৪৫ বছর বয়সে ড্যারেন স্টিভেনসের রেকর্ড গড়া ১৯০

কাউন্টি ক্রিকেটে কাল স্মরণীয় এক ইনিংস খেললেন ড্যারেন স্টিভেনস।ছবি: টুইটার

অবিশ্বাস্য? সে তো বটেই। ফ্রিক শো! তার চেয়ে কম কিছু নয়। ক্রিকেট তো এমনই। গৌরবময় অনিশ্চয়তা কিংবা চরম অনিশ্চয়তার সময়ও এনে দেবে গৌরবের ছোঁয়া।

৪৫ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যাট করতে নামলে অনিশ্চয়তা ভর করাই স্বাভাবিক। কিন্তু ড্যারেন স্টিভেনস কাল দেখিয়েছেন, তিনি যেন অন্য ধাতে গড়া মানুষ!

কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে কাল কেন্টের হয়ে ১৯০ রানের ইনিংস খেলে তিনি যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন তাঁর কপালে অদৃশ্য গৌরবতিলকটা দেখেছেন অনেকেই!

গ্লামারগনের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ৯২ রান তুলে খানিকটা বিপদেই ছিল কেন্ট। সাতে নামা স্টিভেনস এরপর খেললেন অবিশ্বাস্য এই ইনিংস।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএলে অধুনা বিলুপ্ত দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স কিংবা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলার সুবাদে এই বদ্বীপে বেশ পরিচিত নাম স্টিভেনসের ১৪৯ বলের ইনিংসে ছিল ১৫ ছক্কা এবং ১৫টি চারের মার।

সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাজটি করেন নবম উইকেট জুটিতে। দশে ব্যাটিংয়ে নামা পেসার মিগুয়েল কামিন্সের সঙ্গে গড়েছেন ১৬৬ রানের জুটি, এর মধ্যে স্টিভেনসের একার অবদানই ১৬০! কামিন্সের অবদান ছিল ৫৫ বলে ১ রান, বাকি ৫ রানের দায় ‘মিস্টার এক্সট্রা’র।

কখনো ইংল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক না পাওয়া স্টিভেনসের অবিশ্বাস্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৮ উইকেটে ১২৮ থেকে প্রথম ইনিংসে ৩০৭ রানের পুঁজি গড়তে সমর্থ হয় কেন্ট।

১৯৮৬ সালে লেস্টারশায়ারের হয়ে ক্রিস ব্যালডারস্টোনের (৪৫ বছর ২৪৭ দিন) সেঞ্চুরির পর ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন স্টিভেনস (৪৫ বছর ২১ দিন)।

শুধু কি তাই, রেকর্ড বইয়ে নতুন নজির যোগ করেছে মিগুয়েল কামিন্সের সঙ্গে তাঁর গড়া জুটিও। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি, যেখানে একজন খেলোয়াড় একাই সেই জুটিতে ন্যূনতম ৯০ শতাংশের বেশি রান করেছেন (স্টিভেনস ৯৬.৩৯%)।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে তাঁদের এই জুটির কাছাকাছি আসতে পারে ১৯১১ সালে টেড অ্যালিস্টন ও উইলিয়াম রাইলির গড়া ১৫২ রানের জুটি, যেখানে অ্যালেস্টনের অবদান ছিল ১৪২। ইংল্যান্ডের খ্যাতিমান ধারাভাষ্যকার ও সংবাদকর্মী জন আরলট এ নিয়ে আস্ত একটি বই লিখেছেন।

কাল দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ৫৫ রান তোলা গ্লামারগনের বিপক্ষে একটি উইকেটও নেন মিডিয়াম পেসার স্টিভেনস। ব্যাটিংয়ে তিনি কতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন, সে প্রমাণ দেবে পরিসংখ্যান।

ব্যক্তিগত ৩০ রানে থাকার সময় সঙ্গী হিসেবে পান কামিন্সকে। ১৯০ রানের ইনিংসে ১৫০ রানই চার-ছক্কা থেকে আদায় করে নেন স্টিভেনস। বল হাতে মারনাস লাবুশেনকে তুলে নেওয়ায় পুরো দিনটাই দারুণ কেটেছে তাঁর।

স্টিভেনসের জন্য এটি ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৬তম সেঞ্চুরি। ১৯৯৫ সাল থেকে হিসাব কষলে কাউন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় তিনি। ১৯৪৯ সালে ওয়াল্টার কিটনের গড়া রেকর্ডের পর ২০১৯ সালে কাউন্টিতে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন স্টিভেনস।

এ বছর তিনি হয়েছেন গত ৮৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী ‘উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’।