সিরিজ জয়, নাকি ২০ বছর আগের দুঃস্মৃতি
দিনটা ছিল বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলের জন্যই বিশ্রামের। তবু দুই দলেরই কয়েকজন করে ক্রিকেটার কাল গেছেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। যদিও চট্টগ্রামে ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু টি-টোয়েন্টি সিরিজের অনুশীলনই করেছেন বেশির ভাগ ক্রিকেটার। তবে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে আজ ১–১ সমতায় থাকা ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে দুই দলই নামবে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে।
২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে অন্তত সেরা নয়ে না থাকলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। এই সিরিজের আগে ৯–এ থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেনে নামানোর সব পরিকল্পনাই তাই করে রেখেছিল ১০–এ থাকা দলটি। ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা নিয়ে সিরিজের জন্য বানানো হলো কালো মাটির স্পিন সহায়ক উইকেট। রিশাদ হোসেনের ৬ উইকেটে প্রথম ওয়ানডে জিতে তার সুফলও পেয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেটা এলোমেলো করে দিয়েছে সব। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও ম্যাচটা হেরে যাওয়ায় এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলাদেশ। সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে যাওয়ায় আজ মিরপুরে তৃতীয় ওয়ানডেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সিরিজ নির্ধারণী। ওই হার শেষ করে দিয়েছে র্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগও। আজ শেষ ম্যাচটা জিতলেও তাই বাংলাদেশ পেছনে ফেলতে পারবে না ক্যারিবীয়দের।
হতাশাটা আরও বাড়বে হেরে গেলে। সিরিজ তো তখন হারতে হবেই, বাংলাদেশকে মুখোমুখি হতে হবে বাজে এক অভিজ্ঞতারও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজ হারলে তা হবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের টানা পঞ্চম ওয়ানডে সিরিজ হার। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর কখনোই টানা পাঁচটি সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের শুরু থেকেই সমালোচনা আর বিতর্ক পিছু নিয়েছে বাংলাদেশের। কালো মাটির উইকেট দিয়ে যার শুরু। দ্বিতীয় ওয়ানডেটা জিততে জিততেও টাই করা এবং সুপার ওভারের পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং বাংলাদেশ দলকে বিদ্ধ করছে সমালোচনার তির। অধিনায়ক হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ তো কাঠগড়ায় উঠছেনই, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে টিম ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েও।
প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানের বড় হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজতে শুরু করে। দ্বিতীয় ম্যাচের আগের রাতে ঢাকায় আসা আকিল হোসেনকে দলে নিয়ে সফরকারীরা গড়ে ফেলে একটি রেকর্ডও। ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসেই প্রথমবারের মতো ইনিংসের পুরো ৫০ ওভার করেন স্পিনাররা। ক্যারিবীয়দের সেই কৌশল শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছে।
কালো মাটির উইকেট বানিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের ফাঁদেই পড়ে গেল কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন। পরশু রাতে ম্যাচ শেষে সৌম্য সরকারের কথা শুনেও সেরকমই মনে হয়েছে, ‘এই উইকেটে শট খেলা অনেক কঠিন। আপনারা নিজেরাও তো দেখেছেন বাউন্ডারি অনেক কম হয়েছে।’
উইকেটের আচরণ আজও বদলানোর সম্ভাবনা নেই। স্পিনের জালেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। অবশ্য সেটি অজানা নয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তৃতীয় ওয়ানডেতে কেমন উইকেট আশা করেন, পরশু রাতে এমন প্রশ্নে মুখে চওড়া হাসি নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের কাছ আকিল হোসেনের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘আপনার মনে হয় উইকেট বদলাবে?’
উইকেটের সৌজন্যে হলেও সিরিজ জেতাটাই এখন বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির একমাত্র উপলক্ষ হতে পারে। আর হেরে গেলে সমালোচনার আগুন আরও গনগনে হবে সন্দেহ নেই। র্যাঙ্কিংয়ের সিঁড়ি বাওয়া তো হলোই না, টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ হার বাংলাদেশকে তখন ‘উপহার’ দেবে নতুন জ্বালা।