১০০ মাইল গতিতে বল করতে শরীরের সঙ্গে ট্রাক বেঁধেও টেনেছেন শোয়েব

পাকিস্তানের সাবেক পেসার শোয়েব আখতারছবি: টুইটার

কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলটির পরই নড়েচড়ে বসেছিলেন দর্শকেরা। স্ট্রাইকে ইংলিশ ওপেনার নিক নাইট, তাঁকে করা শোয়েব আখতারের প্রথম বলটির গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৩.৩ কিলোমিটার।

পরের বলটি ১৫৮.৪ কিলোমিটার, তৃতীয় বলে আরেকটু বেড়ে ১৫৮.৫ কিলোমিটার। চতুর্থ বলে গতি একটু কমলেও (১৫৭.৪ কিলোমিটার) গ্যালারি উত্তেজিত। টিভির সামনে দর্শকেরাও ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন অভূতপূর্ব কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে!

সেটা দেখা গেল ওভারের শেষ বলে। বল না বলে ‘গোলা’ বলাই ভালো। গতি উঠল ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার, অর্থাৎ, মাইলের হিসেবে ১০০.২—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারি! শুধু কী তা–ই, প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতিতে বল করার রেকর্ডও গড়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার।

২০০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৬১.১ কিলোমিটার গতি তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লি। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একই গতি তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ারই আরেক সাবেক ফাস্ট বোলার শন টেইট। কিন্তু শোয়েব আখতার সেদিন যে ঝড় তুলেছিলেন, তা আর কেউ ছাপিয়ে যেতে পারেননি।

ক্রিকেট ছাড়ার পর ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খুলেছেন শোয়েব আখতার
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

শোয়েব কীভাবে অত জোরে বল করলেন—আজও এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা হয়, গবেষণাও কি হয় না! এত দিন পর শোয়েব আখতার নিজেই রহস্য ভাঙলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপে গতির ঝড় তোলার আগে বিশেষ প্রস্তুতি ছিল তাঁর। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতি টপকে যাওয়ার ভাবনাটা ছিল শোয়েবের মাথায়। সে জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নিতে হতো।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সে প্রস্তুতির কথাই বলেছেন পাকিস্তানের হয়ে ৪৬ টেস্টে ১৭৮ উইকেট এবং ১৬৩ ওয়ানডেতে ২৪৭ উইকেট নেওয়া এই বোলার। তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ দিকে টি-টোয়েন্টির উদ্ভব ঘটায় এবং চোটের কারণে ১৫ ম্যাচে মাত্র ১৯ উইকেট নিতে পেরেছেন শোয়েব।

শোয়েব বলেছেন, ‘আমি ধারাবাহিকভাবে ১৫৭ ও ১৫৮ কিলোমিটার গতিতে বল করতাম। কিন্তু যে কারণেই হোক ১৬০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারছিলাম না। এই মাপকাঠিটা ভাঙতে অনুশীলনের পরিকল্পনা করি।’

পরের গল্পটা শোয়েব বলেছেন এভাবে, ‘শুরুতে শরীরের সঙ্গে টায়ার বেঁধে টানার অনুশীলন করি, কিন্তু তুলনামূলক হালকা হওয়ায় মাংশপেশির গঠনে টায়ার কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। পরে ইসলামাবাদে রাতে শরীরের সঙ্গে কার বেঁধে টানার অনুশীলন করি। কিন্তু অনুশীলনে শরীর গঠন করতে যা চাচ্ছিলাম, কারও সে তুলনায় হালকা লাগছিল।’

শোয়েবের বোলিং অ্যাকশন ও রান আপ তখন জনপ্রিয় হয়েছিল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পরে শোয়েব বেশ বড় একটা পদক্ষেপ নেন। টায়ার ও কারে কাজ না হওয়ায় ট্রাকের সঙ্গে নিজের শরীর বেঁধে টানার অনুশীলন করেন ৪৬ বছর বয়সী সাবেক এই ক্রিকেটার। এতে কাজ হয়। এভাবে অনুশীলন চালিয়ে একবার ৫ মাইল পর্যন্তও ট্রাক টেনেছেন শোয়েব। সে সময় জিমনেসিয়ামেও আলাদা করে মনোযোগ দিয়েছিলেন, ‘জিমে মাংশপেশি ভালোভাবে গড়তে ওজন অনুশীলন দ্বিগুণ করি। এতে শরীরও সাড়া দিতে শুরু করে।’

নেট অনুশীলনের ধরনও পাল্টে ফেলেছিলেন শোয়েব, ‘প্রচলিত ২২ গজের পিচ ছেড়ে ২৬ গজের পিচে বল করি। লক্ষ্য ছিল বড় পিচে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করব। পুরোনো ও ছেঁড়াফাটা বল নিয়েও ২৬ গজের পিচে বল করেছি। এতে ধীরে ধীরে গতি বেড়েছে।’

২০০৩ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সেস পর্বেও উঠতে পারেনি পাকিস্তান। সে বিশ্বকাপেই সর্বোচ্চ গতির বল করার লক্ষ্য ছিল শোয়েবের। স্মৃতিচারণা করলেন শোয়েব, ‘২০০৩ বিশ্বকাপে সতীর্থরা আমাকে বলেছিল, বেশ জোরে বল করছি। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা আঘাত পেতে পারে। সতীর্থদের বলেছিলাম, আমি সর্বোচ্চ গতির বলের রেকর্ডটা ভাঙব, যেটা ওই বিশ্বকাপেই পরে করতে পেরেছি।’