নেতিবাচক মানসিকতা থেকেই আট ব্যাটসম্যানের দল

বাংলাদেশ এশিয়া কাপে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। কিন্তু এখনো ধারাবাহিকতা খুঁজে পায়নি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে ও একাদশ নির্বাচনে। কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল তারই আরও একটি নমুনা। এত সুন্দর ব্যাটিং উইকেট, কিন্তু বাংলাদেশ কিনা খেলতে নামল আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে!

এখানেই আগের দিন শ্রীলঙ্কার ২৯১ রান ৩৭ ওভারেই প্রায় তাড়া করে ফেলেছিল আফগানিস্তান। উইকেট কতটা ভালো হলে তা সম্ভব, ভেবে দেখুন। সেখানে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছে ব্যাটসম্যানের বহর নিয়ে। দলের মানসিকতাটা যে নেতিবাচক, তা এখানেই বোঝা যায়। সেরা সাতজন ব্যাটসম্যান ৩০০ বল ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন না?

একজন অতিরিক্ত বোলার প্রয়োজন ছিল কি না, সে আলোচনা পরে। কিন্তু এত ভালো উইকেটে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার সিদ্ধান্তটাই বলে দেয়, ব্যাটসম্যানদের ওপর দলের আস্থার জায়গাটা বেশ নড়বড়ে। ব্যাটসম্যানদের সেই দায়টা নিতে হবে। তাঁদের পারফরম্যান্সও প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিচ্ছে। কারণ, আট ব্যাটসম্যান নিয়েও তো ৩৮.৪ ওভারে অলআউট! এরপর বোলাররা যতই চেষ্টা করুন, ম্যাচ তো প্রথম ইনিংসেই শেষ!

আরও পড়ুন

এটা দল সম্পর্কে খুব ভালো বার্তা দেয় না। ব্যাটিং নিয়ে দলের ভাবনাও আমাকে কৌতূহলী করে তুলছে। এই যেমন আফগানিস্তানের বিপক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ সেঞ্চুরি করলেও কাল তাঁকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নামতে দেখে অবাক হয়েছি। বুঝতে হবে, মিরাজকে নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটা জুয়া খেলা হয়েছে। আর তিনি প্রত্যাশার চেয়েও বহুগুণে ভালো খেলে তার প্রতিদান দিয়েছেন। কিন্তু একই পারফরম্যান্স প্রতিদিন প্রত্যাশা করা ঠিক হয়নি।

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, মিরাজকে কি নতুন বলে নিয়মিত ব্যাটিং করানো হয়? এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার আগে তিনি কি বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ছিলেন? তাহলে কি মূল ব্যাটসম্যানদের নতুন বল থেকে বাঁচাতেই মিরাজকে ওপরে খেলানো হচ্ছে? সেটাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে তো সেই পরিকল্পনাও মাঠে মারা গেল। মিরাজ দ্রুত আউট হওয়ায় প্রায় ওপেনিংয়েই তো লিটনকে আসতে হলো। আর তিনি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণ স্বচ্ছন্দেই খেলছিলেন।

আরও একবার ব্যর্থ নাঈম
ছবি: এএফপি

আমাকে খুব হতাশ করেছে নাঈমের ব্যাটিং। এমন উইকেটে আরও একটা সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলেন না। নাঈম এর মধ্যেই পাঁচ-সাতটা ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, কিন্তু প্রতিদান দিতে পারছেন কই? বুঝতে হবে কী ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে তিনি খেলছেন, চাইলেই এমন গতিময় বলে তিনি ক্রস ব্যাটে খেলতে পারেন না। পাকিস্তান বোলিং আক্রমণ তো কোনো স্কুল দলের বোলিং আক্রমণ নয়। তাওহিদ হৃদয়ও কাল হতাশ করেছেন। তাঁকে বুঝতে হবে, এটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নয়। কিছুটা সময় তিনি নিতেই পারেন।

টপ অর্ডারের ওই ধাক্কাটার পরও কিন্তু বাংলাদেশ লড়াই করেছে। ভালো রান রেটে ইনিংস টেনে নিতে দেখলাম সাকিব ও মুশফিককে। এতেই বোঝা যায়, উইকেট কতটা ভালো ছিল। কিন্তু সাকিবও অসময়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন, মুশফিক ক্রিজ ছেড়ে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে আউট হলেন। দুজনেরই আরও বেশি দায়িত্ব দেখানোর সুযোগ ছিল। দুই ফিনিশার আফিফ ও শামীম সম্পর্কেও তাই বলব। দুজনের জন্যই দারুণ এক সুযোগ ছিল, বাংলাদেশকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সে তাড়না তাঁদের মধ্যে দেখলাম না।

বাংলাদেশ দলের বোলাররা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন বলে মনে করেন গাজী আশরাফ হোসেন
ছবি: এএফপি

এমন উইকেটে ১৯৩ রান কখনোই যথেষ্ট নয়। তবু বাংলাদেশ দলের বোলাররা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে পেসাররা তাঁদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। শরীফুলের কথা আলাদা করে বলব, যথেষ্ট মুভমেন্ট আদায় করে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু রান রেটের চাপে না থাকায় আমাদের বোলারদের ঝুঁকি না নিয়ে খেলতে পেরেছে পাকিস্তান। যদি আরও কিছু রান থাকত, তাহলে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদেরও হয়তো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হতো।

কিন্তু ইমামদের মানসিকতাই ছিল ঝুঁকিহীন ক্রিকেট খেলা, তাঁরা সেটা সফলভাবে করেছেনও। এখন পর্যন্ত এই এশিয়া কাপে বোলিংয়েই বাংলাদেশ দল ধারাবাহিকভাবেই ভালো করে আসছে।

তবে তিনটি ম্যাচেই তাদের ডিফেন্ড করতে হয়েছে। কোনো ম্যাচে প্রথমে বোলিংয়ের সুযোগ পেলে তাসকিনরা কেমন করেন, সেটা দেখার কৌতূহল থাকল। তবে এটা ঠিক, প্রতিটি ম্যাচেই যে বোলিং মান বাঁচাবে, তা ভাবাও ঠিক হবে না। ব্যাটিংয়ের এই অধারাবাহিকতার অসুখ না সারলে এশিয়া কাপ তো বটেই, বিশ্বকাপে বড় কিছু আশা করা কঠিন।

আরও পড়ুন