মেলবোর্নের পিচ স্টোকসের চোখে ‘আদর্শ নয়’, স্মিথের মতে বোলারদের জন্য ‘একটু বেশিই সহায়ক’

মেলবোর্নে দুই দিনের মধ্যে পড়েছে ৩৬ উইকেট। আজ স্টার্কের বলে ডাকেটের আউট হওয়ার মুহূর্তের ছবি এটিএএফপি

আজকের আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ড সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সিডনিতে। জ্যাকব বেথেল তখন সাত বছরের স্কুলপড়ুয়া। প্রায় ১৫ বছর এবং দিনের হিসাবে ৫,৪৬৮ দিন পর আজ সেই বেথেল দাঁড়ালেন মেলবোর্নের বাইশ গজে। চারপাশে ৯২ হাজারের বেশি দর্শক। মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডার। বেথেল তাঁদের মধ্য থেকে ৪০টি মহামূল্যবান রান বের করে দারুণ অবদান রাখলেন ইংল্যান্ডের জয়ে।

মেলবোর্ন টেস্ট জিততে জয়ের জন্য ১৭৫ রানের লক্ষ্য পেয়েছিল ইংল্যান্ড—যেটা আগের তিন ইনিংসের চেয়ে সর্বোচ্চ। এই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেটের জয়ে বেথেল সর্বোচ্চ স্কোরার। গ্যালারিতে তাঁর মা–বাবা ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের টেস্ট জয়ে প্রায় ১৫ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে দেওয়ায় ছেলের দারুণ অবদান দেখে নিশ্চয়ই তাঁদের খুশি হওয়ার কথা।

২২ বছর বয়সী বেথেলও বেশ আনন্দিত, ‘জয়ে অবদান রাখতে পেরে ভালো লাগছে...দর্শকদের মধ্যে মা–বাবা আছেন। তাঁদের এখানে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। রুটের সঙ্গে ব্যাট করাটা স্বপ্নের মতো, যদিও দুজনে শেষ করে আসতে পারিনি। কিন্তু (জয়টা) অবিশ্বাস্য।’

রান তাড়ায় দৃঢ়তা দেখান বেথেল
এএফপি

পার্থের মতো মেলবোর্নেও মাত্র দুই দিনের মধ্যে শেষ হলো টেস্ট। কেউ কেউ বলছেন, এমন ম্যাচ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নেতিবাচক বিজ্ঞাপন। কারও দাবি, মেলবোর্নের পিচ বোলারদের জন্য একটু বেশিই ‘জীবন্ত’ ছিল। তাতে অবশ্য ইংল্যান্ডের কিছুই যায়-আসে না। পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজে এবার প্রথম তিন টেস্টেই হেরে অ্যাশেজের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড। মেলবোর্নের জয়টা বলতে পারেন একটু সান্ত্বনারই। তবু গ্যালারিতে উদ্দাম উদ্‌যাপনে মেতেছেন ‘বার্মি-আর্মি’রা (ইংল্যান্ডের সমর্থকগোষ্ঠী)।

তাঁদের দেখিয়ে ধারাভাষ্যকক্ষে ইংল্যান্ড কিংবদন্তি স্টুয়ার্ট ব্রড বলেন, ‘এখানে (অস্ট্রেলিয়ায়) ইংল্যান্ড টেস্টে সর্বশেষ জয়ের পর ১৬টি ব্যথাতুর হার ও দুটি ড্র—দেখুন, সমর্থকদের কাছে এটার (জয়) মূল্য কতখানি!’

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসের জন্যও এই জয় অমূল্য। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন পুরো সিরিজে, কিন্তু প্রথম তিন টেস্টে প্রত্যাশিত ফল না মেলায় সমালোচিত হন চারপাশ থেকে। তাঁর পূর্বসূরি ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন সংবাদমাধ্যমে লেখা কলামে স্টোকসের অধিনায়কত্বের সমালোচনা করেন। এর মধ্যে দাঁড়িয়ে মেলবোর্ন থেকে জয় তুলে নেওয়ার পর স্টোকস বলেন, ‘ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত সফরটা কঠিন, সেটা দল হিসেবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর অস্ট্রেলিয়ায় জেতা দলের অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে।’

ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস
এএফপি

তবে মেলবোর্নের পিচকে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ঠিক আদর্শ বলে মনে করেন না স্টোকস। গতকাল প্রথম দিনে পড়েছে ২০ উইকেট। আজ পড়েছে ১৬ উইকেট—সেটাও দিনের খেলার ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় বাকি থাকতে। ইংল্যান্ড এর মধ্যে জয় পেলেও মেলবোর্নে পিচ নিয়ে খেলা শেষে স্টোকস বলেন, ‘আমরা জিতেছি—কিন্তু সত্যি বলতে আমাদের প্রত্যাশায় এটা (পিচের আচরণ) ছিল না। এটা আদর্শ নয়, দুই দিনেরও কম সময়ে শেষ হলো খেলা। তবে এসব বিষয়ে একপাশে সরিয়ে বলতে পারি, মাঠের কন্ডিশনের মুখোমুখি হতে সাফল্য পেতে সেরা কৌশলটাই বেছে নিতে হয়। রান তাড়ায় আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে আমি সত্যিই গর্বিত।’

মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হারের কারণটাও খোঁজার চেষ্টা করলেন, ‘একটু কঠিন ছিল। ম্যাচটা খুব দ্রুতই শেষ হলো। আমরা যদি দুই ইনিংসেই আরও ৫০ থেকে ৬০ রান বেশি করতে পারতাম তাহলে হয়তো হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। আজ সকালে তারা দারুণ বোলিং করেছে। ব্যাটিংয়েও আক্রমণাত্মক ছিল। যেভাবে তারা খেলেছে সে জন্য কৃতিত্ব দিতেই হয়।’

মেলবোর্নের পিচ নিয়ে স্মিথ বলেন, ‘পিচ আসলে তেমন বদলায়নি। পুরো ম্যাচেই একটু (মুভমেন্ট) হয়েছে...আমার মনে হয় এটা বোলারদের পক্ষে একটু বেশিই সহায়ক ছিল। কেউই ঠিকভাবে থিতু হতে পারেনি। দুই দিনে ৩৬ উইকেট পড়াটা একটু বেশি বেশিই। ঘাস ৮ মিলিমিটারে (মেলবোর্নের পিচে ঘাস ১০ মিলিমিটার লম্বা) নামিয়ে আনলে হয়তো ঠিক হতে পারে।’