২০ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের স্মরণীয় ‘২০’

টেস্ট ক্রিকেটে গত ২০ বছরে বাংলাদেশের জন্য এসেছে স্মরণীয় সব মুহূর্ত।ছবি: রয়টার্স
দেখতে দেখতে ২০ বছর কেটে গেল। টেস্ট ক্রিকেটে সেদিনের শিশু বাংলাদেশ এখন কৈশোরোত্তীর্ণ এক যুবা। গত দুই দশকে ক্রিকেটের কুলীন কূলে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এই সময় ব্যর্থতার পাল্লা ভারি হলেও দারুণ দারুণ অনেক মুহূর্তের সাক্ষীও হয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০০০ থেকে ২০২০ টেস্টে একটি ভালো দল হয়ে ওঠার পথচলায় স্মরণীয় হয়ে থাকা ঘটনাগুলো নিয়েই আমাদের এই আয়োজন...

টেস্ট অভিষেক

আলোচনাটা চলছিল সেই ১৯৯৭ থেকেই। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ করে নেওয়ার পর থেকেই স্বপ্নটা ডালপালা মেলেছিল। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর সেই স্বপ্ন ভালোমতোই দেখা শুরু করে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০০০ সালের ২৬ জুন অবশেষে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। টেস্ট পরিবারের দশম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে গ্রহণ করে নেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। টেস্টের মঞ্চে বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত অভিষেক টেস্ট মর্যাদা পাওয়ারও ৫ মাস পর। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ।

২০ বছর আগে হয়েছিল টেস্ট খেলার স্বপ্নপূরণ।
ছবি: শামসুল হক

অভিষেকেই আমিনুলের শতরান

বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম। কিন্তু টেস্ট মর্যাদা পেতে পেতে অধিনায়কত্ব হারান বাজে ফর্মের কারণেই। কিন্তু টেস্ট অভিষেকে দুর্বার ছিলেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় দিন ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান। অভিষেকে ১৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলে রাঙিয়ে তোলেন নিজের আর দেশের টেস্ট অভিষেক। দারুণ একটা রেকর্ডও করেন। ক্রিকেট ইতিহাসে কেবল তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন তিনি। ৫৩৫ মিনিট ব্যাটিং করে ৩৮০ বলে করা তাঁর ১৪৫ রানের ইনিংসে ছিল ১৭টি বাউন্ডারি।

ইতিহাসে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের অভিষেকেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।
ছবি: শামসুল হক

অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট

টেস্টে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলাটা শুরু হয়েছিল নতুন অধিনায়ককে দিয়েই। অভিষেকের কিছুদিন আগে আমিনুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন নাঈমুর রহমান। আমিনুল যেমন নিজের অভিষেক সেঞ্চুরি দিয়ে রাঙিয়েছিলেন, নাঈমুর বল হাতে তেমনই রাঙিয়েছিলেন নিজের অভিষেক। ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। অফ স্পিনে ৪৪.৩ ওভার বোলিং করে ১৩২ রান দিয়ে তিনি নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ওভারপ্রতি রান খরচ করেছিলেন ২.৯৬।

দেশের অভিষেকে নাঈমুর রহমান তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।
ছবি: শামসুল হক

জাভেদ ওমরের ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট’

টেস্ট ক্রিকেটে ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট’ অথবা নিজেদের দলের ইনিংসের প্রথমে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকার রেকর্ড খুব বেশি ক্রিকেটারের নেই। বাংলাদেশের জাভেদ ওর বেলিম এই অনন্য রেকর্ডের মালিক হন বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্টেই। ২০০১ সালে দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় জিম্বাবুয়েতে। বুলাওয়েতে নিজের অভিষেক টেস্টে জাভেদ ওমর খেলেছিলেন ৮৫ রানের ইনিংস। সে ম্যাচে বাংলাদেশ গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬৮ রানেই। এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন বাংলাদেশের এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্রিকেটে এ শতকে ‘ক্যারিং দ্য ব্যাটে’র নজির এখনো পর্যন্ত এটিই।

‘বালক’ আশরাফুলে হতবাক দুনিয়া

টেস্ট ক্রিকেটে তখন বাংলাদেশের হাঁটি হাঁটি পা পা। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চেপে বসে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা রান-উৎসব করবে, তখন সেটিই ছিল স্বাভাবিক বিষয়। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অবস্থাও ঠিক তেমনই দাঁড়িয়েছিল। শ্রীলঙ্কা করল ৫৫৫ রান। জবাব দিতে নেমে গুটিয়ে গেল ৯০ রানেই। কিন্তু ফলো অনে নামার পর ক্রিকেট দুনিয়া সাক্ষী হলো দারুণ এক ইতিহাসের। মোহাম্মদ আশরাফুল টেস্ট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে করে বসলেন সেঞ্চুরি। তাঁর ২১২ বলে ১১৪ রানের ইনিংসটি ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক প্রতিভার আগমনী বার্তা দিয়েছিল। বাংলাদেশ খুঁজে নিয়েছিল বড় এক ভরসাকে।

টেস্টের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল
ফাইল ছবি

মুলতান ট্র্যাজেডি

বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ট্র্যাজেডিই ওটা। ২০০৩ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ সফরে পাকিস্তান গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম তিন টেস্টের সিরিজে মাঠে নামে বাংলাদেশ। করাচি ও পেশোয়ারে প্রথম দুই টেস্টে স্বাভাবিকভাবেই হারল বাংলাদেশ। কিন্তু লড়াইটা করেছিল দারুণ। মুলতানে তৃতীয় টেস্টে জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও জয়টা অধরাই থাকে বাংলাদেশের। জয় আর বাংলাদেশের মাঝখানে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়ান ইনজামাম-উল-হক নামের এক কিংবদন্তি। তাঁর অবিস্মরণীয় এক ইনিংসেই হারতে হারতে ১ উইকেটে টেস্টটা জিতে নেয় পাকিস্তান।

মুলতানের ট্র্যাজেডি কখনো ভুলবে না বাংলাদেশ।
ফাইল ছবি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ড্র

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ। গ্রস ইসলেটে প্রথম টেস্টটি চিরদিনই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর আগে বৃষ্টির কল্যাণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ড্র করা গেলেও ‘খেলে ড্র’ করার গৌরব সেবারই প্রথম পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুরু থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে স্কোরবোর্ডে ৪১৬ রান তোলে হাবিবুল বাশারের দল। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন দুজন-একজন হাবিবুল, অন্যজন মোহাম্মদ রফিক। মোহাম্মদ আশরাফুল খেলেছিলেন ৮১ রানের ইনিংস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জবাব দিতে নেমে অলআউট হয় ৩৫২ রানে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৭১ রান করে যখন ইনিংস ঘোষণা করে তখন হারের কোনো সুযোগ নেই। খালেদ মাসুদ করেছিলেন সেঞ্চুরি। ৭৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দল যখন বিপর্যয় দেখছিল তখনই খালেদ মাসুদের সেঞ্চুরিটি হার এড়াতে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশও পেয়ে যায় জয়ের সমতুল্য এক ড্র।

মোহাম্মদ আশরাফুলের আরেক ঝলক

২০০৪ সালের ভারতের বিপক্ষে সিরিজ। সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়দের ভারত বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষই। চট্টগ্রাম টেস্টে নিশ্চিত হারের মুখে মোহাম্মদ আশরাফুল দেখিয়েছিলেন নিজের প্রতিভার ঝলক। ১৯৪ বলে ১৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের হার কিছুক্ষণ ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আশরাফুলের সেই ইনিংস নিশ্চিত হারের অপেক্ষায় থাকা দর্শকদের আনন্দ দিয়েছিল। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আনন্দদায়ী ও স্মরণীয় ইনিংসের তালিকা করলে চিরদিনই এই ইনিংসটির কথা উল্লেখ করতে হবে।

প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দ

টেস্ট অভিষেকের সাড়ে চার বছরের মাথায় এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ পেল প্রথম টেস্ট জয়ের আনন্দ। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে তোলে ৪৮৮ রান। এরপর মোহাম্মদ রফিকের ৫ উইকেট-কীর্তি জিম্বাবুয়েকে ৩১২ রানেই গুটিয়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করায় ৩৮০ রানের। এরপর এনামুল হক জুনিয়র ৬ উইকেট তুলে নিলে বাংলাদেশ ২২৬ রানে জিতে নেয় নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচটি।

২০০৫ সালে এল প্রথম টেস্ট জয়
ফাইল ছবি

সবচেয়ে কম বয়সে ১০ উইকেট, ইনিংসে ৫ উইকেট

সবচেয়ে কম বয়সে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব বাঁ হাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রের। তিনি ২০০৫ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে পেয়েছিলেন ১২ উইকেট (৭ ও ৫)। এই কীর্তিতে তিনি হয়ে যান টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে কমপক্ষে ১০ উইকেট নেওয়া ক্রিকেটার। ভেঙে দেন ওয়াসিম আকরামের রেকর্ড। এ ছাড়াও সবচেয়ে কম বয়সে ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড পেছনে ফেলেন ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আকরাম ও ড্যানিয়েল ভেটরিদের।

সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে ১০ উইকেট, ৫ উইকেট দুটিই এনামুলের।
ফাইল ছবি

জাভেদ-নাফিসের সেই জুটি

টেস্ট ক্রিকেটে গত ২০ বছরে বাংলাদেশ অনেক জুটি দেখেছে। কিন্তু জাভেদ ওমর বেলিম আর নাফিস ইকবালের একটা জুটি আলাদাভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা পাবে। ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট জয়ের পর প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতার গৌরবের হাতছানি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে হার জিতলে বা হার এড়ালেই সেটি সম্ভব হতো। কিন্তু সেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ২৯৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ জাব দিতে পারল মাত্র ২১২ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ২৮৬ রান তুললে বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৩৭৪ রানের। চতুর্থ ইনিংসে যেটি ছিল অসম্ভব এক ব্যাপার। হাতে পুরো চার সেশন বাকি থাকায় জয় দূরে থাক ড্র করাটাও অনেক কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে বাংলাদেশের দুই ওপেনার নাফিস ইকবাল ও জাভেদ ওমর লড়ে গেলেন। ৮৩ ওভার অবিচ্ছিন্ন থেকে এ দুজন গড়লেন ১৩৩ রানের জুটি। জাভেদ ৩৪০ মিনিট টিকে থেকে ২৫৮ বলে করেছিলেন ৪৩ রান। নাফিস টিকে ছিলেন ৪৭০ মিনিট, তিনি করলেন সেঞ্চুরি। ৩৫৫ বলে ১২১ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটি সে জুটির হাইলাইট হলেও ১৩৩ রানের জুটিটিই বাংলাদেশের হার এড়াতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। এ জুটির কল্যাণেই ১৪২ ওভার ব্যাটিং করে পুরো চার সেশন টিকে থাকে বাংলাদেশ। টেস্টটা ড্র হয়, বাংলাদেশ দেখা যায় প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরবের।

জাভেদ ওমর আর নাফিস ইকবালের সেই জুটি প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে রেখেছিল বড় অবদান
ফাইল ছবি

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের আবির্ভাব

সাকিব আল হাসান নামের এক রত্নের দেখা ২০০৬ সালেই পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০০৮ সালের শেষ দিকে সাকিব নিজেকে নিয়ে গেলেন অন্য উচ্চতায়। সেবার নিউজিল্যান্ড এসেছিল বাংলাদেশে। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ একজন বোলার কম নিয়ে খেলছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠল। তখন বাংলাদেশের কোচ জেমি সিডন্স সোজা সাপ্টাই সাকিবকে একজন বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোচের সেই কথায় খুব একটা আস্থা রাখা যায়নি। তার কারণও ছিল না। তার আগের ৬ টেস্টে যার উইকেট সাকল্যে ৩টি, তাঁর ওপর কীভাবে আস্থা আসে! কিন্তু সাকিব সত্যি সত্যিই সে টেস্টে নিজেকে বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে তুলে ধরেন। নিউজিল্যান্ডের ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে বসিয়ে দিয়েছিলেন চালকের আসনে। ব্যাটিংটা আর একটু ভালো হলে সে টেস্টটি বাংলাদেশ জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না।

২০০৮: বাংলাদেশ সাকিবে খুঁজে নিল বিশ্বসেরা এক অলরাউন্ডারকে।
ফাইল ছবি

বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ পায় বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর ১৪টি অ্যাওয়ে সিরিজ খেলে বাংলাদেশের অবস্থা ছিল তথৈবচ। শেষ পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জেতে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারিয়ে। বাংলাদেশের স্পিনত্রয়ী সাকিব আল হাসান, এনামুল হক জুনিয়র ও মাহমুদউল্লাহই ধসিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ হারাল তাদের মাটিতেই।
ফাইল ছবি

ক্রিকেটের আঁতুড়ঘরে তামিমের বীরত্ব

২০১০ সালে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড সফরে তামিম ইকবাল নিজেকে চিনিয়েছিলেন দারুণভাবে। সেবার লর্ডসে প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে তিনি আউট হয়েছিলেন ৫৫ রানে। ড্রেসিং রুমে ফিরে তিনি এক কর্মীকে বলেছিলেন তিনি লর্ডসের অনার্স বোর্ডে কেবল সেঞ্চুরি করিয়েদেরই নাম ওঠে কেন! ফিফটি করলেও নাম থাকা উচিত। কর্মীর উত্তর ছিল, স্যার একমাত্র সেঞ্চুরি করলেই নাম তুলতে পারবেন আপনি। তামিম দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, সেঞ্চুরি না করে আমি লর্ডস ছাড়ছি না।’ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করলেন। ৯৪ বলে ১০৩। ১৫টি বাউন্ডারি ও দুটি ছক্কা নিয়ে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে লর্ডসে সেঞ্চুরি। ওল্ডট্র্যাফোর্ড পরের টেস্টেও সেঞ্চুরি করলেন তামিম। ক্রিকেটের জন্মভূমিতে দাঁড়িয়ে তাঁর টানা দুই সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে করেছিল গৌরবান্বিত।

লর্ডসের অনার্স বোর্ড নাম উঠল তামিম ইকবালের।
ফাইল ছবি

মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি

বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির কৃতিত্ব মুশফিকুর রহিমের। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে গল টেস্টে আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি। ৩২১ বলে ২০০ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। ৪৩৭ মিনিটের সেই ইনিংসে ছিল ২২টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কা। মোহাম্মদ আশরাফুলের সঙ্গে ২৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা হতে পারত আশরাফুলেরও। কিন্তু তিনি যে ফিরেছিলেন ১৯০ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি মুশফিকুর রহিমের।
ফাইল ছবি

বিস্ময়ের নাম সোহাগ গাজী

২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ। তরুণ এক অফ স্পিনারের আগমন ঘটেছে বাংলাদেশ দলে। মুত্তিয়া মুরালিধরন বা সাকলায়েন মুশতাকের মতো কেউ নন, কিন্তু খুব কার্যকর। বলে তেমন কারুকাজ না থাকলেও নিয়মিত উইকেট এনে দিতেন দেশকে। কিন্তু সেবারই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি যা করে বসলেন সেটি টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৯ বছরের ইতিহাসে বিরলতম এক কীর্তি। এক টেস্টে হ্যাটট্রিক আর সেঞ্চুরি। সময়ের ফেরে জাতীয় দলের বাইরে চলে গেছেন সোহাগ। কিন্তু আজ এত দিন পর ভাবতে বসলে হয়তো তিনি নিজেই বিস্ময়ে বিমূঢ় হন—কী করে বসেছিলেন তিনি!

ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র সোহাগ গাজীই।
ছবি: প্রথম আলো

ইয়ান বোথাম, ইমরান খানদের পাশে সাকিব

২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনায় অনন্য এক কীর্তি গড়ে ইয়ান বোথাম আর ইমরান খানের সঙ্গে ব্রাকেটবন্দী হন সাকিব আল হাসান। টেস্টের ইতিহাসে কেবল তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট তুলে নেওয়ার কীর্তি গড়েন তিনি।

শততম টেস্টে জয়ের আনন্দ

২০১৭ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফর। এদিকে ১০০ তম টেস্টে খেলতে নামার মাইলফলক। দেশ ছাড়ার সময় নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচটিতে পাখির চোখ ছিল সবার। জিতলে ব্যাপারটা দারুণ হয়। বাংলাদেশ সে টেস্ট জিতেই ছেড়েছিল। কলম্বোর পি সারাভানামুত্তু ওভালে জয়ের ব্যবধান ছিল ৪ উইকেটে। টেস্ট ইতিহাসে কেবল চারটি দেশই নিজেদের শতম টেস্টে জয় পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কায় গিয়ে নিজেদের শততম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ।
ছবি: এএফপি

সফরে এসে হারল ইংল্যান্ড

ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টাকে অন্যভাবেই দেখা হয়। ক্রিকেটের জনক বলে কথা। সেই ইংল্যান্ডকেই ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে হারিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। জয়টা আসতে পারত সিরিজের প্রথম টেস্টেই। কিন্তু চট্টগ্রামে ২২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে ঢাকায় পরের টেস্টেই সাকিব-বাহিনী জয় তুলে নেয় ১০৮ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজ তাঁর অভিষেক সিরিজেই ঝড় তোলেন তাঁর অফ স্পিন দিয়ে।

ঘরের মাটিতে ইংলিশদের হারানোর আনন্দ।
ফাইল ছবি

অস্ট্রেলিয়াও গেল হেরে

২০১৭ সালের আগস্টে অনেক জল ঘোলা করে বাংলাদেশ সফর করে ডেভিড ওয়ার্নার -স্টিভ স্মিথ দের অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ঢাকার প্রথম টেস্টে তাদের হারিয়েই বাংলাদেশ তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয় আসে ২০ রানে। ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত সাকিব আল হাসান বল হাতে হয়ে উঠেছিলেন দুর্বোধ্য। দুই ইনিংসে তুলে নেন ৫টি করে উইকেট। তামিম ইকবালও ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের মুহূর্ত।
ফাইল ছবি