২৫ লাখ মানুষের নামিবিয়ার গর্বের দিন

২৫ লাখ জনসংখ্যার নামিবিয়া দেখল ক্রিকেটে ঐতিহাসিক এক দিনছবি: এএফপি

আয়তনে বড় তবে জনসংখ্যার হিসেবে নামিবিয়াকে ছোট দেশই বলতে হবে। মাত্র ২৫ লাখ লোকের দেশ এটি। ক্রিকেটও খেলে অল্প কিছু মানুষ। কাড়ি কাড়ি অর্থের ঝনঝনানি নেই। কিন্তু আফ্রিকার সেই দেশটিই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ল প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে।

টেস্ট খেলুড়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের বাঁচা মরার ম্যাচ ছিল আজ। শারজায় সে ম্যাচেই ৮ উইকেটে আইরিশদের উড়িয়ে দিয়ে অভিজাত ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশটি। ক্রিকেটে নামিবিয়ার উপস্থিতিই ক্রিকেটপ্রেমীদের নজরের আড়ালে ছিল বহুদিন। ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের মাধ্যমে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এক ঝলক দেখা দিয়েছিল নামিবিয়া। কিন্তু নাকাল হয়েই বিদায় নিয়েছিল তারা। বিশ্বকাপে একটা রেকর্ড আছে তাদের, যেগুলো নামিবিয়া নিশ্চয়ই কখনো মনে করতে চাইবে না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দলটি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ওই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাকগ্রা নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। নিজেদের গ্রুপে নামিবিয়াকে পেয়ে হাত মশকো করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, শচীন টেন্ডুলকাররা সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।

ব্যাটে–বলে দুর্দান্ত ডেভিড ভিসা
ছবি: এএফপি

১৮ বছর পর আরও ক্রিকেটের আরও একটি বৈশ্বিক আসরে খেলার সুযোগ পেয়ে ২০০৩ সালের দুঃস্বপ্ন ভুলিয়ে দেওয়ার সংকল্পই ছিল তাদের। এবার আরব আমিরাতে অন্য এক নামিবিয়াকে দেখল ক্রিকেট দুনিয়া। এবারের দলটি আগের মতো অপেশাদার নয়। বরং দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে অনেক দলের চেয়েই নিজেদের প্রস্তুতিটাকে এগিয়ে রেখেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল তারা। মাঠের লড়াইয়ে গেরহার্ড এরাসমাস, ডেভিড ভিসারা সেটি দারুণভাবেই প্রমাণ করছেন।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতেই নয়, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও নামিবিয়া প্রমাণ করেছে তারা এবার কতটা প্রস্তুত হয়ে এসেছিল। টেস্ট খেলুড়ে বড় শক্তি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৬ রানে গুটিয়ে গেলেও ২৬ রানে লঙ্কানদের ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে তাদের ভালো পরীক্ষাই নিয়েছিল। তবে নেদারল্যান্ডস আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে চোখ কাড়ার অনেক উপকরণই এ দলটার আছে। এ দলের সবচেয়ে বড় দুই অস্ত্র বোধ হয় এরাসমাস আর ভিসাই। বল হাতে নিয়ে জান ফ্রাইলিঙ্কও তো কম যান না।

নাবিমিয়ার ঐতিহাসিক দিনের নায়ক গেরহার্ড এরাসমাস আর ডেভিড ভিসা
ছবি: এএফপি

আজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত ছিলেন ভিসা। তিনি বোলিং করে নিয়েছেন ২ উইকেট। ব্যাটিংয়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৪ বলে ২৮। ফ্রাইলিঙ্কও আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিংকে শেষ করে দিয়েছেন ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন এরাসমাসই। ৪৯ বলে ৫৩ করে নামিবিয়ার জয়ের রাস্তাটা তৈরি করেছেন তিনিই।

দারুণ এ জয়ের পর এরাসমাস জানিয়েছেন, কেন তাদের গর্বিত হওয়া উচিত, ‘আমাদের দেশটা ছোট, ক্রিকেটও খেলে অনেক কম মানুষ। এ সাফল্যের পর আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। দলের বিপদের সময় সব সময়ই আমি চাই দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা ভালো খেলুক। আজ সেটিই হয়েছে। আশা করছি সুপার টুয়েলভেও একই ব্যাপার ধরে রাখব আমরা।’

এরাসমাস দেখিয়েছেন নামিবিয়ার জয়ের রাস্তাটা
ছবি: এএফপি

ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ভিসা। কিন্তু তিনি মনে করেন পুরস্কারটা এরাসমাসেরই পাওয়া উচিত ছিল, ‘দুর্দান্ত একটা ব্যাপার ঘটল আজ। তবে আমি মনে করি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা এরাসমাসেরই পাওয়া উচিত ছিল। সেই মূল খেলাটা খেলেছে। আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি।’

পরস্পরের পিঠ চাপড়ে দেওয়াই সুখী দলের লক্ষণ। নামিবিয়ার এ ব্যাপারটা সুপার টুয়েলভে বড় দলগুলোর হুমকি হলেই কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা জমে যায়!