সাকিবকে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে

কেমন হলো বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি? প্রশ্নটির কোনো সরাসরি উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। নিশ্চিত করে কিছু বলাও যাচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হলে হয়তো বলা যেত।

কারণ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটি মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটির দিকে সবাই তাকিয়ে ছিল। মানসিকভাবে দল কোন অবস্থায় আছে, সেটা দেখারও একটা সুযোগ হতো দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটিতে। সেটি না হওয়ায় আমরা এখন জানি না দল মানসিকভাবে কী অবস্থায় আছে।

তবে নিউজিল্যান্ডে আমরা যে সিরিজ খেলেছি, সেখানে মনে হয়েছে দল কিছুটা হলেও আস্থা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সব ম্যাচে ভালো রান করেছে। একটা ম্যাচ জিতেও যেতে পারত। সেখানে কিছুটা ইতিবাচকতা অবশ্যই আছে। আশা করি সেটা বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

আরও পড়ুন

আত্মবিশ্বাসী হওয়ার আরেকটা কারণও আছে। বাছাইপর্ব থেকে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ে এসেছে বাংলাদেশের গ্রুপে। যদিও দল দুটি ভালো ছন্দে আছে। কিন্তু ওদের অভিজ্ঞতা বেশি না হওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকবে। আমি দুটি দলকে ছোট করছি না। কিন্তু মনে হচ্ছে না জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস এতটা শক্তিশালী। সেটা মাথায় নিয়েই হয়তো কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলতে পারবে সাকিবরা।

বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে সাকিব আল হাসানকে
ছবি: এএফপি

তবে এটাও সত্যি, জিম্বাবুয়ে ও নেদারল্যান্ডস এখন তাদের সেরা ছন্দে আছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে যে ক্রিকেটটা তারা খেলল, সেটা এককথায় অসাধারণ। নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে যেহেতু সুপার টুয়েলভে এসে গেছে, এতে তাদের মূল লক্ষ্যটাও পূরণ হয়ে গেছে। তারা এখন খোলা মনে খেলতে পারবে। একটু নির্ভার থাকবে। যা তাদের আরও ভালো করার সুযোগ করে দেবে।

বাংলাদেশ কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো জায়গায় আছে। আমরা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে অনুশীলনের সুযোগ পাইনি। এখন আরেকটা ভেন্যুতে যাব, যেখানে আমরা এখনো অনুশীলন করিনি, ম্যাচও খেলিনি। এ বিষয়গুলো তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। সেদিক থেকে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েই হোবার্ট যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না।

নিউজিল্যান্ডে অবশ্য বাংলাদেশ দলের উন্নতির গ্রাফ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। সে ধারাবাহিকতা যদি বজায় রাখতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপেও দল ভালো করবে। তবে প্রথম ম্যাচটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের শুরুটাও। কারণ, চারিত্রিকভাবেই মানসিক শক্তির দিক থেকে আমরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকি। শুরুটা খারাপ হলে তাই সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন। সে জন্যই আমাদের শুরুটা ভালো হওয়া দরকার। সেটা যদি হয়, তাহলে আমরা ম্যাচে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারব। তাতে দলটাকেও অন্য রকম ছন্দে দেখা যাবে।

জয়ের জন্য বাংলাদেশের আউট অব দ্য বক্স কিছু করতে হবে
ছবি: এএফপি

আমাদের ওই একটাই বাধা, আমরা জিততে পারছি না। জয়ের জন্য আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। আউট অব দ্য বক্স কিছু করতে হবে। প্রতিপক্ষকে ভড়কে দিতে হবে। নিউজিল্যান্ডে সেটা করতে পারিনি। দলও গত ১৫-২০ দিন একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম। কে কোথায় খেলবে, কী পরিস্থিতিতে খেলবে, এটা নিয়ে এত দিন ব্যস্ত ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। এ কারণে হয়তো ম্যাচের জয়-পরাজয়ে মনোযোগটা খুব কম ছিল।

আরও পড়ুন

টুর্নামেন্টের আগে সাকিবকে বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্য দু-একজন পারফর্মিং ক্রিকেটার যারা আছে, তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা যেন স্নায়ুর চাপটা ধরে রাখতে পারি। অনেক উত্থান–পতন হবে। আলোচনা হবে। দলটাকে এসব থেকে আগলে রাখতে হবে।

নিজেদের শরীরী ভাষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশ সরাসরি সুপার টুয়েলভে অবশ্যই নিজেদের যোগ্যতাবলেই আছে। সেই আত্মবিশ্বাস যেন শরীরী ভাষায় ফুটে ওঠে। এটাও খেলার একটা কৌশল। খেলার মাঠে অবশ্যই ভালো খেলতে হবে। কিন্তু আচার–আচরণেও সেটা থাকতে হবে। দলের ভেতর যেন বিশ্বাসটা থাকে যে আমরা ভালো দল। অধিনায়ক ও ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই এটা নিয়ে কাজ করছে। কারণ, এটাই হয়তো দলকে হারের বৃত্ত থেকে বের করে জয়ের ছন্দে নিয়ে আসবে।