হাজার ছোঁয়ার দিনে পাকিস্তানকে পথ দেখালেন রিজওয়ানই
ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দুবাইয়ের সেমিফাইনালটা খেলতে পারবেন কি না, সন্দেহ ছিল। পাকিস্তানি সমর্থকদের উৎকণ্ঠাও আকাশ ছুঁয়েছিল। কিন্তু সব উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সংশয় পেছনে ফেলে মাঠে নামলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। নিজের অসুস্থতা ভুলিয়ে দিয়ে কী অসাধারণ ব্যাটিংটাই-না করলেন!
প্রথম দিকে বাবর আজমের ছায়া হয়ে ছিলেন। মনে হচ্ছিল অসুস্থতাটা সমস্যা করছে। শূন্য রানে জীবন পেয়েছেন, প্রাথমিক সে ধাক্কা সামলে নিতে সময় নেননি অবশ্য। বাবর আজমের সঙ্গে সমানতালেই খেলে গেলেন। পরে নেতৃত্বই দিলেন ব্যাটিংয়ের। ওপেনিং জুটি হলো ৭১ রানের। পাওয়ারপ্লেতে এল ৪৭—এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ।
দশম ওভারের শেষ বলে বাবর যখন ফিরলেন, তখন থেকেই পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের দায়িত্বটা পুরো নিজের কাঁধেই তুলে নিলেন রিজওয়ান। খেললেন দায়িত্বশীল এক ইনিংস। অ্যাডাম জাম্পাকে ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে এক স্লগ সুইপে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে এক অনন্য রেকর্ড নিজের করে নিলেন। রিজওয়ানই প্রথম ক্রিকেটার, যিনি টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এক পঞ্জিকা বর্ষে এক হাজার রান করলেন। কেবল এটিই নয়, ইনিংসে আরও তিন ছক্কা মেরেছেন। তাতে এক পঞ্জিকা বর্ষে ৩৭টি ছক্কা মারারও রেকর্ড ছুঁয়েছেন। এক বছরে আর একজনই এত ছক্কা মেরেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস।
রিজওয়ানের আজকের ইনিংসটি ৫২ বলে ৬৭ রানের। মেরেছেন ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা। স্ট্রাইকরেট ১২৮.৮৪। প্রথমে বাবরের সঙ্গে ৭১ রানের ওপেনিং জুটি, এরপর তিনে নামা ফখর জামানের সঙ্গে ৪৬ বলে ৭২ রানের জুটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের ১৭৬ রানের সংগ্রহের বড় নিয়ামক যে তিনি, এটা না বললেও চলছে। তাঁর ছায়ায় কিছুক্ষণ গুটিয়ে থাকলেও রিজওয়ান ফেরার পর খোলস থেকে বের হয়েছেন ফখর।
ম্যাচের আগে পাকিস্তানের অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং পরামর্শক ম্যাথু হেইডেনের কাছ থেকে বীরত্বের সনদ পেয়েছিলেন রিজওয়ান, ‘গতকাল রিজওয়ানকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সে আজ ম্যাচ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট। সে সত্যিই দারুণ বীরত্ব দেখিয়ে ম্যাচটা খেলছে।’
রিজওয়ানের বীরত্ব আজ অস্ট্রেলীয় দলও দেখেছে। মিচেল স্টার্কের এক বাউন্সার আঘাত করল তাঁর হেলমেটের গ্রিলে। তখনো ফিফটি পেরোননি রিজওয়ান। হেলমেট খোলার পর দেখা গেল গালের এক জায়গা কালো হয়ে ফুলে গেছে। ফিজিওর শুশ্রূষা সত্ত্বেও ব্যাটিংটা করে যেতে পারবেন নাকি, সেটি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সন্দেহকে ফুৎকারে উড়িয়ে তিনি খেললেন। হেইডেনের কথামতো, বীরের বেশেই।
জশ হ্যাজলউডের গতির বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে ৪১ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি ফেরেন মিচেল স্টার্কের বলেই রানের গতি বাড়াতে গিয়ে।
টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটটা যে বীরদেরই খেলা, রিজওয়ান আজ দুবাইয়ে সেটি আবারও প্রমাণ করলেন!