রুটের যে ‘দুঃখ’ নেই কোহলি–স্মিথদের

রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে খেলছেন রুটছবি: টুইটার

‘ফ্যাব ফোর’–এ কাকে এগিয়ে রাখবেন? বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, কেইন উইলিয়ামসন নাকি জো রুট? সংস্করণভেদে উত্তরটা হয়তো ভিন্ন হবে। ওয়ানডে ক্রিকেটে কেউ হয়তো এগিয়ে রাখবেন কোহলিকে, আবার ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণ টেস্টে হয়তো এগিয়ে রাখবেন স্মিথ কিংবা রুটকে। কেউ আবার উইলিয়াসনের নামও বলতে পারেন।

তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কে এগিয়ে? কিংবা প্রশ্নটা যদি উল্টো করে করা হয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে কে?

সম্ভবত এই নামটা নিয়ে খুব বেশি তর্কবিতর্ক হবে না। ইংল্যান্ডের জো রুটের নামটাই হয়তো আগে আসবে। কারণ, খুঁজতে খুব বেশি গভীরেও যেতে হবে না। নিখাদ পরিসংখ্যান দিয়েও প্রমাণ করা যায়, টি–টোয়েন্টিতে রুট বাকিদের চেয়ে পিছিয়ে।

আরও পড়ুন

রুট সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০১৯ সালে। সব মিলিয়ে খেলছেন ৩২ ম্যাচ। ব্যাটিং গড় ৩৫.৭২ হলেও ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের বাস্তবতায় স্ট্রাইক রেট খুব একটা বেশি নয়—১২৬.৩০। তাই ২০১৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক রুট ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি পরিকল্পনাতেই নেই।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও রুটের যে অনেক চাহিদা, তেমনটাও নয়। ইংল্যান্ডের এই ব্যাটসম্যান গত চার বছরে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ১২টি, এর সঙ্গে ‘দ্য হানড্রেড’–এ খেলেছেন আরও চার ম্যাচ। আসলে রুটকে নিয়ে যত আলোচনা তার বেশির ভাগ জায়গাজুড়েই ‘টেস্টের রুট’।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে ১১৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা কোহলির গড় ৫০–এর বেশি। স্ট্রাইকরেটও ১৩৭.৯৬। এই কোহলিই আবার আইপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। নিউজিল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি দলে উইলিয়ামসনের ভূমিকা একটু ভিন্ন।

টেস্টেই বেশি সফল রুট
এএফপি

ইনিংস টেনে নেওয়ার ভূমিকায় খেলা এই ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১২৫–এর কম। তবে নিউজিল্যান্ড দলে নিজের কাজটা উইলিয়ামসন ভালোভাবেই করে যাচ্ছেন। আইপিএলেও বেশ সফল উইলিয়ামসন। খেলেছেন ৭৭টি ম্যাচ। চোটে না পড়লে এবারের আইপিএলে গুজরাটের হয়ে খেলার কথা ছিল তাঁর।

অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলেও স্মিথের জায়গা নিশ্চিত নয়। তবে আইপিএলসহ নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে স্মিথ নিজেকে অনেকবার প্রমাণ করেছেন। আইপিএলের মতো আসরে এক শর বেশি ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটারের টি-টোয়েন্টিতে খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

পিছিয়ে থাকা রুট কি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে চাননি? না, চেষ্টা করেও পারেননি? ২৯টি টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক রুট টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। ২০১৭ সালে আলাদাভাবে পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডের সঙ্গে হিটিং নিয়ে কাজও করেছিলেন।

সম্প্রতি আইপিএল ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন কোহলি
ছবি : বিসিসিআই

পাওয়ার হিটিং সব সংস্করণেই কাজে লাগে, তবে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে এই পাওয়ার হিটিং রুটের কার্যকারিতা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তবে এর পরের বছর প্রথমবার আইপিএল নিলামে নাম দিয়ে অবিক্রীত থেকে যান রুট, যা নিয়ে পরে হতাশাও প্রকাশ করতে দেখা গেছে তাঁকে।

ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার পথে রুটের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা ছিল। এরপরের কয়েকটি আসরে আইপিএলের নিলামে নিজের নাম দেননি।

কিন্তু আইপিএলের সর্বশেষ নিলামে অনেকটা হুট করেই নিজের নাম দেন রুট। ইংলিশ এই ব্যাটসম্যানকে দলে নেয় রাজস্থান রয়্যালস। দলে সুযোগ পাওয়ার পর রুটের অপেক্ষা শুরু হয় একাদশে সুযোগ পাওয়ার জন্য। এই অপেক্ষাও কম দীর্ঘ নয়। রাজস্থানের প্রথম ১০ ম্যাচেই বেঞ্চ গরম করেছেন রুট। প্রথম সুযোগ আসে লিগে তাদের ১১তম ম্যাচে।

আরও পড়ুন

রুটের অপেক্ষা আসলে এত সহজে শেষ হওয়ার নয়। পুরোনো একটা ‘ধারা’ মেনেই সে ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি রুট। পুরোনো ধারা? ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, দ্য হানড্রেড—কোনো জায়গাতেই যে নিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি রুট। তাঁর এই হতাশার তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন আইপিএল।

আজ আইপিএলে মাঠে নামছে রাজস্থান। তাই প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতার বিপক্ষে এই ম্যাচে সুযোগ মিলবে তো রুটের? যদি একাদশে সুযোগ পান ব্যাটিং করার সুযোগ পাবেন তো!

জো রুট কি ওয়ানডে দলে ফিরতে পারবেন?
এএফপি

রুটের এবারের আইপিএলে খেলতে চাওয়ার বড় কারণ ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আপাতত ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলে না থাকলেও পরিকল্পনাতে ভালোভাবেই আছেন রুট। ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান তাই ভারতের কন্ডিশনের সঙ্গে আরেকটু মানিয়ে নিতে চান আইপিএল খেলে।

আইপিএলে রুট নিজেকে প্রমাণ করলে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে দলে তাঁর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাটা বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি ‘ফ্যাব ফোর’–এ ওই পাওনা হিসাবটাও মিটবে। কারণ, বাকি তিনজনই আইপিএলে নিজেকে প্রমাণ করেছেন! রুট আর পাওনাটা বাকি রাখবেন কেন!