রিশাদ আসলে কতটা ভালো, কতটা খারাপ

রিশাদ হোসেনপ্রথম আলো

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সময়টা রিশাদ হোসেনের। যেখানেই হাত দিচ্ছেন, সেখানেই ফলছে সোনা। টি-টোয়েন্টিতে তাঁকে জাতীয় দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার বললেও হয়তো ভুল হবে না।

ফরচুন বরিশালকে বিপিএলে শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলা এই অলরাউন্ডার এখন পিএসএলের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও। গত এক-দেড় বছর রিশাদের এই উত্থানের সময়ে তিনি আসলে কতটা ভালো করেছেন? পরিসংখ্যান কী বলছে?

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভালো না খারাপ, সেটা বিচারের দুটো মানদণ্ড আছে—বিশ্বমান ও দেশি মান। রিশাদকে তাই নতুন করে বিচারের প্রশ্ন এই কারণেই উঠছে। এই লেগ স্পিনার আসলে কোন মানের?

২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৮ জন স্পিনার ৫০ বা এর চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন। রিশাদ তাঁদের মধ্যে একজন। তাঁর উইকেট ৬০টি। সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ৯৬টি। শুধু স্পিনার নয়, এ সময় পেসারদের উইকেটসংখ্যা বিবেচনায়ও হাসারাঙ্গার উইকেট সবচেয়ে বেশি।

৬০
২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রিশাদের টি–টোয়েন্টি উইকেটের সংখ্যা

৬০ উইকেট নেওয়ার পথে রিশাদ ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ৭.৯২ করে। কমপক্ষে ৫০ উইকেট নেওয়া স্পিনারদের মধ্যে রিশাদের চেয়ে বেশি ইকোনমি রেটে রান দিয়েছেন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার তাব্রেইজ শামসি ও ভারতের রবি বিষ্ণয়। হাসারাঙ্গা থেকে শুরু করে নূর আহমদ, রশিদ খানরা সবাই রিশাদের চেয়ে ওভারপ্রতি কম রান খরচ করেছেন।

আরও পড়ুন

রিশাদ অবশ্য একটি জায়গায় অনেকের চেয়ে এগিয়ে। সেটি ব্যাটিংয়ে। এই ১৮ জন স্পিনারের মধ্যে ৬ জন রিশাদের চেয়ে বেশি রান করেছেন (২৩২ রান)। মাত্র ৪ জন বেশি ছক্কা মেরেছেন, আর শুধু দুজন—রশিদ খান ও সুনীল নারিন—তাঁর চেয়ে দ্রুতগতিতে রান তুলেছেন। রিশাদ এ সময়ে রান করেছেন প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংসে ৭টি ছক্কা মারেন রিশাদ হোসেন
শামসুল হক

টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে রিশাদের বাড়তি কদর আছে। রিশাদ মাত্র চারজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের একজন, যিনি ১৫০ বা তার বেশি রান ১৩০–এর বেশি স্ট্রাইক রেটে করেছেন।

ব্যাট হাতে কী পারেন, সেটি তো শ্রীলঙ্কা গত বছর দেখে গেছে। গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের একটি ম্যাচে ৩০ বলে ৫৩ রান করার পথে ৭টি ছক্কা মারেন রিশাদ। এরপর ওয়ানডে সিরিজের একটি ম্যাচে করেন অপরাজিত ১৮ বলে ৪৮ রান।

ছক্কা মারার সামর্থ্যের সঙ্গে তাঁর ফিল্ডিংও দুর্দান্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের ‘হট স্পট’ মিডউইকেট, লং অন, লং অফের দিকে তাকালেই দেখবেন, সেখানে দীর্ঘদেহী রিশাদ দাঁড়িয়ে।

গত বিপিএলে ১১ ম্যাচে রিশাদ বোলিং করেছেন মাত্র ২৬ ওভার
ফরচুন বরিশাল

যদিও এত কিছুর পর বিপিএলে নিয়মিত খেলতে পারেননি রিশাদ। গত বিপিএলে ১১ ম্যাচে বোলিং করেছেন মাত্র ২৬ ওভার। বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়েই ভূমিকা রেখেছেন বেশি। ব্যাটিং করেন ১৯৪ স্ট্রাইক রেটে। ফাইনালে খেলেছেন ৬ বলে ১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস, যে ইনিংসের সুবাদেই চ্যাম্পিয়ন হয় বরিশাল।

রিশাদ পিএসএলেও প্রথম ম্যাচে সুযোগ পাননি। পরের দুই ম্যাচে লাহোর কালান্দার্সের একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। টানা দুই ম্যাচে ৩টি করে উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়েছেন। যখনই সুযোগ পান রিশাদ সাহস নিয়েই খেলেন। সাহসী হলে ঝুঁকিও থাকে। রান বিলাতে পারেন, প্রথম বলে বোল্ডও হতে পারেন। তাহলে রিশাদের সেরাটা পেতে কী প্রয়োজন? দল ও টিম ম্যানেজমেন্টকেও সাহসী হতে হবে।

আরও পড়ুন