সেই ‘মরা’ উইকেটেই ‘মরল’ পাকিস্তান

২৯ রানে ৩ উইকেট পেয়ে স্টার্কই পাকিস্তানের সর্বনাশ করেছেনছবি: এএফপি

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে রীতিমতো ‘দুধভাত’ ছিলেন ফাওয়াদ আলম। একসময়কার অলরাউন্ডার বল করেননি, কোনো ক্যাচ ধরেননি, কোনো রানআউটেও অংশ নেননি। নিষ্প্রাণ এক উইকেটে তাঁকে নামার সুযোগও দেননি পাকিস্তানের অন্য ব্যাটসম্যানরা।

অবশেষে সিরিজের অষ্টম দিনে ব্যাট হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ফাওয়াদ। অব্যবহারে ব্যাটের ধার কমেছে কি না, সেটা বোঝার অবশ্য সময় মেলেনি। নেমেই পড়েছেন মিচেল স্টার্কের তোপের মুখে। করাচির নিষ্প্রাণ উইকেট নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু স্টার্কের ওই বলের জন্য উইকেটের কোনো ভূমিকা থাকা লাগে না। মিসাইলের মতো ছুটল বল। একটুর জন্য ইয়র্কার হয়নি, তার দরকারও পড়েনি। ফাওয়াদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বল লাগল প্যাডে। গোল্ডেন ডাক!

মধ্যদুপুরে আচমকা জমে উঠল করাচি টেস্ট। ফাস্ট বোলিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনী পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ‘মরা’ উইকেটের ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনল অস্ট্রেলিয়া। ১৪৮ রানে অলআউট পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ৪০৮ রানের লিড পেয়েছে সফরকারীরা।

পাকিস্তানকে মানসিকভাবে একদম ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তাই প্রতিপক্ষকে ফলোঅন না করিয়ে আবার ব্যাটসম্যানদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। ডেভিড ওয়ার্নার দ্রুত ফিরে গেলেও উসমান খাজা ও মারনাস লাবুশেন অধিনায়কের দেওয়া দায়িত্ব আনন্দচিত্তে পালন করেছেন। মাত্র ১৭ ওভারে ৮১ রান তুলে দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় দিন শেষে ৪৮৯ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।

এমন উইকেটে গতিময় বোলারের গুরুত্ব বোঝালেন স্টার্ক
ছবি: এএফপি

শেষ উইকেট জুটিতে অর্ধশতক যোগ করে তবে মায়া হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। ৫৫৬ রানে ইনিংসের সমাপ্তি টানে তারা। প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের দুই দিন ধরে রান জমানোর জবাব অস্ট্রেলিয়ান দুই ওপেনারই দিয়েছিলেন। পাকিস্তান করাচিতে সেটা করতে পারেনি। টেস্ট অভিষেকে প্রথমবার ফিল্ডিংয়ে নেমেই দাগ রাখলেন মিচেল সোয়েপসন। মধ্যাহ্নবিরতির আগে তাঁর সরাসরি থ্রোতে রান আউট আবদুল্লাহ শফিক (১৩)।

বল হাতে অবশ্য সর্বোচ্চ পুরস্কারটাই পেয়েছেন এই লেগ স্পিনার। এক যুগ পর অস্ট্রেলিয়া দলে কোনো বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার হিসেবে অভিষেক হয়েছে তাঁর। আর তাঁর প্রথম উইকেটই কিনা বাবর আজম। অবশ্য বাবরকে যেভাবে আউট করেছেন, তাতে বোলিংয়ের দক্ষতার চেয়েও ব্যাটসম্যানের মরিয়া ভাবই ভূমিকা রেখেছে। তাঁকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে আউট হয়েছেন বাবর।

এর আগেই পাকিস্তানের সর্বনাশ হয়ে গেছে। বাবর (৩৬) আউট হয়েছেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে, দলকে ১১৮ রানে রেখে। ১০০ পেরোনোর আগেই তো ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছে পাকিস্তান। আর এতে ভূমিকা রেখেছে অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের অভিজ্ঞতা আর করাচির উইকেট।

দলের সর্বনাশ ঠেকাতে পারেননি বাবর
ছবি: এএফপি

প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশনেই রিভার্স সুইয়ের আভাস মিলেছে। কিন্তু পাকিস্তানের পেসারদের এর ফায়দা দুই দিনে তুলতে পারেননি। আজ প্রথম দেড় ঘণ্টায় অস্ট্রেলিয়ান দুই পেসার দারুণ বল করলেও দাগ কাটতে পারছিলেন না। নাথান লায়নকে মারতে গিয়ে ইমাম-উল-হকের (২০) বিদায় অস্ট্রেলিয়ার আশা জাগাল।

বাদবাকিটা স্টার্ক ও কামিন্সের দক্ষতা এবং এ দুজনের রিভার্স সুইংকে কাজে লাগানোর মতো গতিই সেরে নিয়েছেন।

প্রথমে রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করতে আসা স্টার্ককে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন আজহার আলী। পরের বলেই ফাওয়াদকে শূন্য হাতে ফেরালেন স্টার্ক। হ্যাটট্রিক আটকেছেন রিজওয়ান। অধিনায়ককে নিয়ে পানি পানের বিরতিতেও গিয়েছিলেন।

কিন্তু তৃষ্ণা মিটিয়েই বিদায় নিলেন রিজওয়ান। কামিন্সের গতি ও সুইংয়ের কাছে পরাস্ত রিজওয়ান ক্যাচ দিলেন উইকেটকিপারের কাছে। অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ পরের ওভারেই এলবিডব্লু হলেন প্রতিপক্ষের অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিনের বলে। চায়ের স্বাদ পাওয়ার আগেই বিদায় সাজিদ খানের।

মাত্র ১ উইকেট পেলেও দারুণ বল করেছেন কামিন্স
ছবি: এএফপি

রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করছিলেন স্টার্ক। বলটা উইকেটে পড়ে অ্যাঙ্গেলে না ঢুকে করল রিভার্স সুইং। তাতে পরাস্ত হয়েছেন সাজিদ। আম্পায়ার আবেদনে সাড়া দেননি। কিন্তু উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারির জোরাজুরিতে রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আম্পায়ার। ৭ উইকেট হারিয়ে চা-বিরতিতে যায় পাকিস্তান।

বিরতি থেকে ফিরেই আরেকটি রানআউট। নিজের শূন্য রানে রানআউট হওয়ার দুর্ভাগ্যের স্বাদ হাসান আলীকেও দিলেন মারনাস লাবুশেন। এরপর তো বাবরের সেই পাগলাটে শট।

শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নোমান আলী এরপর দর্শকদের কিছুটা আনন্দ দিয়েছেন। কামিন্সের এক ওভারে ছক্কা ও চার মেরে হতবুদ্ধ দর্শকদের উল্লাস করার সুযোগ দিয়েছেন আফ্রিদি। সোয়েপসনের বলে স্মিথ নোমানের একটি ক্যাচ মিস করেছেন। আর তাতেই দশম উইকেট জুটি থেকে সবচেয়ে বেশি রান (৩০) পাওয়ার মতো কিছু দেখাতে পেরেছে পাকিস্তান।