার্সের স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৮২।

অর্ধশতক তুলে নেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক রাহুল
ছবি: আইপিএল

পরের ওভারে ক্রুনাল পান্ডিয়ার প্রথম বলে মার্করাম (১২) আউট হওয়ার পর নামেন ক্যারিবিয়ান হার্ড হিটার নিকোলাস পুরান। ৫৯ বলে ৮৮ রান—লক্ষ্যটা খুব একটা কঠিন ছিল না পুরান ও ত্রিপাঠির জন্য। কিন্তু ৩০ বলে ৪৪ রান করা ত্রিপাঠি ১৪তম ওভারে ক্রুনালকে সুইপ করে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন। এরপর ওয়াশিংটন সুন্দর এসে জুটি বাঁধেন পুরানের সঙ্গে।

দুজনের ব্যাটে ভর করে ১৫তম ওভার শেষেও জয় থেকে খুব একটা দূরে ছিল না সানরাইজার্স। শেষ ৩০ বলে দরকার ছিল ৫০ রান। পুরান তখন উইকেটে ‘সেট’—বোঝাই যাচ্ছিল, পুরোপুরি হাত খোলার সময় হয়েছে তাঁর।

সানরাইজার্স ১৮ বলে ৩৩ রানের সমীকরণে থাকতে আবেশ খানের হাতে বল তুলে দেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক রাহুল। প্রথম বলেই তাঁকে পুল করে ছক্কা মারেন পুরান। কিন্তু তৃতীয় বলে পুরানকে (২৪ বলে ৩৪) লং অনে ক্যাচে পরিণত করেন আবেশ খান। পরের বলেই আবদুল সামাদকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন এই পেসার।

শেষটা ভালো হয়নি সানরাইজার্সের
ছবি: আইপিএল

১৮তম ওভারে ৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন তিনি। শেষ দুই ওভারে ২৬ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি সুন্দর ও রোমারিও শেফার্ড। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। ৯ উইকেটে ১৫৭ রানেই থেমেছে সানরাইজার্সের ইনিংস।৪ উইকেট নেন আবেশ খান, ৩ উইকেট হোল্ডারের।

লক্ষ্ণৌ ১৭০ ছুঁই ছুঁই সংগ্রহ পেয়েছে দুটি জুটিতে ভর করে। চতুর্থ উইকেটে দীপক হুদার সঙ্গে ৬২ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল। পরের উইকেটে আয়ুশ বাদোনি এবং রাহুলের কাছ থেকে ১৮ বলে ৩০ রানের জুটি পায় লক্ষ্ণৌ। আর সপ্তম উইকেটে ৭ বলে ১৯ রানের জুটিতে লক্ষ্ণৌর শেষটা ভালো করে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন জেসন হোল্ডার ও বাদানি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ পেসার রোমারিও শেফার্ডের করা শেষ ওভারে চার-ছক্কায় ১৬ রান তোলেন হোল্ডার-বাদুনি।

আলাদা করে বলতে গেলে লক্ষ্ণৌর ইনিংস টেনেছেন মূলত দুজন—ওপেনার লোকেশ রাহুল ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দীপক হুদা।

৫ ওভারের মধ্যে ২৭ রানে কুইন্টন ডি কক (১), এভিন লুইস (১) ও মনীশ পাণ্ডেকে (১১) হারায় লক্ষ্ণৌ। নিজের প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ৬ রানে কক ও লুইসকে তুলে নিয়ে দারুণ শুরু করেছিলেন সানরাইজার্স স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে ১৭তম ওভারে গিয়ে নিজের বোলিং কোটার শেষ ওভারটা ভালো হয়নি এই অফ স্পিনারের। রাহুল-দীপককে ১৭ রান দেন। রাহুল চার-ছক্কায় একাই তোলেন ১২ রান। আইপিএলের এ মৌসুমে অফ স্পিনারদের বিপক্ষে রাহুলের স্ট্রাইক রেট দুই শর বেশি!

শুরুতে চাপে পড়া লক্ষ্ণৌকে রাহুল ও দীপকই পথে ফেরান। পঞ্চম ওভারে পাণ্ডকে শেফার্ড তুলে নেওয়ার পর জুটি বাঁধেন রাহুল ও দীপক। শুরুতে দেখেশুনে খেলে বাজে বল পেলেই মেরেছেন দুজন। দশম ওভারে সানরাইজার্স পেসার উমরান মালিকের এক ওভার থেকেই ২০ রান নেন দীপক ও রাহুল। ১৪তম ওভারে আবারও মালিকের ওপর চড়াও হয়ে তোলেন ১৬ রান।

১০ ওভার শেষে রাহুল ২৬ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত, দীপক অন্য প্রান্তে ১৫ বলে ২০ রানে ব্যাট করছিলেন। ১৫তম ওভারের পর সেই দীপকই ৩২ বলে ৫১, রাহুল ৩৯ বলে ৪৯! দীপক পরের ওভারে আউট হলেও রাহুল অর্ধশতক তুলে নেন। শেষ ৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান তুলছে লক্ষ্ণৌ।

১ ছক্কা ও ৬ চারে ৫০ বলে ৬৮ রান করে টি নটরাজনের বলে আউট হন রাহুল। ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৩ বলে ৫১ রানে শেফার্ডকে উইকেট দেন দীপক। সানরাইজার্সের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ওয়াশিংটন সুন্দর, রোমারিও শেফার্ড ও টি নটরাজন।