শুবমান গিল যেভাবে ইংল্যান্ড জয় করলেন

ইংল্যান্ডে ইতিহাসের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন অধিনায়ক শুবমান গিল, ২১৬ বলের ইনিংসে মাত্র ৩.৫% ভুল শট খেলেছেন।

সেঞ্চুরির পর গিলএএফপি

প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন। তিন অঙ্কে পৌঁছালেন কাল শুরু হওয়া দ্বিতীয় টেস্টেও। যে টেস্ট সেঞ্চুরিতে এজবাস্টন টেস্টের প্রথম দিনটা পুরোপুরি ভারতের। অধিনায়ক হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কৃতিত্ব তাই শুবমান গিল পাবেন। এর বাইরে কালকে করা গিলের সেঞ্চুরিটির আলাদা একটা মাহাত্ম্য আছে। পরিসংখ্যানের বিচারে ইংল্যান্ডের মাটিতে এটিই ছিল সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত টেস্ট সেঞ্চুরি।

গিল আসলে যা করেছেন

যশপ্রীত বুমরার খেলা না খেলা ইস্যুতে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বেশ চাপেই পড়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক গিল। উত্তরগুলো কিছুটা ঘোলাটেই দিয়েছিলেন। অথচ ব্যাটিংয়ে নেমে যা করেছেন, সেখানে ধোঁয়াশার কোনো চিহ্ন রাখেননি।
সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিং আলাদা রাখার কথা বলেছিলেন গিল।

মাঠে নেমে তিনি সেটিরই দারুণ বাস্তবায়ন করেছেন। এখন পর্যন্ত ২১৬ বলের ইনিংসে মাত্র ৩.৫ শতাংশ ফলস (ভুল) শট খেলেছেন। তুলনামূলকভাবে, ইংল্যান্ডে এই গড় প্রায় ১২ শতাংশ। ২০০৬ সালে ক্রিকেট পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ক্রিকভিজ পরিসংখ্যান রাখা শুরু করার পর থেকে ইংল্যান্ডে এটিই সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত, সবচেয়ে নিখুঁত টেস্ট সেঞ্চুরি।

৩.৫ শতাংশ
২১৬ বলের ইনিংসে মাত্র ৩.৫ শতাংশ ফলস (ভুল) শট খেলেছেন গিল।

ইংল্যান্ডের অনেক কিংবদন্তিও এখানে পিছিয়ে। এই যেমন অ্যালিস্টার কুক, জো রুট, কেভিন পিটারসেন। এমনকি গত দুই দশকে যাঁরা ইংল্যান্ডে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছেন, সেই রাহুল দ্রাবিড়, রিকি পন্টিং, কুমার সাঙ্গাকারারাও এমন নিয়ন্ত্রণ দেখাতে পারেননি।
গিলের ইনিংসে মাত্র দুটি বল ব্যাটের বাইরের কানায় লেগেছিল। দুটিই ক্রিস ওকসের বিপক্ষে। সেটা শুরুর দিকেই, ২০ রানে পৌঁছানোর আগেই। ভেতরের কানায় লেগেছিল একবার, ব্রায়ডন কার্সের বলে।

যেভাবে ইংল্যান্ড জয় করলেন
চলতি বছরের মে মাসে শুবমান গিলকে যখন টেস্ট অধিনায়ক করা হয়, বিদেশের মাটিতে ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের রেকর্ড নিয়ে তখনো সংশয় ছিল।
ইংল্যান্ডে আগের ছয় ইনিংসে গিলের গড় ছিল মাত্র ১৪.৬৬। তবে এবার প্রথম টেস্টে ৪ নম্বরে নেমে হেডিংলিতে প্রথম ইনিংসেই অধিনায়ক হিসেবে খেলেন ১৪৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৪ নম্বরে নেমে অবশ্য নতুন বলের সুইংটা এড়িয়ে গেছেন।

রবি শাস্ত্রী এ নিয়ে বলেছেন, ‘ও নিজের ডিফেন্স নিয়ে অনেক কাজ করেছে। আগে ইংল্যান্ডে এসে ও একটু শক্ত হাতেই খেলত। এখন ও বলকে ব্যাটে আসতে দেয়। নিজের রক্ষণে বিশ্বাস রাখছে।’ আর সেই বিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট ছিল গিলের ইনিংসে।

টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন গিল
রয়টার্স

হেডিংলিতে তাঁর সাফল্যের পর গিলকে নিয়ে পরিকল্পনা পরিষ্কার ছিল ইংল্যান্ডের। গত ১৬ বছরে কোনো ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে এতটা স্ট্রেইট বল করেনি ইংল্যান্ডরে বোলাররা। পেসাররা বারবার বল করেছেন প্যাডের দিকে, এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন।

এ নিয়ে পেসার ওকস বলেছেন, ‘মনে হচ্ছিল, ওর বিপক্ষে একটা এলবিডব্লু পেয়ে যাব, তবে হালকা একটা ইনসাইড এজ হয়েছিল। ওগুলো বাদ দিলে মনে হয়েছে পুরোটা সময় ও সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। পুরো কৃতিত্ব ওর প্রাপ্য।’

আরও পড়ুন

কার রেকর্ড ভাঙলেন গিল
ক্রিকভিজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে বিদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এত দিন সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের। মাত্র ৪.৪ শতাংশ ফলস শট নিয়ে তিনি ২০১২ সালে ওভালে ১৮২* রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

ইংল্যান্ডে করা স্টিভ স্মিথের আটটি টেস্ট সেঞ্চুরির মধ্যে সবচেয়ে কম ফলস শটের হার ছিল ৯ শতাংশ—যেটা গিলের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

অবাক করা ব্যাপার, এত দিন এই তালিকায় সবার ওপরে ছিলেন ইংল্যান্ডের একসময়কার ওপেনার স্যাম রবসন, যিনি ২০১৪ সালে হেডিংলিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় টেস্টেই ১২৭ রান করেছিলেন।

আরও পড়ুন