‘অ্যাশেজ টু অ্যাশেজ, ডাস্ট টু ডাস্ট, ইফ টমসন ডোন্ট গেট ইউ, লিলি মাস্ট।’
১৯৭৪–৭৫ অ্যাশেজ সিরিজে সিডনির ‘টেলিগ্রাফ’ সংবাদপত্রের কার্টুনে লেখা কথা। ক্রিকেটের কুলীনতম এই টেস্ট সিরিজ কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ—তা এই একটি কথাতেই বোঝা যায়। ১৮৮২ সালে শুরু হওয়া ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার এই টেস্ট সিরিজকে অনেকে আভিজাত্যে বিশ্বকাপেরও ওপরে রাখেন। অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে চলছে এই অ্যাশেজের নবতম সংস্করণ। আগুন ঝরানো এই সিরিজের মধ্যে আসুন জেনে নিই অ্যাশেজে রান তোলায় শীর্ষ ১০ ব্যাটসম্যান কারা:
ইনিংস: ৫৭, রান: ২৬৪৪, গড়: ৪৮.৯৬, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৭/১৩
ক্রিকেট খেলুড়ে পরিবার থেকে উঠে আসা জন হিউ এডরিচকে অনেকে তাঁর প্রজন্মের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত ক্রিকেট খেলা এডরিচ ফাস্ট বোলিং খেলায় দুর্দান্ত ছিলেন। সাহস ছিল অনেক। ইংল্যান্ডের হয়ে ৭৭ টেস্ট খেলা এই বাঁহাতি ১৯৭০–৭১ অ্যাশেজে ২ সেঞ্চুরিসহ মোট ৬৪৮ রান করেছিলেন।
ইনিংস: ৭৬, রান: ২৬৬০, গড়: ৩৫.৪৬, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৪/১৬
১৮৯৬ থেকে ১৯১২ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪৯ টেস্ট খেলেন ক্লেম হিল। অবসর নেওয়ার সময় টেস্টে তাঁর রানের সংখ্যাই ছিল সর্বোচ্চ। ১৯০২ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে এক হাজার রান করা এই কিংবদন্তিকে তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইনিংস: ৪৬, রান: ২৭৪১, গড়: ৬৬.৮৫, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৮/১৬
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ওপেনার। জ্যাক হবসের সঙ্গে তাঁর ওপেনিং জুটি অনেক গল্পের খোরাক। বিরূপ কন্ডিশনে তাঁর সেরাটা বেরিয়ে আসত। বাজে উইকেটে ‘অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান’। ইংল্যান্ডের হয়ে ৫৪ টেস্ট খেলা সাটক্লিফ তিনবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে দারুণ সাফল্য পেয়েছেন।
ইনিংস: ৫৮, রান: ২৮৫২, গড়: ৫১.৮৫, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৯/৭
উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাকের মতে, ওয়ালি হ্যামন্ড ইতিহাসের সেরা চার ব্যাটসম্যানের একজন। ধারাভাষ্যকার এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের বিচারে তিরিশের দশকে ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৮৫ টেস্ট।
ইনিংস: ৬৯, রান: ৩০৩৭, গড়: ৪৬.০১, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৯/১১
সহজাত স্ট্রোকমেকার। ভীষণ প্রতিভাবান। চোখজুড়ানো ব্যাটিং। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের হয়ে একমাত্র জ্যাক হবসই তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৭ টেস্ট খেলা ডেভিড গাওয়ার অবসর নেওয়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবেও জনপ্রিয়তা পান।
ইনিংস: ৭২, রান: ৩১৭৩, গড়: ৫৮.৭৫, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ১০/১৪
সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন। সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কদেরও একজন। তাঁর সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও। অস্ট্রেলিয়ার বিপদে হাল ধরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ায় জুড়ি ছিল না স্টিভ ওয়াহর। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ১৬৮ টেস্ট।
ইনিংস: ৭৩, রান: ৩২২২, গড়: ৫৫.৫৫, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ৭/১২
টেস্টে একসময় রানে সবার ওপরে ছিলেন অ্যালান বোর্ডার। ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন মানসিকভাবে ভীষণ শক্তিশালী। ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়কও বোর্ডার। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৫৬ টেস্ট খেলেছেন।
ইনিংস: ৬৯, রান: ৩৪৯৭, গড়: ৫৫.৫০, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ১২/১৪
আধুনিক ক্রিকেটে কিংবদন্তিদের একজন। ডন ব্র্যাডম্যানের পর আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করা স্মিথ চলমান অ্যাশেজেও খেলছেন। ব্রিসবেন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে পেয়েছেন ফিফটি। ৩৬ বছর বয়সী স্মিথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এ পর্যন্ত ১২০ টেস্ট খেলেছেন।
ইনিংস: ৭১, রান: ৩৬৩৬, গড়: ৫৪.২৬, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ১২/১৫
ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে ‘দ্য মাস্টার।’ ইংলিশ ক্রিকেট তিনি এই নামেই বেশি পরিচিত। ক্রিকেট ইতিহাসেই তাঁকে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উইজডেনের বিচারে শতাব্দীর সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৬১ টেস্ট।
ইনিংস: ৬৩, রান: ৫০২৮, গড়: ৮৯.৭৮, সেঞ্চুরি/ফিফটি: ১৯/১২
ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। ৫২ টেস্টে ৮০ ইনিংসে যাঁর ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪—তাঁকে এই বিশেষণটা দেওয়াই যায়। অ্যাশেজে ব্র্যাডম্যানের চেয়ে আর কেউ বেশি রান করতে পারেননি। আর কারও তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরিও নেই। অ্যাশেজে ব্যাটিং গড়েও ব্র্যাডম্যানই শীর্ষে।