‘সাহসী’ আফিফ যদি শেষ করে আসতে পারতেন!
উইকেটের বাউন্স ধারাবাহিক নয়। কখনো গুড লেংথ থেকে বল লাফিয়ে উঠছে। কখনোবা যাচ্ছে নিচু হয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্টের পঞ্চম দিনের উইকেটে সাধারণত এমন আচরণ দেখা যায়। যেখানে প্রতিটি ফাটলে লেখা থাকে অনিশ্চয়তা।
আজ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামের এমন উইকেটেই নতুন বলে কাগিসো রাবাদা ও লুঙ্গি এনগিডিকে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই নড়বড়ে ছিলেন ব্যাটসম্যানরা—এই বুঝি উইকেট গেল—এটাই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের সুর। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান দুজনই আউট হন উইকেটের ৪ মিটার দূরত্ব থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে।
বিশেষ করে এনগিডির বলে আউট হয়ে চোখেমুখে অবিশ্বাস নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তামিম। বাড়তি বাউন্স মিশিয়ে রাবাদা ফেরান লিটন দাস ও ইয়াসির আলীকেও। মুশফিকুর রহিম আবার আউট হয়েছেন বাড়তি বাউন্সের প্রত্যাশায়। ওয়েইন পারনেলের আগের বলটি যে জায়গা থেকে লাফিয়ে গেছে, সেখান থেকেই বল নিচু হয়ে আঘাত করেছে মুশফিকের প্যাডে। বাউন্সের এত বিশাল তারতম্য অবাক করেছে মুশফিককেও।
এমন ‘খুনে’ উইকেটে একপর্যায়ে প্রতি–আক্রমণে যেতে পারত বাংলাদেশ দল। কিন্তু সাকিব আল হাসান ছাড়া কারও শরীরী ভাষায়ই সে রকম ছিল না। বাউন্সারের জবাবে কেউই হুক শট খেলার সাহস করেননি। শট খেলতে গিয়ে যেন ভয়ে মরছিলেন বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। কখন শেষ হবে রাবাদা-এনগিদির স্পেল, ব্যাটসম্যানরা যেন সে অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু রাবাদা যে তাঁর প্রথম স্পেলেই টানা ৭ ওভার বল করেছেন! তাতে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৩৪!
সেই রাবাদাকে অবশ্য বোলিং থেকে সরিয়েছেন আফিফ হোসেন। ক্রিজে এসেই লেগ গ্লান্স ও কাট শটে দুটি চার মেরে সেই পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি। দীর্ঘ স্পেলের সেটিই ছিল রাবাদার শেষ ওভার। এরপর ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে নিজের ৭২ রানের ইনিংসে আরও ৭টি চার মারেন আফিফ।
আবার যখন রাবাদা বোলিংয়ে এলেন, বাংলাদেশ ইনিংসের ৪১তম ওভার চলছিল। ক্রিজে ছিলেন সেই আফিফই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশত করে বাংলাদেশ দলকে একাই টানছিলেন এই বাঁহাতি। ৩৪ রানে ৫ উইকেটের পর বাংলাদেশ ইনিংস এতটা দীর্ঘ হবে, সেটি খুব কম মানুষই অনুমান করেছিলেন। একটু প্রতি–আক্রমণ, একটু সাহস—বাংলাদেশকে খাদের কিনার থেকে তুলতে এটুকুই যথেষ্ট ছিল। বুক চিতিয়ে ও মাথা খাটিয়ে খেলে আফিফ সে চাহিদাই পূরণ করেন।
৭২ রান করে আফিফ আউটও হন সেই রাবাদার বলে। ৪৬তম ওভারে নিজের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে রাবাদা বাউন্সার মারলেন আফিফের শরীর তাক করে। আফিফও বরাবরের মতো আক্রমণাত্মক শট খেলারই সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু এ যাত্রায় জয়টা হলো রাবাদারই। আফিফ পুল করে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাটে–বলে সংযোগটা জুতসই না হওয়ায় বল গেল শর্ট মিড উইকেটে।
১০৭ বলে ৯টি চার মেরে ৭২ রান করে আউট হলেও আফিফের শরীরী ভাষায় ছিল পুরো ৫০ ওভার না খেলতে পারার হতাশা। তবে একবার ইনিংসের শুরুর গল্পটা ভাবুন! তাহলে গল্পটা হতাশার মনে না হয়ে আক্ষেপেরই হওয়ার কথা। টপ অর্ডারের কেউ যদি দ্রুত রান তুলতেন! পাওয়ারপ্লেতে কেউ যদি একটু চালিয়ে খেলতেন! তাহলে ৫০ ওভার শেষে গল্পটা হয়তো ভিন্ন হলেও হতে পারত।