ভারতের ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার সঙ্গে অতৃপ্তিও সঙ্গী সাকিবদের

প্রথম দিনে ভারতের ৬ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ, ৩ উইকেট নেন তাইজুল ইসলামশামসুল হক

বাংলাদেশ দল একেবারে সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে, মাঠ প্রায় ছেড়ে গেছেন দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যান অক্ষর প্যাটেল ও শ্রেয়াস আইয়ারও। মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলেন শুধু দুই আম্পায়ার মাইকেল গফ ও শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। গফের কাছ থেকে ক্যাপটি নিয়ে হাঁটা দিলেন বোলার মেহেদী হাসান মিরাজও। দিনের শেষ বলে মিরাজের বলে অক্ষরকে এলবিডব্লু দিয়েছিলেন গফ, সে সিদ্ধান্তে রিভিউ করেছিলেন অক্ষর। রিভিউয়ের ফল জানাতেই মাঠে অপেক্ষা করছিলেন গফ ও শরফুদ্দৌলা। শেষ পর্যন্ত হলো আম্পায়ার্স কল, বাংলাদেশ পেল ষষ্ঠ উইকেট।

চট্টগ্রামে টেস্টের ঘটনাবহুল প্রথম দিনের শেষটাও হলো এভাবেই। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শেষ করল ভারত, শ্রেয়াস আইয়ার অপরাজিত থাকলেন ৮২ রানে। বাংলাদেশের উইকেট অবশ্য বাড়তেই পারত। তা হয়নি ক্যাচ মিস, দুর্ভাগ্য আর রিভিউ না নেওয়ার কারণে।

টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল প্রথম সেশন। ভারতের দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিল ইতিবাচক শুরুর পর খোলসে ঢুকে পড়েন। চট্টগ্রামের মন্থর উইকেটে বল নিচু হচ্ছিল প্রায়ই, যা ভালোই অস্বস্তিতে ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের।

ভারতের প্রথম উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম
শামসুল হক

ষষ্ঠ ওভারেই স্পিনার তাইজুল ইসলামকে আনেন সাকিব। ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে রান। একসময় ৩৫ বলের ব্যবধানে ৭ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারায় ভারত। তাইজুলকে লেগ স্টাম্পের ওপর থেকে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ধরা পড়েন গিল, ইয়াসির সে ক্যাচ নেন স্লিপ থেকে গিয়ে। খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে আনেন অধিনায়ক রাহুল। ঠিক পরের ওভারেই তাইজুলের লেগ স্টাম্পে পড়া বলটা পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন কোহলি, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি।

আরও পড়ুন

ক্রিজে এসে ঋষভ পন্ত শুরু করেন সহজাত আক্রমণ। ১৪ ওভার পর প্রথম চার, ইনিংসেরই প্রথম ছক্কা মারেন তিনি। পূজারা ও পন্তের জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকেই শেষ করে প্রথম সেশন। মধ্যাহ্নবিরতির পরও আক্রমণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন পন্ত, তবে খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি সেটি। ওভার দ্য উইকেট থেকে করা মিরাজের অ্যাঙ্গেল করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে নিচু হয়ে আলতো করে খেলার চেষ্টায় ইনসাইড-এজের পর বোল্ড হন ৪৫ বলে ৪৬ রান করে।

এর আগেই ইবাদতের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান পূজারা, তখন তাঁর রান ছিল ১২। পূজারার ক্যাচটি সহজ হলেও শ্রেয়াস অবশ্য উইকেটকিপার নুরুল হাসানকে কঠিন একটা সুযোগ দিয়েছিলেন সাকিবের বলে, ক্যাচ হয়নি সেটিও। দ্বিতীয় সেশনে ১ উইকেট হারিয়ে ভারত তোলে ৮৫ রান।

মিরাজ আউট করেন ঋষভ পন্ত ও অক্ষর প্যাটেলকে
শামসুল হক

শেষ সেশনের শুরুর দিকেই তাইজুলকে চার মেরে ক্যারিয়ারের ৩৪তম ফিফটি পূর্ণ করেন পূজারা। শিগগির তাঁকে অনুসরণ করেন শ্রেয়াস, সাকিবকে চার মেরে ষষ্ঠ ম্যাচে চতুর্থ ফিফটি তাঁর। শ্রেয়াসের ওই শটেই ২০০ পেরিয়ে যায় ভারত। ৬৮তম ওভারে পূজারা ও শ্রেয়াসের জুটি ছুঁয়ে ফেলে ১০০ রান। শ্রেয়াস এরপরই দেন সহজ সুযোগটি। মিরাজের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, ৭৬তম ওভারে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ তোলেন। তবে সহজতম সুযোগটি নিতে পারেননি ইবাদত।

দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গেই, ইবাদত শ্রেয়াসের উইকেটটিও পেয়ে যেতে পারতেন। নিচু হওয়া বলটা মিস করেছিলেন শ্রেয়াস, তবে ইবাদতের বল স্টাম্পে লেগে বেল ওপরে উঠলেও পড়েনি সেটি। একটু আগেই আম্পায়াররা বদলেছিলেন জিং বেল।

আরও পড়ুন

এতক্ষণ সুযোগ হাতছাড়া করার আক্ষেপে পোড়া বাংলাদেশকে অবশ্য একটু স্বস্তি এনে দেন তাইজুল। তাঁর হালকা টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলটা ফাঁকি দেয় পূজারার ব্যাট, আঘাত হানে স্টাম্পে। পূজারা থামেন সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরেই। শ্রেয়াসের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ওঠে ১৪৯ রান, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে পঞ্চম উইকেটে যেটি সর্বোচ্চ।

এরপর তাইজুলের বলেই শর্ট লেগে জাকিরের হাতে ব্যাট-প্যাডে ক্যাচ আউট হতে পারতেন নতুন ব্যাটসম্যান অক্ষর প্যাটেল। আম্পায়ার আউট দেননি, বাংলাদেশও রিভিউ নেয়নি। তবে দিনের শেষ বলে মিরাজের লাইন মিস করে এলবিডব্লু হন অক্ষর।