জয়াসুরিয়ার রেকর্ড হয়নি, হয়েছিল শ্রীলঙ্কার
১৯৯৭ সালের এই দিনে টেস্টে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। যে রেকর্ড টিকে আছে আজও।
২৮ বছর আগের ৬ আগস্ট।
পুরো শ্রীলঙ্কাই যেন সে দিন হাজির হয়েছিল কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে! তাঁরা সাক্ষী হতে এসেছিলেন বিশ্ব রেকর্ডের। ঘরের ছেলে সনাৎ জয়াসুরিয়া ভেঙে দেবেন ব্রায়ান লারার টেস্ট ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, মাঠে না গিয়ে কি থাকা যায়। লারার ৩৭৫ রানের বিশ্ব রেকর্ড থেকে ৪৯ রানই দূরে থেকে আগের দিন টেস্টের চতুর্থ দিনটা শেষ করেছিলেন জয়াসুরিয়া।
ক্যারিবিয়ান তারকা লারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭৫ রান করে ভেঙেছিলেন গ্যারি সোর্বাসের ৩৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড। আর দুই বছর পেরোতে না পেরোতেই সেই রেকর্ডকে হুমকির মতো ফেলে দিলেন লারার মতো বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জয়াসুরিয়া।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে জয়াসুরিয়া শেষ দিন শুরু করেন ৩২৬ রান নিয়ে। তিনটি চার ও দুটি সিঙ্গেল নিয়ে দ্রুতই পৌঁছে যান ৩৪০-এ। রেকর্ড যখন ৩৬ রানের দূরত্বে, তখনই ছন্দপতন। ভারতের অফ স্পিনার রাজেশ চৌহানের একটু বেশি লাফিয়ে ওঠা বল জয়াসুরিয়ার ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নেয় সিলি পয়েন্টের ফিল্ডার সৌরভ গাঙ্গুলীর হাতে। ‘এত কাছে তবু এত দূর’—এই অনুভূতি নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরা জয়াসুরিয়ার পা যেন চলছিল না।
জয়াসুরিয়ার রেকর্ড গড়তে না পারার হতাশায় যাঁরা সে সময় গ্যালারি ছেড়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, তাঁর নিশ্চিত পরে আফসোস করেছেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা না হলেও টেস্টে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা তো সে দিনই ভেঙেছে শ্রীলঙ্কা।
জয়াসুরিয়া যখন ফিরলেন, শ্রীলঙ্কার স্কোর ৬১৫/৩। দুই বল আগে ৬১৫ রানেই শ্রীলঙ্কা হারিয়েছিল দ্বিতীয় উইকেট। রেকর্ড ৫৭৬ রানের জুটি গড়ার পর অনিল কুম্বলের বলে এলবিডব্লু হয়েছিলেন ২২৫ রান করা রোশান মহানামা। এর আগে ইতিহাসের মাত্র প্রথম জুটি হিসেবে টানা দুই দিন ব্যাট করার কীর্তি গড়েছেন জয়াসুরিয়া-মহানামা।
আগের দিনই টেস্টে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েছিলেন তাঁরা, ভেঙেছিলেন ১৯৯১ সালে শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু জোন্স ও মার্টিন ক্রোর গড়া ৪৬৭ রানের রেকর্ড। মাত্র ১ রানের জন্যই সে সময়ের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের জুটি রেকর্ডটা ছুঁতে পারেননি জয়াসুরিয়া-মহানামার দ্বিতীয় উইকেট জুটি। জয়াসুরিয়া-মহানামার টেস্ট রেকর্ড ও বিজয় হাজারে-গুল মোহাম্মদের প্রথম শ্রেণির রেকর্ড ২০০৬ সালে ৬২৪ রানের জুটি গড়ে ভেঙে দেন আরেক শ্রীলঙ্কান জুটি কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে।
মহানামা-জয়াসুরিয়া ফেরার পর আরও ৩৩৭ রান যোগ করার পর শ্রীলঙ্কা যখন প্রথম ইনিংস ছেড়ে দেয়, দলটির রান তখন ৯৫২। আগের বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে যা ৪৯ রান বেশি। ১৯৩৮ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৯০৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল ইংল্যান্ড। ৫৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভাঙা শ্রীলঙ্কার রেকর্ডটার বয়স আজ ২৮ বছর।
বোলারদের দুর্দশার ম্যাচে মহানামা-জয়াসুরিয়ার বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কাকে রেকর্ড এনে দিতে বড় ভূমিকা রাখেন অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে। ডি সিলভা করেন ১২৬ রান, অধিনায়ক রানাতুঙ্গা ৮৬ ও টেস্ট অভিষিক্ত জয়াবর্ধনে ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসে করেন ৬৬। শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণার পরই ড্র মেনে নেয় দুই দল, ম্যাচে মাত্র দুটি ইনিংসই হতে পেরেছিল। দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ে নামার আগে ভারত তাঁদের প্রথম ইনিংস ছেড়েছিল ৮ উইকেটে ৫৩৭ রান তুলে।