৫৮ বছরের রেকর্ড ভাঙা, শেষ দিনে একমাত্র অর্জন

শেষ দিনের খেলা শেষে হাত মেলাচ্ছেন পাকিস্তানের দুই উদ্ধোধনী ব্যাটসম্যানছবি: এএফপি

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে কাল চতুর্থ দিন শেষেই প্রশ্নটা উঠেছিল—আজ শেষ দিনে খেলে লাভটা কী? টেস্ট যে ড্র হচ্ছে তা তো মোটামুটি নিশ্চিত!

৭ উইকেটে ৪৪৯ রানে চতুর্থ দিন শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। আজ সকালের সেশনে মাত্র ১০ রান যোগ করে ৪৫৯ রানে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে অলআউট হওয়ার পরও খেলার যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি অনেকে। পাকিস্তানের দুই 'বেরসিক' উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তো ম্যাচটা আরও 'ম্যাড়ম্যাড়ে' করে ফেললেন।

তাঁদের ২৫২ রানের জুটিই ভাঙতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ড্র হওয়ার সময় আব্দুল্লাহ শফিক ১৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। আগের ইনিংসে ১৫৭ রান করা ইমাম এই ইনিংসে করেন অপরাজিত ১১১*। এ ম্যাচের আগে টেস্টে কোনো শতক ছিল না ইমামের, এখন নামের পাশে দুইটি শতক!

ড্র ম্যাচে রেকর্ড হয়েছে ঠিকই। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের এটাই সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৫৮ বছর আগে অভিষিক্ত আবদুল কাদির এবং খালেদ ইবাদুল্লাহর গড়া ২৪৯ রানের রেকর্ড ভাঙলেন আব্দুল্লাহ-ইমাম জুটি। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটিও।

শেষ দিনে পাকিস্তানের উইকেট ফেলতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া
ছবি: এএফপি

কিন্তু স্টিভেন স্মিথের ভাষায় ‘মরা উইকেটে’র কারণে এসব রেকর্ডেও টেস্টের রোমাঞ্চ খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাওয়ালপিন্ডির উইকেট কেমন ছিল, তা বোঝাতে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম চ্যানেল সেভেন একটি ছবি টুইট করেছে। ছবিটি মহাসড়কের, সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের স্কোরকার্ড।

রাওয়ালপিন্ডির উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য মহাসড়কের মতোই সমান ছিল। নইলে পাঁচ দিন খেলে তিন ইনিংসে ১১৮৭ রান ওঠে কীভাবে, অস্ট্রেলিয়া তো দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়েই নামতে পারেনি!

পঞ্চম দিনে খেলার শেষ ভাগে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বীতার লেশমাত্র ছিল না! সবাই জানতেন, টেস্ট ড্র হচ্ছে। তাই সময়টা কোনোভাবে কাটিয়ে দেওয়াই ভালো।

জিও নিউজের সংবাদকর্মী আরফা ফিরোজ টুইটে জানান, গ্যালারির দর্শকদের টেস্টের ফল নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের প্রতিই তাদের বেশি আগ্রহ। অথচ, পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই টেস্টেই জোড়া শতক তুলে নিয়েছেন ইমাম।

জোড়া শতক তুলে নেন ইমাম
ছবি: এএফপি

তবে ইমামকে আজ ব্যক্তিগত ৯৫ রানে আউটের সুযোগ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। নাথান লায়নের বল তাঁর ব্যাটে ছুঁয়ে প্যাডে লেগে শর্ট লেগে তালুবন্দী হলে অস্ট্রেলিয়ানদের আবেদনে সাড়া দেননি মাঠের আম্পায়ার। রিভিউ নিলে ইমাম আউট হতেন। ভিডিও রিপ্লেতে আল্ট্রা-এজে দেখা গেছে, বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়েছিল।

লায়নের পরের ওভারে ইমামের বিপক্ষে আবারও ক্যাচের আবেদন তোলেন অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা। এবারও আম্পায়ার সাড়া দেননি, তবে অস্ট্রেলিয়া নেয় রিভিউ। কিন্তু ফল হয়নি তাতে, বল ইমামের থাই প্যাডে লেগে উঠেছিল।

মাঠে ইমাম-আব্দুল্লাহরা যেমন মজা করেছেন, তেমনি ড্রেসিংরুমে আরামে ছিলেন পাকিস্তানের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ। ব্যাটিং-বোলিং কিছুই করতে হয়নি। ফিল্ডিংয়ে প্রথম ইনিংসে উল্টো মিস করেছিলেন উসমান খাজার ক্যাচ। ৭.৬ লাখ রুপি তাই ফাওয়াদ পাবেন স্কোরকার্ডে নাম না থাকলেও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৪৭৬/৪ (ডিক্লেয়ার) ও ২৫২/০ (আব্দুল্লাহ ১৩৬*, ইমাম ১১১*; স্টার্ক ০/২৯, লায়ন ০/৭৫, হেড ০/৩৫)।

অস্ট্রেলিয়া : ৪৫৯

ফল: টেস্ট ড্র

ম্যাচসেরা: ইমাম-উল-হক

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ০-০ ব্যবধানে সমতায় দুই দল।