ভালো–মন্দের এশিয়া কাপে কিছু কি পেল বাংলাদেশ

এবারের এশিয়া কাপে সম্ভাবনা জাগিয়েও ফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশএসিসি

স্বপ্নের ফানুস উড়িয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের এশিয়া কাপ। গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সুপার ফোরেও প্রথম ম্যাচে জয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে রেখেছিল তাদের, যেটি টিকে ছিল পরশু পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচ পর্যন্তও।

কিন্তু দুবাইয়ে চরম ব্যাটিং–ব্যর্থতার কারণে পাকিস্তানের ১৩৫ রানও টপকানো যায়নি। এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ দল এখন আমিরাতেই আফগানিস্তান সিরিজ খেলার অপেক্ষায়। তার আগে দেখা যাক, জয়–পরাজয় ছাড়া এবারের এশিয়া কাপ আর কী বাস্তবতা সামনে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের—

কবে আলো ছড়াবেন তাঁরা

বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে স্বস্তির জায়গা ছিল পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসানের উদ্বোধনী জুটি। অথচ পুরো টুর্নামেন্টে তাঁরা জুটি বেঁধে ইনিংস উদ্বোধন করতে পেরেছেন মাত্র দুবার। সুযোগ পেয়ে সাইফ হাসানের ভালো করে ফেলা তার একটা কারণ ঠিকই, কিন্তু পারভেজ-তানজিদের ব্যর্থতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।

শ্রীলঙ্কার দুষ্মন্ত চামিরা, ভারতের যশপ্রীত বুমরা, পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদিদের সামনে পারভেজ হোসেন ছিলেন রীতিমতো অসহায়। শুধু যে রান করতে পারেননি, তা–ই নয়; ওপেনার হয়েও পেসারদের বল যেন তিনি চোখেই দেখেননি! তাঁর অসহায় চাহনি ডাগআউটে বসে থাকা ব্যাটসম্যানদের মনেও হয়তো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

একটি ইনিংসেই ফিফটি করতে পেরেছেন তানজিদ হাসান, গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে
এসিসি

তাঁর সঙ্গী তানজিদ হাসান এক ম্যাচে ফিফটি করলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫২ রানের ইনিংস খেলা তানজিদ বাকি ৪ ম্যাচে করেছেন ১৫ রান। বড় টুর্নামেন্টে তাঁর ব্যর্থ হওয়ার গল্পটা অবশ্য নতুন নয়। দুই বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেই বহুজাতিক টুর্নামেন্টে ২৫ ম্যাচ খেলে ফেলা তানজিদ ২ ফিফটিতে ১৪ গড়ে করেছেন মাত্র ২৫০ রান।

নতুন দিনের স্বপ্ন দেখানো তানজিদ-পারভেজের ওপেনিং জুটি নিয়ে তাই প্রশ্নটা উঠতেই পারে—কবে বড় মঞ্চে ভালো খেলবেন তাঁরা?

এই মিডল অর্ডারে কত দূর


টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আসলে কারা, সেটিই আসলে প্রশ্ন। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে চারে পাঠানো মেহেদী হাসানের টি-টোয়েন্টিতে গড় ১১.৬৯ আর স্ট্রাইক রেট এক শর একটু বেশি। পাঁচে আসা নুরুল হাসানের ব্যাটিংয়ের হাঁসফাঁসও ছিল দৃষ্টিকটু। দুজনের কেউই অবশ্য একাদশে নিয়মিত নন।

মিডল অর্ডারে কেউ নিয়মিত হলে তিনি তাওহিদ হৃদয়। কিন্তু তাঁর ব্যাটে ধারাবাহিকতার বড়ই অভাব। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। টুর্নামেন্টে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও। কিন্তু হৃদয়ের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘পরিংখ্যান একটা আস্ত গাধা’ বলা ছাড়া উপায় নেই।

তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গেছে
এএফপি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ করা হৃদয় নিজেকে নতুন করে গড়তে না পারায় বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে সংকট আরও গভীর হয়েছে। প্রধান কোচ ফিল সিমন্স চাইলে বলতেই পারেন—এই মিডল অর্ডার লইয়া আমি কী করিব!

কোথায় হারাল জাকেরের পাওয়ার

তাওহিদ হৃদয়ের মতো জাকেরেরও একই সমস্যা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শুরুর দিকে আশা জাগালেও যত দিন যাচ্ছে, তাঁর ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা ততই বেরিয়ে আসছে। সেই দুর্বলতা বুঝে প্রতিপক্ষের বোলাররা তাঁকে ক্রমাগত অফ স্টাম্পের বাইরে বল করছেন, জাকেরের অসহায়ত্বও স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাতে।

চোটে পড়া লিটন দাসের অনুপস্থিতিতে শেষ দুই ম্যাচে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন জাকের। নামের পাশে তাঁর ‘ফিনিশার’ আর ‘পাওয়ার হিটারের’ তকমা। অথচ এশিয়া কাপের ৬ ম্যাচে ৬৬ বল খেলে একটি ছক্কাও মারতে পারেননি! যেমন ছক্কা মারতে পারেননি সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও।

জাকের অবশ্য বলেছেন, ছক্কা মারার চেয়েও দলের জন্য রান করার চিন্তাটাই নাকি তাঁদের বেশি। কিন্তু সেটিই–বা পারলেন কই! এশিয়া কাপের ৬ ম্যাচে ৭১ রান করা জাকের ব্যাট করেছেন ১০৭.৫৭ স্ট্রাইক রেটে!

জাকের আলীর জন্য পুরো এশিয়া কাপ ছিল হতাশার
এসিসি

বোলিংই ভরসা

কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের শক্তির জায়গা হয়ে উঠেছে বোলিং। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টুর্নামেন্টজুড়েই বোলারদের পারফরম্যান্স চোখে পড়ার মতো। তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমানের পেসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সময়মতো হাত ঘোরাতে এগিয়ে এসেছেন নাসুম আহমেদ-মেহেদী হাসানরাও।

টুর্নামেন্টে সেই বাংলাদেশই

টুর্নামেন্টে শুধু ম্যাচ জিতলেই চলে না, সুযোগ বুঝে নেট রান রেট বাড়িয়ে নিয়ে বিপদের সঞ্চয় হাতে রাখতে হয়। ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলের সঙ্গে প্রয়োজন ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনা করে খেলার শক্তি। কিন্তু টুর্নামেন্টে ভালো করার সামর্থ্য যে বাংলাদেশ এখনো অর্জন করতে পারেনি, সেটা দেখা গেছে এবার আমিরাতেও। ফাইনালের সুবাসটাই তাই শুধু তারা নিতে পেরেছে।

প্রাপ্তি শুধু সাইফ হাসান

সাইফ হাসান সহজাত ছক্কা মারার সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন
এএফপি

এশিয়া কাপে এবার বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? এককথায় বললে সাইফ হাসান। কথাটা প্রধান কোচ ফিল সিমন্সেরও। শুধু রান করেছেন বলেই নয়, সহজাত ছক্কা মারার সামর্থ্যের প্রমাণও দিয়েছেন সাইফ। তাঁর ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের ভয় ধরিয়ে দেওয়ার উপকরণ খুঁজে পাওয়া গেছে এশিয়া কাপে।

প্রয়োজনের সময় দুই-চার ওভার বোলিংও করেছেন সাইফ। চার ম্যাচে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে ১৭৮ রান করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন তিনি।

আরও পড়ুন