বিসিএল ওয়ানডেতে চ্যাম্পিয়ন উত্তরাঞ্চল

ওয়ানডেতে চ্যাম্পিয়ন উত্তরাঞ্চলশামসুল হক

জয় থেকে তখনো ৩০ রান দূরে উত্তরাঞ্চল। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ পূর্বাঞ্চলের দরকার ছিল ৪ উইকেট। ব্যাটিংয়ে ১১৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা পূর্বাঞ্চলের শাহাদাত হোসেন ফিল্ডিং করছিলেন লং অন বাউন্ডারিতে।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের শিশিরভেজা আউটফিল্ড শাহাদাতদের কাজটা কঠিন করে তুলেছিল। আর সেটাকে সুবিধা বানিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য খেলছিলেন উত্তরের দুই ব্যাটসম্যান প্রিতম কুমার ও আকবর আলী। তখন হতাশা মেশানো কণ্ঠে শাহাদাতকে বলতে শোনা গেল, ‘আর হলো না। ম্যাচটা মনে হয় বের হয়ে গেল।’

শাহাদাতের কথার সঙ্গে মিলে যায় পূর্বাঞ্চলের অন্য ফিল্ডারদেরও শরীরী ভাষাও। হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। তাতে যা হওয়ার তাই হলো। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ওয়ানডে সংস্করণের ফাইনালে ২৭৬ রানের লক্ষ্যটা ৩৮ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলে আকবর আলীর উত্তরাঞ্চল। দ্বিতীয়বারের মতো বিসিএল ওয়ানডের শিরোপা ঘরে তুলল উত্তর। এই দলটাই এবারের বিসিএলে চার দিনের সংস্করণে চার দলের মধ্যে চতুর্থ হয়েছিল।

ম্যাচসেরা হয়েছেন নাহিদ রানা।
শামসুল হক

স্কোরকার্ড দেখলেই বোঝা যায়, মিরপুরের উইকেট অতটা কঠিন ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। শিশিরের কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং প্রথম ইনিংসের তুলনায় সহজ হয়েছে। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম (৪৯ বল) শতক করা হাবিবুর রহমান আজও তানজিদ হাসানকে নিয়ে রান তাড়ায় উড়ন্ত সূচনা এনে দেন। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে ১০ বলে ১৭ রান করা হাবিবুর যখন আউট হলেন উত্তরের রান ৩৩।

এরপর অমিত হাসান (৯) ও আবদুল্লাহ আল মামুন (৮) অল্প রানে ফিরলেও তানজিদ দ্রুত রান তোলায় উত্তরাঞ্চলকে রান রেটের চাপে পড়তে হয়নি। দলকে ৮৮ রানে রেখে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৪৩ রান করেছেন তানজিদ।

এরপর তাইবুর রহমানকে নিয়ে ৯০ রানের জুটি গড়েন প্রিতম কুমার। দলকে ১৭৮ রানে রেখে তাইবুর (৩০ বলে ২৪ রান) ফেরার পর বাকি কাজটা সেরেছেন প্রিতম ও আকবর। দুজনই অর্ধশত করে উত্তরাঞ্চলের জয় নিশ্চিত করেন। প্রিতম ৮৬ বলে ৭৬ রান করে আউট হলেও আকবর ৫৯ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। প্রিতম–আকবর ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৮০ রান।

দ্বিতীয়বারের মতো বিসিএল ওয়ানডের শিরোপা ঘরে তুলল উত্তর
শামসুল হক

আগে ব্যাটিং করা পূর্বাঞ্চলকে অবশ্য ধুঁকতে হয়েছে শুরু থেকেই। তরুণ ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা প্রথম স্পেলে দুই উইকেট নিলে বিপদে পড়ে পূর্বাঞ্চল। ওপেনার পারভেজ হোসেন টিকে থাকায় রক্ষা। মাঝের ওভারে তাঁকে নিয়ে পূর্বাঞ্চলকে ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন শাহাদাত। পারভেজ ৭৩ রান করে আউট হয়েছেন। শাহাদাত অপরাজিত ছিলেন ১২২ বলে ১১৩ রানে। ৯টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। পারভেজের বিদায়ের পর শাহাদাতকে সঙ্গ দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। রানার দ্বিতীয় স্পেলে আরও ৩ উইকেট হারালে ভেঙে পড়ে পূর্বাঞ্চলের ব্যাটিং।

১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন এই দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার। ফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে রানার হাতে। শুধু তা–ই নয়, ফাইনালে ৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বোলারের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। ২ ম্যাচ খেলা রানার উইকেট ৭টি। নাসুম আহমেদ, নাঈম হাসান ও রেজাউর রহমানও ৭টি করে উইকেট নিয়েছেন। ২৩৬ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে মধ্যাঞ্চলের মাহিদুল ইসলাম। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও মাহিদুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
পূর্বাঞ্চল: ৫০ ওভারে ২৭৫/৬ (শাহাদাত ১১৩*, পারভেজ ৭৩, ইরফান ৩৬; রানা ৫/৫০)।
উত্তরাঞ্চল: ৪৩.৪ ওভারে ২৭৬/৬ (প্রিতম ৭৬, আকবর ৫৩*, তানজিদ ৪৩; নাসুম ২/৩৯)।
ফল: উত্তরাঞ্চল ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাহিদ রানা।