২০ জুন: তারিখটি আলাদাভাবেই উদ্‌যাপন করতে পারে ভারত

২০ জুন, সৌরভ–দ্রাবিড়ের অভিষেকের দিনফাইল ছবি

ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০ জুন তারিখটা ক্রিকেটের ‘রেড লেটার ডে’ হিসেবে নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়। জুনের এই তারিখেই যে টেস্ট ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেছিলেন তিন ‘গ্রেট’—সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় ও বিরাট কোহলি। কোহলি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেস্ট অভিষেকের ১১ বছর উদ্‌যাপন করলেও সৌরভ আর রাহুলের অভিষেকের ২৬তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করল ক্রিকেটের পীঠস্থান লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডই। সিকি শতাব্দী আগে লর্ডসের বুকেই যে পথচলার শুরুটা করেছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম দুই কিংবদন্তি, ভারতীয় ক্রিকেটের গতিপথ বদলে দেওয়া দুই তারকা—সৌরভ ও দ্রাবিড়। সৌরভ সেদিন শতরান করে নিজের অভিষেক রাঙিয়েছিলেন। তবে ৯৫ রানে আউট হয়ে শতরান না পাওয়ার দুর্ভাগ্য হয়েছিল দ্রাবিড়ের। তবে ক্রিকেট দুনিয়া সেদিন ঠিকই ইঙ্গিত পেয়ে গিয়েছিল, আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম দুই সেরা তারকা।

কোহলিরও টেস্ট অভিষেক ২০ জুন
ফাইল ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সৌরভের শুরুটা অবশ্য আরও আগে, তবে সেটি টেস্ট ক্রিকেটে নয়, ওয়ানডেতে। ১৯৯২ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ৪ রানে আউট হয়ে সেদিনই সমাপ্তি ঘটেছিল সেই অধ্যায়ের। দল থেকে বাদ পড়ে যান তিনি। ফিরতে লেগে গিয়েছিল পাক্কা চার বছর। কিন্তু সেই ফেরাটাও যে খুব ‘সুস্বাগত’ ছিল, সেটি বলা যাবে না। ভারতীয় ক্রিকেটে তখন ‘আঞ্চলিক কোটা’ নিয়ে খুব আলোচনা। পূর্বাঞ্চলের ‘কোটা’য় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছিল সৌরভের। সে তুলনায় দ্রাবিড়ের ভারত দলে ঢোকাটা অনেক বেশি মসৃণ ছিল। তাঁকে সৌরভের মতো ‘কোটা’র খোঁটা সেদিন সেভাবে শুনতে হয়নি।

লর্ডসে সৌরভ ও দ্রাবিড় সুযোগ পেয়েছিলেন একসঙ্গেই। দুজনেরই ছিল নিজেদের প্রমাণের তাড়া। সৌরভ যাবতীয় সংশয়ের জবাব দিয়েছিলেন ১৩১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। কেবল তা-ই নয়, নিজের অভিষেক টেস্টে শতরান করে থেমে যাননি, ট্রেন্ট ব্রিজে পরের টেস্টেও শতরান করে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নাম খোদাই করে ফেলেন সৌরভ। ১৯৮৪ সালে পরপর তিন টেস্টে শতরান করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। আজহারের অধিনায়কত্বেই সৌরভ পরপর দুই টেস্টে শতরান করে ইতিহাস গড়েছিলেন।

কিংবদন্তি দ্রাবিড় খেলেছেন ১৬৪ টেস্ট
ফাইল ছবি

লর্ডসে সেদিন ইংল্যান্ডের ৩৪৪ রান তাড়া করতে নেমে ৩০১ বলে ২০টি চারে ১৩১ করেছিলেন সৌরভ। রাহুল ফিরেছিলেন ৯৫ রানে। তাঁর ইনিংসটি ছিল ২৬৭ বলের। বাউন্ডারি মেরেছিলেন মাত্র ৪টি। অভিষেক ইনিংসে সৌরভ-দ্রাবিড়, দুজনই নিজেদের ধরনটা সবাইকে জানিয়ে রেখেছিলেন। সৌরভ-রাহুল রূপকথাটাও লেখা হয়ে গিয়েছিল সেদিনই।

ট্রেন্ট ব্রিজে পরের টেস্টে সৌরভ খেলেছিলেন ১৩৬ রানের ইনিংস। দ্রাবিড় ট্রেন্ট ব্রিজেও শতক হাতছাড়া করেছিলেন ৮৪ রানে ফিরে। সেদিন ১৭৭ বল খেলে ১২টি চারে ৮৪ করেছিলেন দ্রাবিড়। সৌরভ ১৩৬ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ২৬৮ বলে। চার মেরেছিলেন ১৭টি, ছক্কা দুটি। সৌরভের এর পরের দুটি ইনিংস যথাক্রমে ৪৮ ও ৬৬ রানের—‘কোটার খেলোয়াড়’কে আর এ ব্যাপার নিয়ে কথা শোনানোর কোনো অবস্থাই ছিল না সমালোচকদের। ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ২০০৮ সালে ১১৩ টেস্ট খেলে। ৭২১২ রান করেছেন ৪২.১৭ গড়ে; শতরান করেছেন ১৬টি, অর্ধশতক ৩৫টি। দ্রাবিড় অবশ্য টেস্ট খেলায় সৌরভের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ১৬৪ টেস্ট খেলে থেমেছেন তিনি। গড়ে তিনি এগিয়ে আরও—৫২.৩১। ৩৬টি শতরান, ৬৩টি পঞ্চাশ, রান ১৩২৮৮—এই পরিসংখ্যান দেখতে দেখতে ১৯৯৬ সালের ২০ জুন লর্ডসে একটা ফ্ল্যাশব্যাক হতেই পারে—সেদিন যাঁরা মাঠে ছিলেন, দুই গ্রেটের জন্মমুহূর্তের সাক্ষী তাঁরা, এমন সৌভাগ্য কয়জনেরই–বা হয়।

রূপকথার জন্ম দিয়েছেন দুজন
ফাইল ছবি

দুই গ্রেটের অভিষেক মঞ্চ লর্ডস আজ একটা টুইট করেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই কিংবদন্তির অভিষেক মুহূর্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের ক্যাপশন—‘বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সেরা সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়ের টেস্ট অভিষেকটা হয়েছিল ১৯৯৬ সালের আজকের দিনে।’

সৌরভ-রাহুল-কোহলির টেস্ট অভিষেকের তারিখ—২০ জুন ভারতীয় ক্রিকেট বিশেষভাবে উদ্‌যাপন করলেই পারে।