শ্রীলঙ্কাকে অকল্পনীয় দুর্দশা থেকে বাঁচানোর আহ্বান মাহেলা–সাঙ্গার

দেশের মানুষের দুর্দশায় কাতর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের দুই সেরা তারকাফাইল ছবি

বলা হচ্ছে, এমন সংকটে নাকি স্বাধীনতার পর শ্রীলঙ্কা আর কখনোই পড়েনি। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে শ্রীলঙ্কা। এখন অর্থনৈতিক সংকটে ক্রান্তিকাল পার করছে দেশটি। গোটা আশি ও নব্বইয়ের দশকজুড়ে তামিল ও সিংহলি সহিংসতা দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। বড় সংকট ছিল সেটিও। কিন্তু খাদ্য, জ্বালানি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের নতুন সংকট অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। দেশের মানুষের জন্য দোকানে খাবার নেই, থাকলেও বিক্রি হচ্ছে আকাশছোঁয়া দামে, চাকরি নেই, বিদ্যুৎ নেই, কলম্বোর মতো শহরে ঘোষণা দিয়ে দিনে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না—এমন অবস্থা তো গৃহযুদ্ধের সময়ও ছিল না।

মানুষের পেটে টান মানেই অস্থিরতা। শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। মাতৃভূমির এমন দুর্দশা ছুঁয়ে যাচ্ছে ইতিহাসসেরা লঙ্কান ক্রিকেটারদেরও।

অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভ চলছে শ্রীলঙ্কাজুড়ে
ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম দুই সেরা তারকা কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। দেশের এই বাজে অবস্থায় চুপ থাকতে পারেননি তাঁরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। জয়াবর্ধনে এ মুহূর্তে আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচের দায়িত্বে, সাঙ্গাকারা আছেন রাজস্থান রয়্যালসের ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্বে।

জয়াবর্ধনে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ও কারফিউ দেখে খারাপ লাগছে। সরকার জনগণের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করতে পারে না, তাদের প্রতিবাদ করার সব রকম অধিকার আছে। যারা প্রতিবাদ করছে, তাদের আটক করা মোটেও উচিত নয়।’

দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ লোকদের সরে যাওয়ার কথাও বলেছেন জয়াবর্ধনে, ‘সত্যিকারের নেতারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে। আমাদের দেশের মানুষদের রক্ষা করতে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে, দুর্দশায় পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে ভালো একটা দল দরকার। নষ্ট করার মতো সময় নেই। এখন বিনয়ী হওয়ার সময়, ঠিক কাজটা করার সময়, অজুহাতের নয়।’

শ্রীলঙ্কায় জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা, মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী
ছবি: রয়টার্স

সাঙ্গাকারা ইনস্টাগ্রাম–পোস্টে লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কানদের অকল্পনীয় কঠিন এক সময় যাচ্ছে। একটা দিন কাটাতে লোকদের দুর্দশা ও ভোগান্তি দেখাটা হৃদয়বিদারক, দিনগুলো কঠিন হয়ে উঠছে। জনগণ সরব হচ্ছে, সমাধান চাইছে। কেউ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন এসবে, কেউ অনাহূত সুযোগ নিতে চাইছেন। সঠিক কাজটা হবে তাঁদের কথা শোনা, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ধ্বংসাত্মক চিন্তাভাবনা সরিয়ে শ্রীলঙ্কার স্বার্থে কাজ করা। জনগণ শত্রু নয়। জনগণই শ্রীলঙ্কা। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। জনগণ ও তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হবে অবশ্যই।’

টুইটারে নিজের হতাশার কথা জানিয়েছেন ক্রিকেটার ভানুকা রাজাপক্ষেও। এদিকে কলম্বোয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দেখা গেছে সাঙ্গাকারার স্ত্রী ইয়াহেলিকে। সংসদের ২২৫ সদস্যকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুষেছেন তিনি, ‘তরুণদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন তাঁরা, এ কারণেই এসেছি এখানে। এর পেছনে ২২৫ জন মানুষের দায় আছে।’