বাবরকে থামাবেন কে
ক্রিজে আসবেন, রান করবেন, ফিফটি বা সেঞ্চুরির পর ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরবেন! বাবর আজমের ক্রিজে নামা মানেই যেন এই দৃশ্যের অবতারণা। কথাটা যে মোটেই বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না, তা একটি পরিসংখ্যান দিলেই স্পষ্ট হবে।
বাবর সর্বশেষ ২১ ওয়ানডের ১৬টিতেই ফিফটি বা তার চেয়ে বেশি রান করেছেন। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ৫টি, ফিফটি ১১টি। উড়তে থাকা এই বাবরই হতে পারেন এশিয়া কাপে প্রতিপক্ষ বোলারদের মাথাব্যথার প্রধান কারণ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাঁচ দলের অধিনায়ককে হয়তো প্রশ্ন করা হবে—পাকিস্তান অধিনায়ককে থামাবেন কে?
এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তানের সর্বশেষ সিরিজ ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই সিরিজে প্রথম ম্যাচে কোনো রান না করেই আউট হলেও পরের দুই ম্যাচে ফিফটি পান বাবর। ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তান এর আগে সিরিজ খেলেছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ঘরের মাঠের সেই সিরিজের ৫ ম্যাচে ২ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরি পাকিস্তান অধিনায়কের।
এবারের এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে বাবরের চেনা কন্ডিশনে। প্রথম পর্বে ভারত ছাড়া সব কটি ম্যাচই পাকিস্তান খেলবে ঘরের মাঠে। আর সুপার ফোরে উঠলে শ্রীলঙ্কায় খেলতে হতে পারে, সে জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন বাবর। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে বড় অঙ্কের প্রস্তাবে রাজি না হলে তুলনামূলক কম টাকায় বাবর খেলেছেন লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে।
লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগেও দুর্দান্ত খেলেছেন বাবর। ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা কঠিন উইকেটে টুর্নামেন্টের একমাত্র সেঞ্চুরি এসেছিল বাবরের ব্যাট থেকেই। ৮ ম্যাচে ৩২.৬৮ গড়ে আর ১৩২.৪৮ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৬১ রান, যা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাবরের চেয়ে টুর্নামেন্টে ১৮ রান বেশি করেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এই অলরাউন্ডার অবশ্য ১ ম্যাচ বেশি খেলেছেন।
সর্বশেষ ২১ ইনিংসে বাবর যে কয়বার এক অঙ্কের ঘর পার হয়েছেন, প্রতিবারই বড় ইনিংস খেলেছেন। শুধু একবারই এর ব্যতিক্রম হয়েছে, সেটা চলতি বছরের এপ্রিলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ৪৯ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। আর শুধু ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ২১ ইনিংসে নয়, ওয়ানডে ক্রিকেটে বাবর সব সময়ই অপ্রতিরোধ্য। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম ১০০ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ড গড়েছিলেন বাবর।
প্রথম ১০০ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ডও পাকিস্তান অধিনায়কের। ১০০ ইনিংসে ৪৫ বারই ফিফটি বা তার চেয়ে বেশি রান করেছেন বাবর। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ১৮টি। ছাড়িয়ে গেছেন হাশিম আমলা, ভিভ রিচার্ডসদের। এ সময় বাবরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যাকে ধরা হয়, সেই বিরাট কোহলি এ রেকর্ডে বাবরের আশপাশেও নেই। সব মিলিয়ে বাবর ওয়ানডে ইনিংস খেলেছেন ১০১টি। সেখানে ৪৬ বারই ফিফটি বা তার চেয়ে বেশি রান করেছেন আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বরে থাকা এই ব্যাটসম্যান।
আর এবারের এশিয়া কাপও বাবরের জন্য বিশেষ এক টুর্নামেন্ট। একে তো ঘরের মাঠে খেলা, এর সঙ্গে এশিয়া কাপে এর আগে খুব একটা ভালো করতে পারেননি বাবর। সেটা হোক ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে হওয়া ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে ৫ ইনিংস ব্যাটিং করে ৩১.২০ গড়ে ১৫৬ রান করেছিলেন বাবর। অবশ্য ৫ বছর আগে বাবর তখনো আজকের বাবর হয়ে ওঠেননি। বাবরের কাছে পাকিস্তানি সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল সর্বশেষ এশিয়া কাপে। দুবাইয়ে হওয়া টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সেই এশিয়া কাপে ৬ ম্যাচে ১১.৩৩ গড়ে মাত্র ৬৮ রান করেছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। বাবরও তাই নিশ্চয়ই চাইবেন এবার সব হিসাব মিটিয়ে দিতে।
আর বাবর যদি সব হিসার মিটিয়ে দিতে শুরু করেন, প্রতিপক্ষ দলগুলোর অধিনায়কদের বিশেষ করেই ভাবতে হবে—বাবরকে থামাবেন কে?