শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে শেখার আছে যে চার

শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন ক্যারিবীয় পেসাররা। ছবি: এএফপি
শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন ক্যারিবীয় পেসাররা। ছবি: এএফপি

আজ অ্যান্টিগায় শুরু হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট। টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ কেমন করবে, সেটি এখনই বলা কঠিন। তবে সাকিবরা নিশ্চয়ই চোখ বুলিয়ে নেবেন কদিন আগে শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পরিসংখ্যানে।

কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন টেস্টের সিরিজ খেলে গেছে শ্রীলঙ্কা। ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পরও সিরিজটা শেষ পর্যন্ত ১-১ ড্র করে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কানরা। আজ অ্যান্টিগা টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বিশ্লেষণ করেছে, কীভাবে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সফল হয়েছে শ্রীলঙ্কা। সেই বিশ্লেষণে ফুটে উঠবে ক্যারিবীয় টপ অর্ডারের ছন্দ হারিয়ে ফেলার বিষয়টি, কিংবা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শক্তিশালী পেস বোলিং আক্রমণ।

নড়বড়ে টপ অর্ডার
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো সিরিজে ভুগেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডার। বিশেষ করে ওপেনিং জুটি। ছয় ইনিংসের মাত্র একটিতেই ৫০ পেরোতে পেরেছে ক্রেগ ব্রাফেট-ডেভন স্মিথের ওপেনিং জুটি। এই জুটি তুলতে পেরেছে গড়ে ১৮ রান। ওপেনিং জুটির সঙ্গে ধারাবাহিক ব্যর্থ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারও। ছয় ইনিংসের পাঁচটিতেই স্কোরবোর্ডে ১০০ রান যোগ না হতেই ৩-৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা চাইবেন বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে। এখন বাংলাদেশের বোলাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারকে ছন্দে ফিরতে দেবেন, নাকি শ্রীলঙ্কার দেখিয়ে দেওয়া পথে হাঁটবেন, সেটিই দেখার।

উজ্জ্বল লোয়ার মিডল ও লেট অর্ডার
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টপ অর্ডার ধারাবাহিক ব্যর্থ হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাঁচিয়েছেন তাদের লোয়ার মিডল ও লেজের ব্যাটসম্যানরা। ত্রিনিদাদ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ৮ উইকেটে ৪১৪ রান করেছিল, সেটি বড় অবদান লোয়ার অর্ডারের। একটা সময়ে ক্যারিবীয়দের রান ছিল ৬ উইকেটে ২৩৭। বাকি ৪ উইকেটে আসে ১৭৭ রান। ছয়ে নামা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ডারিচ অপরাজিত ১২৫ রানে। হোল্ডার-ডারিচের সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ৯০, বিশু-ডারিচের অষ্টম উইকেট জুটিতে ১০২ ও রোচ-ডারিচের নবম উইকেট যোগ করেন ৭৫ রান।

সেন্ট লুসিয়ায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উদ্ধার করেছে চেজ-ডারিচের পঞ্চম উইকেটে যোগ করা ৭৮ রান। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৯৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ক্যারিবীয়দের ৬৪ রানে পড়ে গিয়েছিল ৪ উইকেট। ব্রাফেট-হোপের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে যোগ করা ৫৩ রান বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে টপ অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতার চড়া মূল্যই দিতে হয়েছে বারবাডোজে সিরিজের শেষ টেস্টে। শ্রীলঙ্কা টেস্টটা শেষ পর্যন্ত জিতেছে ৪ উইকেটে। বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার বিশ্লেষকের খাতায় একজন ব্যাটসম্যানের নাম হয়তো ভালোভাবে চিহ্নিত হয়েছে—ডারিচ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো সিরিজে ধারাবাহিক ছিলেন এই ক্যারিবীয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ৩ টেস্টে ৫৭.৬০ গড়ে তাঁর রান ২৮৮।

পেসারদের দাপট
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গোটা সিরিজে তোপ দেগেছেন ক্যারিবীয় পেসাররা। উইন্ডিজ পেস আক্রমণে সবার আগে ছিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। ৩ টেস্টে নিয়েছেন ২০ উইকেট। শুধু সেন্ট লুসিয়া টেস্টেই নিয়েছেন ১৩টি। শ্রীলঙ্কার যে ৫৪ উইকেট নিয়েছে ক্যারিবীয়রা, এর মধ্যে ৪৬টিই পেসারদের। অর্থাৎ ৮৫ শতাংশ উইকেটই পেসারদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যে কঠিন পরীক্ষা নেবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা, সেটি বোঝা গেল প্রস্তুতি ম্যাচেও। অ্যান্টিগায় বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ৪০৩ করলেও আলজারি জোসেপকে কিন্তু ৪ উইকেট দিতে হয়েছে।

স্পিনারদের কঠিন পরীক্ষা
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের অন্যতম শক্তি স্পিন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আছেন। আছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহকেও নিশ্চয়ই ভালোভাবে ব্যবহার করতে চাইবেন অধিনায়ক। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যেভাবে খাবি খেয়েছেন শ্রীলঙ্কান স্পিনাররা, বাংলাদেশের জন্য সেটি বিরাট অশনিসংকেতই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা দুই দলের স্পিনারদের মধ্যে যা একটু ‘সফল’ দেবেন্দ্র বিশু ও রোস্টন চেজ, দুজনই পেয়েছেন ৪টি করে উইকেট। শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ পেয়েছেন মাত্র ৩ উইকেট। পুরো সিরিজে ৯৯ উইকেটের ৮৩টিই পেসারদের। স্পিনারদের দখলে মাত্র ১৯ শতাংশ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের বিপাকে ফেলতে সাকিবদের দুর্দান্ত কিছুই করতে হবে।