সাকিব-গেইল আছেন, তবু বরিশালের ভাবনা ব্যাটিং

সাকিবই বরিশালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণফাইল ছবি: প্রথম আলো
২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) অষ্টম আসর। ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের ঘরোয়া এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে কোন দলের শক্তি কেমন, তা নিয়েই এই ধারাবাহিক প্রতিবেদন। আজ দ্বিতীয় পর্বে পড়ুন ফরচুন বরিশালের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে—

প্রথমে সাকিব আল হাসান, এরপর ক্রিস গেইল। বিপিএলে ফরচুন বরিশাল দলটির আলোচনায় আসতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল। এরপর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা বিপিএলের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় দলটিতে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন টি-টোয়েন্টির আরেক তারকা ডোয়াইন ব্রাভো।

আফগানিস্তানের স্পিন জাদুকর মুজিব উর রহমানের সঙ্গেও ড্রাফটের আগে থেকেই চুক্তি করে রেখেছিল দলটি। বরিশালের দলের ভারসাম্য গড়ে দিতে এটুকুই যথেষ্ট। তবু ব্যাটিং নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা থাকছেই।

সাকিবের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের গ্রাফ কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের সর্বশেষ অর্ধশতক ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। গত অক্টোবরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে দুটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস আছে বটে, তবে সেটি ছিল ওমানের ব্যাটিং স্বর্গে। বিপিএলের মন্থর উইকেটে সাকিব ব্যাট হাতে কেমন করেন, সেটিই দেখার বিষয়।

ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো দুজনই আছেন বরিশালে
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের আরেক তারকা গেইলও তাঁর সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী, আর ব্যাটিং ছন্দ ফিরে পাওয়ার জন্য বিপিএল বেশ কঠিন জায়গাই।

বরিশাল তাই কত রান তুলতে পারবে, সেটি মূলত নির্ভর করবে দলের স্থানীয় তিন তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন, মুনিম শাহরিয়াদ ও নুরুল হাসানের ওপর।

ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তিনজনই সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে ভালো করেছেন। আবাহনীর উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মুনিম ১৪ ম্যাচে ১৪৩.৭২ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৫৫ রান। আবাহনীরই তিন-চারে নেমে ১৬ ম্যাচে নাজমুলের ৩৬৮ রান দলের ব্যাটিংয়ের সুর বেঁধে দিয়েছে। আর প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ১৬ ম্যাচে শেখ জামালের অধিনায়ক নুরুলের ৩৮৯ রান তো টুর্নামেন্টেরই তৃতীয় সর্বোচ্চ।

উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান হতে পারেন বরিশালের তুরুপের তাস
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

স্কোরবোর্ডে রান পেলে বরিশালের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রান তোলা কঠিনই হওয়ার কথা। সাকিবের চার ওভার যেকোনো দলের মাথাব্যথার কারণ হবে। মুজিব ও ব্রাভোর বোলিং বাংলাদেশের কন্ডিশনের জন্য আদর্শ।

প্রতিপক্ষ চাইবে বরিশালের চতুর্থ ও পঞ্চম বোলারের ওপর চড়াও হতে। সেই বোলার হতে পারেন মেহেদী হাসান (রানা) অথবা শফিকুর ইসলাম। এই দুই বাঁহাতি পেসারও ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ ফর্মে আছেন। তবে সদ্য সমাপ্ত ইনডিপেনডেন্স কাপের ফর্ম বিচার করলে এগিয়ে থাকবেন বিসিবি হাই পারফরম্যান্স দলের পেসার শফিকুর। অফ স্পিনার হিসেবে নাঈম হাসান একাদশে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন। সৈকত আলীও থাকবেন দৌড়ে।

বরিশাল অধিনায়ক সাকিবের দৃষ্টিতে তাঁর দল অবশ্য যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ। তবু কাগজে-কলমে ভারসাম্যপূর্ণ হলেও মাঠের পারফরম্যান্সই যে আসল, সেটি তো সাকিবের ভালোই জানা।

ফরচুন বরিশালের স্কোয়াড 

সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুনিম শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান রানা, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, তৌহিদ হৃদয়, জিয়াউর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সৈকত আলী, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম, সালমান হোসেন, ইরফান শুক্কুর, মুজিব উর রহমান, ক্রিস গেইল, আলজারি জোসেফ, ডোয়াইন ব্রাভো, জেক লিন্টট।

দুদিন আগে বরিশালের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরের পর তাই সাকিব বলছিলেন, ‘দল নিয়ে খুবই খুশি। ভারসাম্যপূর্ণ দল। প্রতিটি দলই ভালো, মাঠে ভালো পারফর্ম করতে হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কাল বরিশালের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদও সাকিবের সঙ্গে কাজ করার রোমাঞ্চের কথা জানালেন, ‘যে দলে সাকিব আল হাসান আছে, সেই দলে কাজ করা তো সব সময়ই সহজ। আমি আর সাকিব ঢাকার (ঢাকা ডায়নামাইটস) হয়ে চার বছর কাজ করেছি। আমার আর সাকিবের রসায়ন সব সময়ই ভালো।’

এই দল নিয়ে শিরোপা জয়ের আশা মাহমুদের, ‘অনেক চিন্তাভাবনা করেই দল করেছি। প্রতিটি দলই শক্তিশালী। আমরাও যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে মাঠের পারফরম্যান্সটাই গুরুত্বপূর্ণ। যদি পারফরম্যান্স ভালো থাকে, তাহলে প্রথমবারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো যথেষ্ট ভালো দল আমরা।’

আরও পড়ুন