গত ডিসেম্বরের কথা—সামনে জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খেলবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুটি ম্যাচ। বাঁহাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি প্রায় এক বছর।
বিসিবি তত দিনে দুটি টুর্নামেন্ট আয়োজনও করেছে। একটিতেও বিবেচনায় ছিলেন না আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা সাদমান।
সাদমান ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলেন না। টেস্ট ক্রিকেট নিয়েই সাদমানের সব ভাবনা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন ক্রিকেটারের টিকে থাকা বেশ কঠিন। টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশ তেমন খেলে না।
ভালো অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধা শুধু জাতীয় দলের খেলা থাকলেই পাওয়া যায়। জাতীয় দলের বাইরে থাকলে ন্যূনতম অনুশীলনের সুবিধা পাওয়া খুব কঠিন।
তবু প্রস্তুতি তো নিতে হবে। তাই ফতুল্লা স্টেডিয়ামের পুরোনো উইকেটে একা একা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রস্তুতি নেন সাদমান। একটানা লোডশেডিংয়ে নাকি উইকেটে পানি দেওয়া যাচ্ছিল না।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তখন চলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রস্তুতি। করোনার বিধিনিষেধে তখন চাইলেই দলের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা মিরপুরে আসতে পারতেন না। আর এসেই–বা কী হবে! কে বল করবে সাদমানকে? তাই ফতুল্লার শুষ্ক উইকেটের অনুশীলনই ভরসা।
এই প্রস্তুতি নিয়েই গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলেন সাদমান। খুব যে খারাপ করেছেন, তা কিন্তু নয়। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হন। এর সঙ্গে যোগ হয় কুঁচকির চোট। সব মিলিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে আর খেলা হলো না সাদমানের।
করোনার বিরতি ও চোটের কারণে এক বছর অপেক্ষার পর সাদমান খেলার জন্য পেলেন শুধু একটি টেস্ট।
মার্চে জাতীয় ক্রিকেট লিগ শুরু হবে হবে করছিল। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয়, তা–ই হলো এই বাঁহাতির সঙ্গে। জাতীয় লিগের ঠিক আগেই করোনা পজিটিভ হন সাদমান। আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হতে না হতেই আবার শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে যান সাদমান।
কিন্তু পাল্লেকেলের প্রথম টেস্টে সাদমানকে আর মূল একাদশে রাখেনি বাংলাদেশ দল, খেলানো হয় সাইফ হাসানকে। টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য যে পরিমাণ ক্রিকেট খেলে আসা উচিত, সেটা নাকি সাদমান খেলেননি। সাদমানকে না রাখার এই কারণই দেখিয়েছিলেন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
পরিস্থিতি বদলায়নি শ্রীলঙ্কা সফরের পরও। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবার হয়েছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ দলে সাদমান ছিলেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ পাওয়ার কথা না সাদমানের।
প্রায় এক মাসের টুর্নামেন্টে সাদমানের কপালে জুটেছে মাত্র দুই ম্যাচ। এরপর আবার ডাক পড়ে টেস্ট ক্রিকেটের। তামিম ইকবালের চোটে কপালগুণে সুযোগও পেয়ে যান হারারে টেস্টে।
ছয় মাসে মাত্র তিন ম্যাচ খেলা সাদমান এটুকু ভাগ্যের সাহায্য পেতেই পারেন। সেটা কাজেও লাগালেন। প্রথম ইনিংসে ২৩ রান করে আউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমানের ব্যাট থেকে আসে তাঁর অভিষেক সেঞ্চুরি। ১৯৬ বল খেলে অপরাজিত ১১৫ রান নামের পাশে নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
কাল বিকেলে ব্যাট করতে নেমে আজ সকালে ৫ চারে ১০১ বলে করেন ফিফটি। এরপর সেঞ্চুরির জন্য আরও সময় নিয়েছেন। বল খেলেছেন ১৮০টি, পরের ফিফটি করে সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে বাউন্ডারি মেরেছেন মাত্র ৩টি। আজ বাংলাদেশ ইনিংসের ৬২তম ওভারে মিল্টন শুম্বার বল মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দৌড়ে ২ রান নিতেই সাদমানের সব অপেক্ষার অবসান ঘটে।
সেঞ্চুরির পর তাঁর তৃপ্ত চেহারার নীরব উদ্যাপনই বলে দেয়, সাদমানের এত দিনের অপেক্ষাটা ছিল এই মুহূর্তের জন্যই।
দিনের খেলা শেষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি–পরবর্তী অনুভূতিও সাদমান প্রকাশ করেছেন মেপে। বিসিবির পাঠানো ভিডিও বার্তায় তিনি বলছিলেন, ‘আজ বল ধরে ধরে খেলার পরিকল্পনা ছিল। আজ সেঞ্চুরি পেয়েছি। ভালো লাগছে নিজের অর্জনে। দলের জন্য ভালো লাগছে যেহেতু আমরা বড় রান করতে পেরেছি। এই সেঞ্চুরিটা আমার সতীর্থ, কোচদের জন্য পেয়েছি। সেঞ্চুরিটা আমার আব্বু-আম্মুকে উৎসর্গ করতে চাচ্ছি।’
নিজের সেঞ্চুরিতে দলও যে হারারে টেস্টে ভালো অবস্থানে আছে, সে জন্য সন্তুষ্ট সাদমান, ‘যেমন রান আমরা করেছি, সেই হিসেবে ভালো জায়গাতেই আছি। ওদের তিন উইকেট পড়েছে এর মধ্যেই। আশা করি, কাল ভালো বোলিং করলে ম্যাচ বের করতে পারব।’