সৌরভের এক সিদ্ধান্ত যেভাবে বদলে দিয়েছিল ধোনিকে

বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৪ সালে অভিষেক হয়েছিল ধোনির। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৪ সালে অভিষেক হয়েছিল ধোনির। ফাইল ছবি
অভিষেকের পর ৪ ম্যাচে ধোনি করেছিলেন মোটে ২২ রান। চাপের মুখে থাকা ধোনিকে নতুন আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি জুগিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। আবার যখন ধোনি ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্নের মুখে, সৌরভ ফিরিয়ে আনলেন সেই সময়ের স্মৃতি


বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির। ২০০৪ সালের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা হয়ে আছে ধোনির কাছে। অভিষেকে প্রথম বলে শূন্য রানে রান আউট হয়েছিলেন। পরের ম্যাচে ১২ করলেন, ভারত হেরে গেল। সে সময় বাংলাদেশের কাছে ভারতের পরাজয় ছিল অকল্পনীয়। সিরিজের শেষ ম্যাচেও তেমন কিছু করার সুযোগ পাননি। পাবেন কী করে, ধোনি তখন ব্যাটই করতেন সাতে নয়তো আটে।

ডিসেম্বরের সেই সিরিজের পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে খেললেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে। প্রথম ম্যাচে করলেন ৩ রান। প্রথম ৪ ম্যাচে ২২ করা ধোনিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। রাঁচির এই তরুণকে যতটা প্রতিভাবান ভাবা হচ্ছে, আসলেই কি তিনি তা? পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটাতেও ব্যর্থ হলে, কে জানে, হয়তো ধোনির ক্যারিয়ারটাই অন্য পথে চলে যেত। কিন্তু সে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ১২৩ বলে ১৫টি চার ও ৪ ছক্কায় ১৪৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে সব সমালোচনা আর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেন ধোনি। আর এর পেছনে ছিল সৌরভ গাঙ্গুলির এক মাস্টারস্ট্রোক! তখনকার অধিনায়ক সৌরভ ধোনিকে হুট করে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন তিনে!

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১-এ সিরিজ হেরে যাওয়ার পর সম্প্রতি ধোনিকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনা হচ্ছে তাঁর শ্লথ ব্যাটিংয়ের কারণে। বলাবলি হচ্ছে, ধোনি এখন আর চলে না। ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধোনিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানে নেই। এমন সময়ে ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছেন সৌরভ। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ধোনি আসল এক চ্যাম্পিয়ন।

ধোনির ক্যারিয়ারের শুরুর সময়কার কথা স্মরণ করে সৌরভ বলেছেন, ‌‘২০০৪ সালে ধোনি যখন প্রথম দলে এল, প্রথম দুই ম্যাচে ও খেলেছিল সাতে। এরপর আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে খেললাম। যখন দল ঘোষণা করা হলো, তখনো ধোনিকে সাতেই বিবেচনা করা হচ্ছিল। হোটেলে নিজের রুমে বসে খবর দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কীভাবে ওকে আরও ভালো সুযোগ করে দেওয়া যায় যেন ও নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। আমি জানতাম ওর মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। পরের সকালে টস জেতার পর আমার মনে হলো ওকে তিনে ব্যাট করতে পাঠাই। তারপর কী হয় দেখা যাবে।’

ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়নস নামের এক অনুষ্ঠানে সে সময়ের স্মৃতির ডালা মেলে দিয়েছিলেন সৌরভ। তিনি নিজে তখন ব্যাট করতেন তিনে। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী এক তরুণের জন্য নিজের জায়গা ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেননি ভারতের সেরা অধিনায়কদের একজন। সৌরভের এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি চমকে গিয়েছিলেন ধোনি নিজেই।

সৌরভ বলেছেন, ম্যাচ শুরুর সময় দেখি ও শর্টস পরে আছে। কারণ ও জানত ওর নামতে দেরি আছে, সাতে নামবে। আমি ওকে গিয়ে বললাম, ‘এম এস তোমাকে তিনে ব্যাট করতে হবে।’ ও তখন বলল, ‘তাহলে আপনি কী করবেন?’ আমি বললাম, ‘আমি চারে নেমে যাব, তুমি তিনে খেলো।’

সৌরভের সেই এক সিদ্ধান্তে ধোনি নিজেকে পুরো বদলে ফেলেন। টি-টোয়েন্টি যুগের ঢের আগে খেলেন বিস্ফোরক এক ইনিংস। সেটিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন।