সেই অস্ট্রেলিয়া, এই অস্ট্রেলিয়া

ভবিষ্যৎ দেখতে পান? তার প্রয়োজন নেই। শুধু কল্পনার জগৎটাকে খুলে দিন। একটা দৃশ্য ভাবুন। ধর্মশালা টেস্ট জিতে সিরিজের শেষ সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। কতজন কত প্রশ্ন করছেন। হঠাৎ করেই একজন জিজ্ঞেস করে বসলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনকক্ষের আসনে বসে কী অনুভব করছেন?

প্রশ্নটি শুনে স্মিথের নিশ্চয়ই মনে পড়ে যাবে গত নভেম্বরের একটি সংবাদ সম্মেলনের কথা। হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারার পর স্মিথ বলেছিলেন, ‘এখানে বসতে লজ্জা বোধ করছি আমি।’ এর তিন মাস আগে শ্রীলঙ্কা সফরে তিন টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মুখ কালো করে স্মিথ অসহায়ের মতো বলেছিলেন, ‘আমরা যা করছি, তা কাজে আসছে না।’

অস্ট্রেলিয়া দল ভারতে আসার আগেই রব উঠে গেল, শ্রীলঙ্কায় হোয়াইটওয়াশ হওয়া দল ভারতে আর কীই-বা করবে! সিরিজ শুরুর আগেই ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করে দিয়েছিলেন, ফল হতে যাচ্ছে ৪-০। ২০০১ সালে ভারতে দুই দেশের টেস্ট সিরিজের নায়ক স্পিনার হরভজন সিংও সুর মিলিয়েছিলেন। অথচ পুনেতে প্রথম টেস্টে তিন দিনেই হেরে গেল ভারত। বন্দুক থেকে বের হওয়া গুলি এবং মুখ থেকে বের হওয়া কথা তো আর ফেরত নেওয়া যায় না! সৌরভ আর হরভজনকে তাই চুপ হয়ে যেতে হলো।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ানরা চুপ করে থাকবে কেন? তাদের সাবেক আর বর্তমান খেলোয়াড়দের মুখে ছুটেছে কথার তুবড়ি। দ্বিতীয় টেস্টে হারলেও রাঁচিতে অসাধারণ খেলে তৃতীয় টেস্ট ড্র করে অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোবার্টে হেরে যাওয়ার পর সতীর্থদের একটি বার্তা দিয়েছিলেন স্মিথ। বলেছিলেন, দলের সবার কাছ থেকে তিনি লড়াইয়ের মানসিকতা চান। রাঁচি ম্যাচে সেই মানসিকতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী ছিল হ্যান্ডসকম্ব আর শন মার্শের ব্যাটে। ম্যাচ বাঁচাতে হ্যান্ডসকম্ব খেলেছেন ২০০ বলের একটি ইনিংস। মার্শের ইনিংসটি ছিল ১৯৭ বলের।

হ্যান্ডসকম্ব ও মার্শের এমন ব্যাটিংয়েই ধর্মশালা টেস্টটি রূপ নিয়েছে অঘোষিত ‘ফাইনালে’। প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সেই রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। আগামীকাল শুরু টেস্টটির আগে অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার জশ হ্যাজলউড জোর গলায় বলতে পারছেন, ‘চাপে আছে ভারত আর কোহলিই।’

ধর্মশালা টেস্ট শেষে স্মিথের সংবাদ সম্মেলনের কল্পদৃশ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল লেখা। সেই দৃশ্যটা থাকুক। তবে এবার ধরে নিন, অস্ট্রেলিয়া হেরে গেছে। তাতে কী! এবার লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের। উপমহাদেশে টানা নয়টি টেস্ট হারার হতাশা নিয়ে ভারত সফরে এসেছিল স্মিথের দল। সেখান থেকে এ পর্যন্ত যা হলো, তাতে সিরিজ হেরে গেলেও অস্ট্রেলিয়ানদের লজ্জা পাওয়ার কোনো কারণ নেই।