'দুসরা' যখন আজমলের দুঃখ

আজমলের অ্যাকশন আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো। ফাইল ছবি
আজমলের অ্যাকশন আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো। ফাইল ছবি

সাঈদ আজমলের ‘দুসরা’ আবার আলোচনায়। ডান হাতি ব্যাটসম্যানকে বোকা বানিয়ে বাইরে দিয়ে চলে যাওয়া এই বিশেষ ডেলিভারিটি পাকিস্তানি অফ স্পিনারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কিন্তু এই বিশেষ ডেলিভারিটি যতটা না ব্যাটসম্যানকে বিপদে ফেলছে, তার চেয়ে বেশি বিপদে ফেলেছে স্বয়ং আজমলকেই। কারণ এই বিশেষ ডেলিভারিটির জন্যই দ্বিতীয়বারের মতো সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন পাকিস্তানের এই বোলিং অস্ত্র।
এই দুসরার কারণেই ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন আজমল। সেবার ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হরেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিজেকে সেই অভিযোগ থেকে মুক্তিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে আজমলের দিকে আবারও সেই অভিযোগের তির। গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আইসিসির কাছ থেকে চিঠি চলে এল সাজঘরে। ম্যানেজার মঈন খান তা খুলে দেখলেন দলের সেরা বোলারটির অ্যাকশন নিয়ে আবারও সন্দিগ্ধ বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা।
পুরো বিষয়টি যথেষ্টই হতাশার আজমল আর পাকিস্তানের জন্য। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের বক্তব্য হলো, ‘আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই।’
আজমলের পাশাপাশি গত ১০ মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অঙ্গনে সন্দেহজনক অ্যাকশনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন মোট পাঁচজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস ও শিলিংফোর্ড, শ্রীলঙ্কার সাচিত্রা সেনানায়েকে ও নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। এখানে একটি মজার তথ্য দিয়ে দেওয়া যায়, আজমল, সেনানায়েকে ও উইলিয়ামসন গত দুই মাসের মধ্যে রিপোর্টেড হয়েছেন। আর এই তিনজনই অভিযুক্ত হয়েছেন আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের মাধ্যমে।
আম্পায়ার ইয়ান গোল্ডের নাম উল্লেখ দেখে এতে যদি রয় এমারসন ও ড্যারেল হেয়ারের কাহিনি মনে পড়ে যায়, তাহলে আবার সমস্যা। ১৯৯৯ সালে এই দুই অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার যেভাবে লঙ্কান স্পিন-জাদুকর মুত্তিয়া মুরালিধরনের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিলেন, তা ছিল রীতিমতো ব্যক্তিগত আক্রোশজাত। এমারসনের মধ্যে নাকি আজও মুরালির অর্জন নিয়ে রয়েছে এন্তার আফসোস।
গোল্ডের নামটি এখানে কাকতালীয়ভাবে চলে এলেও এই আম্পায়ার যে ক্রিকেটের ২৪ নম্বর আইনটির রক্ষাকবচ হয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২৪ নম্বর আইনে উল্লেখ আছে বোলিং অ্যাকশন ইত্যাদির যাবতীয় খুঁটিনাটি। সম্প্রতি আইসিসির ওপরের পর্যায়ে নাকি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে ২৪ নম্বর আইনটির কঠোর প্রয়োগের ব্যাপারে।
আইসিসির জেনারেল ম্যানেজার (ক্রিকেট) জিওফ অ্যালারডিসের দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে ক্রিকেট দুনিয়ার অনেক বোলারই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন। তিনি আইসিসির ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়েছেন, এ ব্যাপারে কঠোর হতে। আর তাতেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা কোমর বেঁধে নেমেছে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের বিরুদ্ধে। আইসিসির এই নতুন উদ্যোগের প্রথম তির ছুটল আজমলের দিকে।
আজমল এই মুহূর্তে গোটা ক্রিকেটেরই সেরা স্পিনার হিসেবে পরিচিত। ২০০৮ সালে অভিষেকের পর থেকে এই পাকিস্তানি স্পিনার যে হারে উইকেট নিয়ে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে তুলনা চলে কেবল গ্রেট বোলারদেরই। মুরালিধরন কিংবা সাকলায়েন মুশতাকের জামানা শেষে ক্রিকেট দুনিয়া যখন একজন কার্যকর ও ভয়ংকর অফ ব্রেক বোলারের অভাব বোধ করছিল, ঠিক তখনই আবির্ভাব আজমলের।
ছয় বছরের ক্যারিয়ারে আজমল ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট থেকেই তুলে নিয়েছেন ৪৪১টি উইকেট। এমন একজন বোলারকে সন্দেহের তিরে বিদ্ধ করা হলে স্বাভাবিকভাবেই এমন প্রশ্ন এসে যায়, আইসিসি তাহলে এত দিন কী করছিল? আজমলের বোলিং অ্যাকশন যদি এখন সন্দেহজনক হয়, তাহলে সেটা ৪৪১টি উইকেট নেওয়ার আগে কেন হলো না!
২০০৯ সালে আজমলের দিকে প্রথম সন্দেহের তির ছোড়ার পর তিনি একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর হাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ দিয়েছিলেন। আবার নতুন করে আজমলের বোলিং নিয়ে সন্দেহ সত্যিকার অর্থে ক্রিকেটের এই আইনটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।