রান–উৎসবে রেকর্ডের পর রেকর্ড এবারের আইপিএলে

হাইনরিখ ক্লাসেন চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিয়েছেনএএফপি

আইপিএলে এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ৩৪টি। যে ম্যাচগুলোর গল্পের প্রধান অংশ হচ্ছে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আর ছক্কা হাঁকানো। আইপিএলের প্রতি মৌসুমেই রান তোলার গতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে থাকে, তবে এবারের আইপিএলে যা হচ্ছে সেটা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। এখন পর্যন্ত এবারের আসরে ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৯.৪২ রান করে, যা আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ তিনটি দলীয় স্কোর এসেছে এ বছর, সর্বোচ্চ পাঁচটির মধ্যে চারটিই এ বছর এসেছে। আইপিএল এবার ৫০০ ছক্কাও দেখেছে রেকর্ড সময়ে। এবারের আইপিএলে যে কতটা ছক্কা উৎসব হচ্ছে, সেটা প্রমাণে আরও কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে ইএসপিএন ক্রিকইনফোর সৌজন্যে। তুলনার স্বার্থে ৩৪ ম্যাচ শেষে সর্বশেষ কয়েকটি মৌসুমের পরিসংখ্যানও এখানে তুলে ধরা হচ্ছে—

রানের মহাপ্লাবন

এই মৌসুমে রান উঠেছে ওভারপ্রতি ৯.৪২ রান করে, যা ৩৪ ম্যাচ শেষে ওভারপ্রতি রান তোলার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০২৩ সালের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। যেটা আপাতদৃষ্টে খুব বেশি মনে হচ্ছে না। তবে ৩৪ ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান উঠেছিল ২০২৩ সালে—৮.৮১ ওভারপ্রতি, যা ২০২০ সালে ওভারপ্রতি ৮.৫৪ রানের চেয়ে ৩.১ শতাংশ বেশি।

প্রথম আলো

২০২৪ ও ২০২৩ সালে ওভারপ্রতি রান তোলার পার্থক্য ০.৬১, যা ২০০৯-১০ মৌসুমের পর আগের বছরের তুলনায় ওভারপ্রতি রান ওঠায় সর্বোচ্চ। ২০১০ সালে ওভারপ্রতি রান উঠেছিল ৮.৪১, যেখানে ২০০৯ সালে ৭.৬২। তবে ২০০৯ সালে আইপিএল হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, তাই সেই আইপিএলের কন্ডিশন পুরোপুরিই ভিন্ন ছিল।

চার-ছক্কার বন্যা
এবারের মৌসুমে চার ও ছক্কা তুলনামূলকভাবে বেশি হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় মূল পার্থক্য ধরা পড়েছে ছক্কার হিসেবে। এবারের আইপিএলে প্রতি ১৩.৪৮ বল পরপরই ছক্কা হয়েছে, যা ২০১৮ সালে (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) ১৫.২৪ বল পর ছক্কার তুলনায় ১১.৬ শতাংশ বেশি। বলপ্রতি বাউন্ডারির হিসাবে (চার ও ছক্কা) এবারের আইপিএল ২০১৮ সালের তুলনায় ৭.১ শতাংশ বেশি।

প্রথম আলো

২০০,৩০০, ৪০০ ও ৫০০ ছক্কার মাইলফলক প্রতিটিই এবার এসেছে রেকর্ড গড়ে। প্রথম ১০০ ছক্কা এসেছে ১৪২৫ বলে, পরের ১০০ ছক্কা এসেছে ১০১৪ বলে, পরের ১০০ ছক্কা এসেছে ১৩৩৪ বলে।

প্রথম আলো

৩০০ থেকে ৪০০ ছক্কায় পৌঁছাতে লেগেছে ১৭১৮ বল আর ৪০০ থেকে ৫০০–তে যেতে লেগেছে ১৩৮৯ বল। ২০১৩ আইপিএলে ৫০০ ছক্কা মারতে লেগেছিল ১৩,৭৪৮টি বল, যা প্রায় এই মৌসুমের দ্বিগুণ।

বড় সংগ্রহ
৩৪টি ম্যাচের মধ্যে এবার ২৭০–এর বেশি রান উঠেছে ৩ ম্যাচে। চলতি মৌসুম শুরুর আগপর্যন্ত আইপিএল ইতিহাসের ১০২৫টি ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সে বেঙ্গালুরুর ২৬৩, যার মধ্যে ১৭৫ রানই এসেছিল ক্রিস গেইলের ব্যাট থেকে। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত ২০০ বা এর চেয়ে বেশি রান উঠেছে ১৪ বার, একই পরিমাণ ম্যাচ শেষে ২০২৩ সালে ২০০ বা এর চেয়ে বেশি রান উঠেছিল ১৫ বার। তবে এবার সংগ্রহগুলো ২০০ ছাড়িয়ে আরও বড় হচ্ছে, ২২০ বা এর চেয়ে বেশি রান উঠেছে ৮ বার, ২৪০–এর বেশি রান হয়েছে ৫ বার। পাওয়ারপ্লেতে এবার রান উঠছে ৯ রানের বেশি করে। ডেথ ওভারে প্রায় ১২ রান করে (১১.৭২)।

প্রথম আলো

এবার আইপিএলে পাওয়ারপ্লেতে ৬০ বা এর চেয়ে বেশি রান হয়েছে মোট ২০ বার, যার মধ্যে ৭২ রান পার হয়েছে ১০ বার। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এরই মধ্যে তিনবার করে পাওয়ারপ্লেতে ৭২ বা এর চেয়ে বেশি রান তুলেছে, কলকাতা করেছে দুইবার।

প্রথম আলো

যদিও এই দলগুলোর কোনোটিই ২০১৭ সালে করা পাওয়ারপ্লেতে কলকাতার ১০৫ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। এবারের মৌসুমে পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ ৮৮ রান করেছে কলকাতাই, দিল্লির বিপক্ষে সেই রান আছে তালিকার চতুর্থ স্থানে।

প্রথম আলো

এবার ১৩ বার প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে দলগুলো ১০০ রান তুলেছে, যেটাও রেকর্ড। এর আগে সর্বোচ্চ গত মৌসুমে ৩৪ ম্যাচের মধ্যে ৮ বার প্রথম ১০ ওভারে ১০০ রান তুলেছে দলগুলো। ডেথ ওভারে এবার সর্বোচ্চ রান উঠেছে ৮৪, দিল্লির বিপক্ষে মুম্বাইয়ের করা এই রান ডেথ ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ডেথ ওভারে সর্বোচ্চ ৮৯ রান উঠেছিল ২০১৬ সালে, বেঙ্গালুরু করেছিল গুজরাটের বিপক্ষে।

নজিরবিহীন চাপে বোলাররা
এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি চাপে আছেন বোলাররা। এবারের আইপিএলে ১৫ রানের ওভার হয়েছে ২০৫টি, ২০ রান বা এর চেয়ে বেশি রানের ওভার হয়েছে ৫৪টি। এক আনরিখ নর্কিয়াই ১৬ ওভার বল করেই রান দিয়েছেন ২০৫, ওভারে ২০ রানের চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন ৪ বার। ভুবনেশ্বর কুমার, রিস টপলি, হর্শাল প্যাটেল ২০ রান বা এর চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন ৩ বার।

প্রথম আলো

ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি
এবার আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১০০ বা এর চেয়ে বেশি রান করেছেন ৪৫ জন ব্যাটসম্যান। এদের মধ্যে একমাত্র ইংলিশ অলরাউন্ডার স্যাম কারেনের স্ট্রাইক রেটই ১২০–এর নিচে—১১৭.৮৫। এঁদের মধ্যে ২৮ জন ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০–এর বেশি, ১০ জনের ১৭৫–এর চেয়ে বেশি।

প্রথম আলো

আবদুল সামাদ, দীনেশ কার্তিক, আশুতোষ শর্মা, আন্দ্রে রাসেল—এই চারজনের স্ট্রাইক রেট ২০০–এর বেশি। গত মৌসুমে ৩৪টি ম্যাচের পর ২০ জন ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০–এর বেশি, ১৭৫–এর বেশি ৫ জনের, ২০০–এর বেশি ছিল ১ জনের। বুঝতেই পারছেন, এবারের আইপিএল কেন আলাদা!