সিরিশ কাগজ আর মাস্টারমাইন্ড—অ্যাশেজ ঘিরে স্মিথ–পানেসারের পাল্টাপাল্টি
স্টিভেন স্মিথ এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার নিয়মিত অধিনায়ক নন, প্যাট কামিন্স নেই বলে পার্থে তাঁকে ‘জরুরি ভিত্তিতে’ নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে। আর সেই সূত্রে অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয়েছে স্মিথকে।
কী অদ্ভুত ব্যাপার, ‘ঠেকা’ কাজ সারতে এসে স্মিথ বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন এমন একজনের সঙ্গে, গত এক যুগ যিনি টেস্ট আঙিনায় নেই। তাঁদের তপ্ত বাগ্যুদ্ধে উঠে এল ‘সিরিশ কাগজ’, আর ‘মাস্টারমাইন্ডের’ মতো শব্দ, যা অতীতের ঘটনা না জানা থাকলে হেঁয়ালির মতো শোনাতে পারে।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড দুই দলের জন্যই অ্যাশেজ হলো মর্যাদার লড়াই, যা জেতার জন্য মনস্তাত্ত্বিক লড়াইও খেলার অংশ হয়ে ওঠে দুই দলের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা একে অপরের দুর্বল জায়গাগুলোকে লক্ষ্য করে আক্রমণের চেষ্টা চালিয়ে যান অবিরত।
তেমনই এক আক্রমণের অংশ হিসেবেই গত সপ্তাহে একটি বেটিং কোম্পানিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্মিথের ‘সিরিশ কাগজ কেলেঙ্কারি’ সামনে নিয়ে আসেন পানেসার। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ক্যামেরন ব্যাকক্রফট বলে সিরিশ কাগজ ঘষে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এ ঘটনায় স্মিথের অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, দেওয়া হয় ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছরের নিষেধাজ্ঞাও।
সেই স্মিথ এবার অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে অধিনায়কত্ব করতে চলেছেন জানার পর পানেসার ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের উদ্দেশে বলেন, তাঁরা যেন তাঁর (স্মিথের) নেতৃত্বের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পাশাপাশি ব্রিটিশ মিডিয়াকেও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
গতকাল স্মিথের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রস্তুত হয়েই এসেছেন এমন ভঙ্গিমায় তিনি ‘অফ টপিক’ উত্তর দেবেন বলে জানান। এরপর সাংবাদিকদের উদ্দেশে স্মিথ বলেন, ‘এই রুমে এমন কে আছেন যিনি মাস্টারমাইন্ড দেখেছেন, তাতে মন্টি পানেসারকে দেখেছেন? দেখেছেন কেউ?’
২০১৯ সালে বিবিসি টিভির ‘সেলিব্রিটি মাস্টারমাইন্ড’ অনুষ্ঠানে জন হামফ্রেসের সহজ কিছু প্রশ্নে বোকার মতো উত্তর দিয়েছিলেন পানেসার। সেই প্রসঙ্গ টেনে খোঁচার সুরে স্মিথ বলেন, ‘আপনারা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা বুঝবেন আমি কী বলতে চাইছি। যদি না দেখে থাকেন, দেখবেন। বেশ হাস্যকর। যে বিশ্বাস করে যে এথেন্স জার্মানিতে, অথবা অলিভার টুইস্ট বছরের একটি ঋতু এবং আমেরিকা একটি শহর। তাঁর মন্তব্য আমি আমলে নিই না। আমি এ বিষয়ে এটুকুই বলব।’
স্মিথের এই খোঁচা নিয়ে দুই দেশের গণমাধ্যমেই সংবাদ হয়। অ্যাশেজ শুরুর আগে ইংল্যান্ডের জন্য যা অস্বস্তিকরই। এরপর পাল্টা জবাব দেন পানেসার। ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৫০টি টেস্ট এই বাঁহাতি স্পিনার রেডিও ৫ লাইভকে বলেন, ‘আমার ইংল্যান্ডের হয়ে কিছু দুর্দান্ত মুহূর্ত আছে, আবার খারাপও আছে। তাঁরও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কিছু দুর্দান্ত মুহূর্ত আছে এবং স্পষ্টতই দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর একটি খুব বড় খারাপ মুহূর্তও আছে। আমরা দুজনই ভুল করেছি। তবে আমি আমারটা করেছি একটি কুইজ শোতে, তিনি তারটা করেছেন একটি ক্রিকেট মাঠে।’
২০০৯ অ্যাশেজজয়ী পানেসার মনে করেন, কথার এই লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার খারাপই হচ্ছে, ‘আমার ভালো লাগছে যে টেস্ট ম্যাচের আগের রাতে তিনি আমার মাস্টারমাইন্ড ক্লিপগুলো দেখেছেন এবং প্রশ্ন ও উত্তরগুলো মুখস্থ করেছেন। মনে হচ্ছে ইংল্যান্ড এরই মধ্যে তাঁর মাথায় ঢুকে আছে আর আমি আমার সোফায় বসে অস্ট্রেলিয়ানদের নাড়িয়ে দিতে পেরেছি।’
পানেসারের মনে হচ্ছে সিরিশ কাগজ ও মাস্টারমাইন্ডের বিতর্কের জেরে এখন স্মিথের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, ‘এখন তো ইংল্যান্ডের জন্য তাঁকে আক্রমণ করার, মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলার সুযোগ এসে গেছে, হয়তো এ কারণেই সে তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাবে।’
স্মিথের ওপর পানেসারের সঙ্গে বিতর্কের প্রভাব কতটা পড়বে, সেটি বোঝা যাবে খেলা শুরুর পরই। পার্থে আজই শুরু হচ্ছে দুই দলের পাঁচ টেস্টের লড়াই।