ভারত ‘হাইব্রিড মডেল’ না মানলে বিশ্বকাপ বয়কট

পিসিবি চেয়ারম্যান নাজাম শেঠিফাইল ছবি: এএফপি

এশিয়া কাপ আয়োজনের স্বত্ব হারালে ভারতে এ বছর অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে পাকিস্তান। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এমন কথাই বলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি। তাঁর ভাষায়, এশিয়া কাপ আয়োজনের স্বত্ব হারালে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বয়কটের ‘খুবই বাস্তব সম্ভাবনা’ আছে পাকিস্তানের।

আরও পড়ুন

রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের জন্য ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না এক দশক হয়ে গেল। দুই দল সবশেষ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে ২০১২-১৩ মৌসুমে। এরপর নিরপেক্ষ ভেন্যুতে একাধিক দলের টুর্নামেন্ট ছাড়া দুই প্রতিবেশী কখনো ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হয়নি।

আগামী ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা এশিয়া কাপ, যার আয়োজক পাকিস্তান। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ভারত জানিয়ে দেয়, এশিয়া কাপে খেলতে তারা পাকিস্তানে যাবে না। পাকিস্তান এরপর বিকল্প প্রস্তাব দেয়, এশিয়া কাপে ভারত নিজেদের ম্যাচগুলো আরব আমিরাতে খেলুক, পিসিবির ভাষায় যা এশিয়া কাপের ‘হাইব্রিড মডেল।’

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) পিসিবির প্রস্তাবের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব এখনো দেয়নি। তবে পিসিবি চেয়ারম্যান শেঠির দাবি, এশিয়া কাপ পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক—এটাই চায় বিসিসিআই। সেটি হলে ভারতে অনুষ্ঠেয় দুটি টুর্নামেন্ট নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। এ বছর ৫ অক্টোবর থেকে ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু হবে। ২০২৫ সালে পাকিস্তানে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

ভারত যদি পিসিবির প্রস্তাব মেনে না নেয় আর সে কারণে পাকিস্তান যদি বিশ্বকাপে ভারতে দল না পাঠায়, তখন ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের অংশ নেওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

পিসিবি এর আগেও বলেছে, ভারত এশিয়া কাপ নিয়ে তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলেও ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দল পাঠাবে না পাকিস্তানও। রয়টার্সকে দেওয়া জুম সাক্ষাৎকারে সে কথাটাই আরও জোর দিয়ে বললেন পিসিবি প্রধান, ‘তারা (ভারত) সব ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে চায়। আমাদের জন্য বিষয়টা নিয়ে এগিয়ে যেতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বিসিসিআইয়ের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ভারতের এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়, যে কারণে আমাদের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ বয়কট করতে হয় এবং ভারতকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বয়কট করতে হয়। তাতে খুবই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

ওদিকে এশিয়া কাপের ম্যাচ আরব আমিরাতে খেলানোর প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। গরম ও অন্যান্য সমস্যা দেখিয়েছে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডই। আর তাতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) টুর্নামেন্টটা পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নিতে পারে, এমন ভাবনার পালে হাওয়া লেগেছে। শেঠি জানিয়েছেন, এমন কিছু ‘অগ্রহণযোগ্য’এবং তাতে বিশ্বকাপ বয়কট করতে পারে পাকিস্তান।

ভারত যদি এশিয়া কাপ নিয়ে পিসিবির ‘হাইব্রিড মডেল’ মেনে নেয়, তাহলে বিশ্বকাপেও পাকিস্তানকে একই মডেলে খেলানোর দাবি জানিয়েছেন নাজাম শেঠি, ‘ভারত দলের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদেরও দুশ্চিন্তা আছে। তাই পাকিস্তানকে ঢাকা, আরব আমিরাত কিংবা শ্রীলঙ্কায় খেলতে দেওয়া হোক। এখন এটাই সমাধান, যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের মাটিতে কিংবা বাইরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে রাজি হয়।’

পিসিবি চেয়ারম্যান চান, জটিলতা নিরসনে আইসিসি ভূমিকা রাখুক, ‘আইসিসির এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা উচিত। কিন্তু ভারতের সম্ভবত তা ভালো লাগবে না, বিশেষ করে এশিয়া কাপ নিয়ে।’ আইসিসিতে যোগাযোগ করে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি রয়টার্স।

আরও পড়ুন

ভারতের বাইরে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের প্রসঙ্গে বিসিসিআই সচিব জয় শাহর বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। তবে রয়টার্স জানিয়েছে, আইসিসি কিংবা বিসিসিআই ভারতের বাইরে বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন নিয়ে ভাবছে না। মানে এমন কোনো ভাবনাই তাদের নেই।

২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্রাত্য হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় বড় দলগুলো পাকিস্তান সফর বন্ধ রেখেছিল। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক করতে পেরেছে পাকিস্তান। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু দল পাকিস্তান সফর করেছে। তাই নিরাপত্তার কোনো সমস্যা দেখেন না শেঠি, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাকিস্তানে ফিরিয়ে এনেছি। গত কয়েক বছরে সবগুলো বড় দলই পাকিস্তান সফর করেছে। সবাই নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রশংসা করেছে। তাই এটা (নিরাপত্তা) আর সমস্যা নয়।’

পুরো বিষয়টাতে বিসিসিআইয়ের ‘গোয়ার্তুমি’–কে দুষেছেন শেঠি, ‘ভারত-পাকিস্তানই সবচেয়ে বড় ম্যাচ। এটা অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড কিংবা ভারত-অস্ট্রেলিয়ার চেয়েও বড়। গোয়ার্তুমি করে আমরা বিষয়টি জটিল করে ফেলেছি। ভারতের ব্রিজ দল পাকিস্তানে এসেছে, কাবাডি দল এসেছে, বেসবল দলও এসেছে। তাহলে সমস্যাটা কী? ভারতের ক্রিকেট দল কেন পাকিস্তানে আসে না!’