শেন ওয়ার্ন ও একটি পুকুরের গল্প

গত মার্চে মারা গেছেন শেন ওয়ার্নছবি: রয়টার্স

তাঁর পুরো জীবনটাই যেন গল্প!

কী ছিল না শেন ওয়ার্নের ৫২ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবনে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের উপকণ্ঠ ফার্নট্রি গালি থেকে উঠে আসা সোনালি চুলের এক ক্রিকেটার লেগ স্পিন জাদুতে বিবশ করেছিলেন পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। মাঠের বাইরেও কম ঝলমলে ছিল না তাঁর জীবন। বিতর্কের রসদ জোগাতেও জুড়ি মেলা ভার ছিল ওয়ার্নের।

৭০৮ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করা সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার গত মার্চে হঠাৎই চলে গেলেন পৃথিবী ছেড়ে। থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপে অবকাশ কাটাতে গিয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১৪৫টি টেস্ট ও ১৯৪টি ওয়ানডে খেলা ওয়ার্ন।

পাঁচ মাসের বেশি হয়ে গেছে ওয়ার্নবিহীন পৃথিবীর বয়স। তবু তাঁকে ঘিরে গল্পগাথার কমতি নেই। সর্বশেষ আজই যেমন ওয়ার্নের জীবনের অজানা এক গল্প জানলেন ভক্তরা।

১৪৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৭০৮টি উইকেট নিয়েছেন ওয়ার্ন
ছবি: রয়টার্স

গল্পটা সেই সময়ের, যখন শেন ওয়ার্ন বললেই মস্তিষ্কে সোনালি চুলের এক মানুষের ছবি ভেসে উঠত না। ১৯৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট অঙ্গনের বাইরে আর কজনই–বা চিনতেন তাঁকে।

সেই বছর ছয় মাসের জন্য ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট ক্লাবে খেলতে গিয়েছিলেন ওয়ার্ন। নতুন গল্পটা ৩৩ বছর আগের সেই সময়েরই। এমন এক গল্প যেখানে ওয়ার্ন পুকুর কাটতে সাহায্য করেছিলেন ব্রিস্টলের এক গৃহস্থকে। এত বছর পর সেই গৃহস্বামী দুনিয়াকে জানালেন অজানা সেই গল্প। পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে চিঠি লিখেই ওয়ার্নের স্মৃতিচারণা করেছেন নাইজেল বেভান নামের সেই ব্যক্তি। লিখেছেন এখন থেকে ‘শেন ওয়ার্ন মেমোরিয়াল পন্ড’ হিসেবে পরিচিত হবে পুকুরটি। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সমর্থকগোষ্ঠী বার্মি আর্মির সেই চিঠির ছবি নিজেদের টুইটারে টুইট করেছে।

সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন
ফাইল ছবি

নাইজেল বেভানের বাড়িটার অবস্থান ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট ক্লাব মাঠের ঠিক পাশেই। তাই ক্লাবে খেলতে আসা সদ্য কৈশোর পেরোনো ওয়ার্নকে শুরু থেকেই চিনতেন বেভানরা। চিঠির শুরুতে সেই সময়ে ওয়ার্ন কতটা কষ্ট করেছেন, সেটি তুলে এনেছেন বেভান, ‘ব্রিস্টলের ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট ক্লাবে খেলত ওয়ার্ন। ১৮ বছর বয়সী ওয়ার্ন রাতে ঘুমাত ক্লাবের প্যাভিলিয়নে। গ্রাউন্ডসম্যানের কাজও করত সে।’

ওয়ার্ন কীভাবে পুকুর কাটতে সাহায্য করেছেন, সেই বর্ণনা এরপরই দিয়েছেন বেভান, ‘একদিন মাঠের সীমানা ঠিক আছে কি না, সেটি পরীক্ষা করতে করতে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সে। হঠাৎ তার চোখে পড়ল আমার স্ত্রী বাগানে নতুন এক পুকুর খুঁড়ছে। আমি কী সাহায্য করতে পারি, বলেই বেড়া ডিঙিয়ে এ পাশে চলে আসে। এরপর পুরোপুরি খনন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সারাটা দিনই সে তাকে (বেভানের স্ত্রী) সাহায্য করেছে।’

বেভান লিখেছেন, সাহায্য করতে গিয়ে ক্রিকেট নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথাও ওয়ার্ন তাঁর স্ত্রীকে জানিয়েছেন সে সময়ে, ‘সে তাকে জানায় একদিন সে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার আশা করে। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের বাগানের পুকুরটার নাম শেষ ওয়ার্ন মেমোরিয়াল পন্ড রাখার।’

বার্মি আর্মির সেই টুইট দেখে আবেগ সামলাতে পারেননি ওয়ার্ন–ভক্তরা। একজন লিখেছেন, ‘এখনো বিশ্বাস হয় না তিনি নেই। তাঁকে ছাড়া পৃথিবীটা আরেকটু দীনহীন হয়েছে।’

ওয়ার্নের জীবনের অজানা এক গল্প জানানোর জন্য বেভানকে ধন্যবাদ দিয়েছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন