১৫৪ রানে ২ উইকেট থেকে ১৯১ রানে অলআউট—আজ আহমেদাবাদে ভারতের বিপক্ষে উত্তাপের ম্যাচে এভাবেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের ব্যাটিং–লাইন। ৩৬ রানের মধ্যে পাকিস্তান হারিয়েছে শেষ ৮ উইকেট। আসা–যাওয়ার এই প্রদর্শনীতে পাকিস্তান লড়াইয়ের পুঁজিটুকুও পায়নি। পাকিস্তানের এমন হতশ্রী ব্যাটিং মানতে পারছেন না দলটির সাবেক ক্রিকেটাররা।
কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, বাবর–রিজওয়ানদের ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানিরা হতাশ হয়েছেন। আর শোয়েব মালিক সমালোচনা করেছেন ব্যাটসম্যানদের পায়ের ব্যবহার নিয়ে। তিনি বলেছেন, মনে হয়েছে ব্যাটসম্যানরা পা ব্যবহার করলে এফবিআর (পাকিস্তানের কর বিভাগ) থেকে নোটিশ পাঠানো হবে।
এক টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা উইকেট বুঝে খেলেননি মন্তব্য করে ‘সুলতান অব সুইং’খ্যাত আকরাম বলেছেন, ‘শুরুটা ভালোই হয়েছিল। ইমাম–উল হক থিতু হয়ে আউট হলো। উইকেট পড়তে পারা খুব জরুরি ছিল। এটা এমন উইকেট ছিল না, যেখানে নির্দ্বিধায় শট খেলা যায়। বোঝা উচিত ছিল, উইকেট পড়লে চাপ আমাদের ওপর চলে আসবে। আমার মনে হয় শুরুটা ভালোই হয়েছিল, অধিনায়কও ফিফটি করেছিল। এরপর রিভার্স সুইং ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেল। বুমরার দারুণ একটি স্লোয়ারে রিজওয়ান আউট হয়ে গেল। সে শাদাবকে যে বলে আউট করল, সেটা অবশ্য খেলার মতো ছিল না। ভারতীয়দের তাদের বোলারদের নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত। আমি বুঝতে পারছি, পাকিস্তানিরা বেশ হতাশ।’
ভালো শুরুর পর বাবর–রিজওয়ানের ইনিংস লম্বা করা উচিত ছিল মন্তব্য করে সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ–উল–হক বলেছেন, ‘শুরুর চাপ কাটানো যেকোনো ব্যাটসম্যানের উচিত ইনিংসটা লম্বা করা। এমন হয় না যে আপনি ২০, ৩০ রান করে আউট হয়ে যাবেন আর পরের ব্যাটসম্যানরা আরামে রান করবে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো পাকিস্তানের ব্যাটিং–লাইনকে শেষ করে দিয়েছে। আপনি ৪০–৫০ রানের জুটিটা যদি আপনি এক শতে নিয়ে যেতে পারেন, তাহলেই দাপট দেখাতে পারবেন।’
চাপের ম্যাচে ভালো শুরুর পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারা সবচেয়ে বেশি পোড়াচ্ছে মিসবাহকে, ‘সবচেয়ে হতাশাজানক হচ্ছে চাপের ম্যাচে শুরুতে ভালো করেও নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারা। অথচ ম্যাচে এমন পরিস্থিতি এসেছিল, যখন ম্যাচটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া উচিত ছিল। ২ উইকেটে ১৫৪ রান এবং আপনার দুই প্রধান ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হওয়ার পর একটু ভালো খেললেও ৩০০ রান হয়ে যায়। সন্দেহ নেই, উইকেট এরপর কঠিন হয়েছে। কিন্তু অন্তত ২৮০–২৯০ রান হতে পারত। কিন্তু আমরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছি।’
সাবেক অলরাউন্ডার শোয়েব মালিকের মনে হয়েছে ব্যাটসম্যানরা কন্ডিশন বুঝে ব্যাটিং করতে পারেননি, ‘কন্ডিশনকে বুঝতে পারা খুব জরুরি। আপনার ফিফটি হলো। কিন্তু সেটা যখন ১০০ বা ৭০–৮০–এর দিকে যাবে, তখন কন্ডিশন বদলাবে। ব্যাটসম্যান হিসেবে সেটা বুঝে খেলতে পারাও জরুরি। ৩৫০ রান করতেই হবে, এটা জরুরি নয়। উইকেট যখন স্লো আর লো মনে হবে, তখন ২৭০–৮০ বা ৩০০ রান করতে পারাটাও ভালো কিছু।’
পাকিস্তানের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের ফুটওয়ার্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক উইকেটরক্ষক–ব্যাটসম্যান মঈন খান বলেছেন, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের ফুটওয়ার্ক দেখা যায়নি। ক্রিজের মধ্যে থেকে খেলে ফাঁসছিল। আর ভারতের বোলাররা উইকেট লক্ষ্য করে বল করেছে। তারা জানত, মিস করলেই উইকেট পাওয়া যাবে। ব্যাটসম্যানদের উচিত ছিল প্রতি–আক্রমণ করা। তারা সেটা করতে পারেনি। তারা দুই এক পা সামনে এগিয়ে দাঁড়াতে পারত, সেটা করেনি।’
এরপর শোয়েব মালিক যোগ করেলেন, ‘একজনও পা ব্যবহার করে খেলল না। স্পিনারদেরও খেলল জায়গায় দাঁড়িয়ে। মনে হচ্ছিল, পা ব্যবহার করে খেললে এফবিআর থেকে তাদের নোটিশ পাঠানো হবে।’