১৬ বছরের এই পাকিস্তানির সঙ্গে ৩ বাংলাদেশিও
>ব্রিসবেন টেস্টে আজ পাকিস্তানের হয়ে ১৬ বছর ২৭৯ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছে পেসার নাসিম শাহর। কিন্তু এই নাসিম টেস্টে অভিষিক্ত হওয়া সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার নন। টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ শীর্ষ দশ অভিষিক্ত ক্রিকেটারদের সম্বন্ধে আসুন জেনে নিই

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন ‘আঠারো বছর বয়সেই...বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ সে হিসেবে ১৬ বছর বয়স আরেকটু কাঁচা, দুঃসাহসগুলোও থাকে আরও আকাশচুম্বী। নাসিম শাহ এমন এক দুঃসাহসী স্বপ্নই ছুঁয়ে দেখার সামনে দাঁড়িয়ে। আজ ব্রিসবেনের গ্যাবায় সিরিজের প্রথম টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান। এ ম্যাচে পাকিস্তানের জার্সিতে অভিষেক ঘটেছে ১৬ বছর বয়সী পেসার নাসিম শাহর। পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলী গতকাল তা নিশ্চিত করার পর থেকেই আলোচনা চলছে। কেমন করবেন এ ‘বিস্ময়বালক’?
মাত্র ৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন নাসিম। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর অধিনায়ক হওয়ায় নাসিমকে কাছ থেকে দেখেছেন আজহার। গতি ও ভেতরে-বাইরে সুইংয়ের পাশাপাশি এ বয়সে মানসিকভাবেও বেশ পরিপক্ব হয়ে উঠেছেন নাসিম। গত সপ্তাহে মাকে হারানোর পরও দল ছেড়ে দেশে ফিরে যাননি এ পেসার। কাল মাঠে নামার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায়ও কিছু পরিবর্তন আনবেন নাসিম। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেক ঘটবে তাঁর। এ পথে পেছনে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান ক্রেইগকে। ১৭ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল ক্রেইগের।
টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ পেসার হিসেবে অভিষেক ঘটবে নাসিমের। আর সব মিলিয়ে তিনি হবেন অভিষিক্ত নবম সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার। টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্তদের এ তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছেন বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারও। মোহাম্মদ শরীফ, তালহা জুবায়ের ও এনামুল হক জুনিয়র। এই সর্বকনিষ্ঠ শীর্ষ দশ সম্বন্ধে আসুন জেনে নিই...

হাসান রাজা (১৪ বছর ২২৭ দিন):
১৯৯৬ সালে ফয়সালাবাদ টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক ঘটেছিল হাসান রাজার। পাকিস্তানের সাবেক এ ব্যাটসম্যানের বয়স ছিল তখন ১৪ বছর ২২৭ দিন। মাত্র ৭ টেস্টের বেশি টিকে থাকতে পারেননি তিনি। তখন হাসান রাজাই ছিলেন টেস্টে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার। পরে তাঁর সঠিক বয়স নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং মেডিকেল টেস্টও হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের তরফ থেকে রেকর্ডটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে জানা যায়, অভিষেক টেস্টে হাসানের বয়স ছিল ১৫ বছরের আশপাশে। খুব অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিচিত পেলেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারেননি তিনি।
মুশতাক মোহাম্মদ (১৫ বছর ১২৪ দিন):
পাকিস্তান ক্রিকেটে ‘মোহাম্মদ’ পরিবারের অন্যতম বিখ্যাত সন্তান। কারও কারও মতে, মুশতাক মোহাম্মদ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ভাই হানিফ মোহাম্মদেরও চেয়েও ভালো ব্যাটসম্যান ছিলেন। ১৫ বছর ১২৪ দিন বয়সে লাহোর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক ঘটেছিল মুশতাকের। ৫৭ টেস্টে ৩৯ গড়ে ১০ সেঞ্চুরিসহ মোট ৩ হাজার ৬৪৩ রান করেছেন তিনি। পাকিস্তানের ইতিহাসে এক টেস্টে দুবার করে ৫ উইকেট ও সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটি এখনো মুশতাকের দখলে।

মোহাম্মদ শরীফ (১৫ বছর ১২৮ দিন):
বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভাবনাময় পেসার হিসেবে ভাবা হয়েছিল মোহাম্মদ শরীফকে। ২০০১ সালে বুলাওয়ে টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সংস্করণে অভিষেক ঘটে শরীফের। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে অভিষিক্ত ক্রিকেটার। ১০ টেস্টে ১৪ উইকেট নিয়েই থেমে যায় শরীফের টেস্ট ক্যারিয়ার। জাতীয় দল বহু আগে ছাড়লেও ৩৩ বছর বয়সী এ পেসার এখনো খেলে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।
আকিব জাভেদ (১৬ বছর ১৮৯ দিন):
অনেকে মনে করেন, ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের সময়ে জন্ম নেওয়ায় পাকিস্তান দলে সেভাবে থিতু হতে পারেননি আকিব জাভেদ। মাত্র ২২ টেস্ট ও ১৬৩ ওয়ানডে খেলেই থেমে গেছে তাঁর ক্যারিয়ার। ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড এখনো আকিব জাভেদের দখলে। ১৯৮৯ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ বছর ১৮৯ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল তাঁর।
শচীন টেন্ডুলকার (১৬ বছর ২০৫ দিন):
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। ১০০ সেঞ্চুরির মালিক। সর্বকালের সেরা একাদশে ব্যাটিংয়ে বেশির ভাগের ‘অটোমেটিক চয়েস’। ১৯৮৯ সালে করাচি টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬ বছর ২০৫ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল টেন্ডুলকারের। বাকিটা ইতিহাস। ব্যাটিংয়ের বেশির ভাগ রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন ভারতের সাবেক এ ব্যাটসম্যান।
আফতাব বেলুচ (১৬ বছর ২২১ দিন):
‘ফোর হানড্রেড ক্লাব’-এর সদস্য হিসেবে বেশি পরিচিত পাকিস্তানের সাবেক এ ব্যাটসম্যান। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে বেলুচিস্তানের বিপক্ষে চারশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন বেলুচ। দেশের হয়ে ২টি টেস্ট খেলা বেলুচের অভিষেক ১৯৬৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে।

তালহা জুবায়ের (১৬ বছর ২২৩ দিন):
টেস্টে বাংলাদেশের শুরুর দিনগুলোয় সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পেসার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন তালহা জুবায়ের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার এন্ডি রবার্টস আবিষ্কার করেছিলেন তাঁকে। ২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টে ১৬ বছর ২২৩ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল তালহার। চোট আর প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি তিনি। মাত্র ৭ টেস্ট খেলেই ঝরে পড়তে হয় তাঁকে।
নাসিম-উল-গণি (১৬ বছর ২৪৮ দিন):
ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের দিল্লিতে জন্ম নাসিম-উল-গণির। টেস্টে প্রথম ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে সেঞ্চুরির কীর্তি তাঁর দখলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওটাই তাঁর একমাত্র সেঞ্চুরি এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম পাকিস্তানি হিসেবেও সেটি ছিল প্রথম সেঞ্চুরি। ১৯৫৮ সালে ব্রিজটাউন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৬ বছর ২৪৮ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল গণির। তখন টেস্টে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার।

এনামুল হক জুনিয়র (১৬ বছর ৩২০ দিন):
ব্রিসবেনে কাল নাসিম শাহর (১৬ বছর ২৭৮ দিন) অভিষেক ঘটলে এক ধাপ পেছনে চলে যাবেন এনামুল হক জুনিয়র। আপাতত টেস্টে নবম সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এনামুল। টেস্টে শুরুর দিনগুলোয় তাঁর বাঁ হাতি স্পিনের ওপর ভরসা রাখত বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ১৬ বছর ৩২০ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল এনামুলের। দেশের হয়ে ১৫ টেস্ট খেলেছেন তিনি।
খালিদ হাসান (১৬ বছর ৩৫২ দিন):
১৯৫৪ সালে নটিংহাম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ বছর ৩৫২ দিন বয়সে অভিষেক ঘটেছিল খালিদ হাসানের। পাকিস্তানের হয়ে ওই একটি টেস্টই খেলেছেন তিনি। তখন খালিদ হাসানই ছিলেন টেস্টে অভিষিক্ত সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার। মাত্র এক টেস্ট খেলা সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটারও খালিদ হাসান।