১৩ বল, ৫ রান, ৫ উইকেট—বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়ের গল্প

ওমাইমাকে আউট করেই বাংলাদেশের মেয়েদের ম্যাচে ফিরে আসার শুরুছবি: এএফপি

অন্তত একটা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নিজেদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে যাওয়া বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য এই ম্যাচটা রেকর্ডের হিসাবেও স্বপ্নপূরণের সবচেয়ে ‘সহজ’ উপলক্ষ ছিল।

একদিকে পাকিস্তানের মেয়েরা নিজেদের আগের ৮ ম্যাচের ৭টিতেই হেরেছে, অন্যদিকে নিজেদের সর্বশেষ ৭ ম্যাচে ৫ জয় পাওয়া (দুটি হার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে) বাংলাদেশের পাকিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ডটাও বেশ ভালো—সর্বশেষ ৪ ম্যাচে ৩ জয়।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়ও এসেছে পাকিস্তানের মেয়েদের বিপক্ষেই, গত বছর হারারেতে এই ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। বাছাই থেকে মূল পর্বে এসেও ফলটা একই রইল। পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে হ্যামিল্টনে আজ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয়ের ইতিহাস গড়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা

তবে সে পথে অবিশ্বাস্য নাটকীয়তারই জন্ম দিতে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। ফারজানা হকের ৭১ আর উদ্বোধনী ব্যাটার শারমিন আক্তার (৪৪) ও অধিনায়ক নিগার সুলতানার (৪৬) দুটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার পর বাংলাদেশের হয়তো সহজ জয়েরই স্বপ্ন ছিল।

আরও পড়ুন

কিন্তু ২৩৫ রানের লক্ষ্যে এক সিদরা আমিনের ব্যাটেই পাকিস্তান উল্টো জয়ের স্বপ্ন দেখছিল। পাকিস্তানের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ! উদ্বোধনী জুটিতেই নাহিদা খাতুনের (৪৩) সঙ্গে মিলে সিদরা আমিন এনে দিলেন ৯১ রান।

২৪তম ওভারে রুমানার বলে বোল্ড হয়ে নাহিদা ফিরলেও অধিনায়ক বিসমাহ মারুফের (৩১ রান) সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে আবার ৬৪ রানের জুটি সিদরার। এর মধ্যে অর্ধশতকও হয়ে গেল তাঁর, ৮৫ বলে ৫ চারে। ৩৮তম ওভারে পাকিস্তান ১৫০ রানও পেরিয়ে গেল। রান আর বলের ব্যবধান কমছে, পাল্লা দিয়ে তখন বাংলাদেশের মেয়েদের জয়ের সম্ভাবনাও।

সিদরা যতক্ষণ ছিলেন, বাংলাদেশের জয় নিয়ে শঙ্কা ছিল
ছবি: এএফপি

৩৮তম ওভারেই বিসমাহ ফিরলেন। কিন্তু ওমাইমা সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে আবার জুটি গড়ার চেষ্টা সিদরার। ৪২তম ওভারের প্রথম বলে পাকিস্তান ১৮০ পেরিয়ে গেল, তখনো ৮ উইকেট হাতে। বাংলাদেশের জয় বুঝি আর পাওয়া হলো না, এমনই যখন মনে হচ্ছে, ওই ওভারের শেষ বলে আঘাত! ফাহিমার বলে দারুণ ক্যাচে ওমাইমাকে (১০) ফেরালেন ফারজানা। কে জানত, সেখান থেকেই অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ!

আরও পড়ুন

পরের ওভারের তৃতীয় বলে রুমানার বলে ক্যাচ দিলেন নিদা দার। তার পরের ওভারে দ্বিতীয় ও তৃতীয়—পরপর দুই বলে দুটি এলবিডব্লুতে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাই জাগিয়ে তুললেন ফাহিমা! নিদা দারের মতো এই দুই ব্যাটার আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানা—তিনজনই ফিরলেন প্রথম বলে ০ রানে। তা হ্যাটট্রিক হয়নি, তবে ওভারের শেষ বলে আবার আঘাত বাংলাদেশের। এবার রানআউট সিদরা। তবে ততক্ষণে ৯৬ রানে ব্যাট করতে থাকা সিদ্রা আমিন নন, নতুন ব্যাটসম্যান সিদরা নাওয়াজ ফিরলেন রানআউট হয়ে।

বাংলাদেশের ফিরে আসায় মূল ভূমিকা ফাহিমা খাতুনের (ডান থেকে তৃতীয়)
ছবি: এএফপি

তা যিনিই ফিরুন, বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনের গল্পে জয়ের স্বপ্ন আবার চাঙা। ১৩ বল, ৫ রান, ৫ উইকেট—ফাহিমারা কী অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এলেন ম্যাচে!

তবু এক সিদরা আমিন ছিলেন বলেই একটু অস্বস্তি ছিল বাংলাদেশের। ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলে রুমানাকে কাভারে ঠেলে ১ রান নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পেলেন। ১৩৬ বলে তাঁর শতকটি মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কোনো ব্যাটারেরই প্রথম! অষ্টম উইকেটে ডায়ানা বেগকে (১২) নিয়ে ২১ রানের জুটিতে আবার পাকিস্তানের দিকে ম্যাচটা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সিদরা। কিন্তু আবার ৭ বলের মধ্যে পাকিস্তানের স্বপ্ন শেষ!

৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে দলকে ২০৯ রানে রেখে ফিরলেন ডায়ানা, তার ছয় বল পর রানআউট হয়ে গেলেন সিদরা! ১৪০ বলে ৮ চারে সাজানো তাঁর ১০৪ রানের ইনিংস শেষ হতেই পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্ন শেষ। তখনো যে জয় থেকে ২০ রান দূরে পাকিস্তান, হাতে আর ১৩ বল, ১টি উইকেটই সম্বল। এরপর শুধুই আনুষ্ঠানিকতা! তাতে পাকিস্তান অলআউট হলো না, তবে ২২৫ রানের বেশি করতেও পারেনি।