৭ বছর আগের চট্টগ্রামকে মনে করিয়ে রেকর্ড গড়া জয় শ্রীলঙ্কার
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে কম রানে অলআউট করার রেকর্ডের কৃতিত্বটা সম্ভবত আর অন্য কাউকেই দিতে চায় না শ্রীলঙ্কা। এ ব্যাপারে খুব সম্ভবত তাদের আলাদা প্রতিজ্ঞাই আছে। না হলে রেকর্ডের প্রথম তিনেই তাদেরই নাম কেন আসবে!
২০১৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে ৩৯ রান অলআউট করে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, এখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড সেটি। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডকেও ৬০ রানে অলআউট করে দিয়েছিল লঙ্কানরা, শেষ পর্যন্ত সেবার শিরোপাও জেতে শ্রীলঙ্কা।
আজ শারজার ধীর গতির পিচে আবারও নেদারল্যান্ডসকে সামনে পেতেই যেন চট্টগ্রামের সাত বছর আগের সেই ম্যাচের কথা মনে পড়ল লঙ্কানদের। রানের হিসেবে এবার সবচেয়ে কম রানে গুঁড়িয়ে দেওয়ার রেকর্ড নতুন করে লেখা হয়নি, তবে মাত্র ৪৪ রানেই ডাচদের অলআউট করে দিয়েছে লঙ্কানরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড। নামমাত্র লক্ষ্যটা ৮ উইকেট আর ৭৭ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে লঙ্কানরা। প্রথম পর্বে তিন ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জিতল শ্রীলঙ্কা, সুপার টুয়েলভের প্রস্তুতি সারল দারুণভাবেই।
সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে দেওয়ার রেকর্ড না হলেও সবচেয়ে কম বলে গুটিয়ে দেওয়ার রেকর্ড ঠিকই গড়েছে শ্রীলঙ্কা। নেদারল্যান্ডসের ইনিংস টিকেছে ঠিক ১০ ওভার, ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর চেয়ে কম বল খেলে অলআউট হয়নি আর কোনো দল।
শ্রীলঙ্কা যে এই গ্রুপ থেকে হেসেখেলেই সুপার টুয়েলভে যাবে, সে অনুমান অনেকেরই ছিল। কিন্তু মিশনটা এত সহজ হবে, সেটি হয়তো অনেকেই ভাবেননি! প্রথম ম্যাচে নামিবিয়াকে ৯৬ রানে অলআউট করে দিয়ে ৭ উইকেট আর ৩৯ বল হাতে রেখে জয়, এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭১ রান করার পর আইরিশদের ১০১ রানে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল লঙ্কানরা।
সেই দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেটের ১৩টি তুলে নেওয়া তিন বোলার— অফ স্পিনার মহীশ তিকসানা, পেসার লাহিরু কুমারা ও লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আজও নেদারল্যান্ডসকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পথে রেখেছেন সবচেয়ে বড় ভূমিকা। দশ উইকেটের ৮টিই তাঁদের!
আগের দুই ম্যাচের প্রতিটিতে ৩টি করে উইকেট নেওয়া তিকসানা আজ নিয়েছেন ২ উইকেট। আবার আগের দুই ম্যাচের প্রতিটিতে ২টি করে উইকেট নেওয়া কুমারা আজ উইকেট নিয়েছেন তিনটি, আগের দুই ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া হাসারাঙ্গাও আজ উইকেট নিয়েছেন ৩টি।
টস জিতে নেদারল্যান্ডসকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠানো শ্রীলঙ্কার প্রথম উইকেটটি অবশ্য কোনো বোলারের নয়, ইনিংসের চতুর্থ বলে রানআউট ডাচ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ম্যাক্স ও'ডাউড। ৩ রানে প্রথম উইকেট হারানো ডাচদের হয়ে সবচেয়ে বড় জুটিটা হয়েছে দ্বিতীয় উইকেটে—১৬ রানের! জুটিতে সঙ্গী দুই ব্যাটসম্যান বেন কুপার ও স্টেফান মাইবার্গকে তৃতীয় ওভারে দুই বলের ব্যবধানে ফেরান তিকসানা, দুজনই বোল্ড।
এরপর চতুর্থ উইকেটে ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ রানের জুটি কলিন আকেরমান ও বাস ডি লিডের। পঞ্চম ওভারে তিন বলের ব্যবধানে তাঁদের দুজনকে ফেরান হাসারাঙ্গা। ৩২ রানেই ৫ উইকেট নেই নেদারল্যান্ডসের।
বাকি অংশটা তো আসা-যাওয়ার মিছিল! দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে নেদারল্যান্ডসের হয়ে যাওয়া রোয়েলফ ফন ডার মারউই আরেকবার ব্যর্থ, দলকে ৩৭ রানে রেখে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরলেন ষষ্ঠ ওভারে। শেষ তিন উইকেট নেদারল্যান্ডস হারিয়েছে কুমারার করা দশম ওভারে, স্কোরবোর্ড ৪৪ রানেই স্থির রেখে ফিরেছেন শেষ তিন ব্যাটসম্যান।
লক্ষ্যটা এত অল্প, সেটির জবাবে শ্রীলঙ্কা যে দলীয় ৭ রানে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান পথুম নিশঙ্কা আর ৩১ রানে তিনে নামা চারিথ আসালাঙ্কাকে হারিয়েছে, এটাই বরং কিছুটা হতাশ করতে পারে লঙ্কান কোচ-অধিনায়ককে। তবে ওপেনার কুশল পেরেরা এর মধ্যেই বাউন্ডারি-অনুশীলন করে নিয়েছেন। ২৪ বলে ৬ চারে ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।