স্পিন, স্পিন এবং স্পিন—পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট জয়ের মূলমন্ত্র এখন একটাই।
সর্বশেষ তিন টেস্টের মতো মুলতানে চলমান পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের শেষ টেস্টেও চলছে স্পিনারদের দাপট। তবে আগের তিন ম্যাচে পাকিস্তান প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেললেও এবার নিজেরাই সেই ফাঁদে আটকে পড়ার শঙ্কায়।
মুলতানে সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে পাকিস্তানকে ২৫৪ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটসম্যানদের জন্য বধ্যভূমি হয়ে ওঠা মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাত্র দুদিন শেষ হয়েছে। তাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুবার ও পাকিস্তান একবার অলআউট! মোট উইকেট পড়েছে ৩৪টি, এর ২৯টিই নিয়েছেন স্পিনাররা।
রান তাড়া করতে নেমে এরই মধ্যে পাকিস্তান হারিয়ে ফেলেছে ৪ উইকেট। দ্বিতীয় দিনটা শান মাসুদের দল শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৭৬ রান তুলে। ম্যাচ জিততে আরও ১৭৮ রান দরকার দলটির। শান মাসুদ (২), মুহাম্মদ হুরাইরা (২), বাবর আজম (৩১) ও কামরান গুলাম (১৯)—ফিরে গেছেন পাকিস্তানের ব্যাটিংক্রমের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই। ৭১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দিনের শেষ ২০টি বল নাইটওয়াচম্যান কাশিফ আলীকে (১*) নিয়ে পাড় করেছেন সৌদি শাকিল (১৩*)।
গতকাল প্রথম দিনে নোমান আলীর হ্যাটট্রিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৬৩ রানে। ক্যারিবীয়রা তবু ৯ রানের লিড নেয় জোমেল ওয়ারিক্যান ও গুড়াকেশ মোতির ঘূর্ণি জাদুতে।
আজ দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরুর পরও চা-বিরতির ঠিক আগমুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়ে যায় ২৪৪ রানে। ফলে শান মাসুদের দলের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫৪। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের দুই স্পিনার সাজিদ আলী ও নোমান আলী নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট পেয়েছেন নোমান।
ম্যাচটি জিততে হলে মুলতানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড গড়তে হবে পাকিস্তানকে। এই মাঠে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা পাকিস্তানেরই। ২০০৩ সালে ইনজামাম-উল-হকের বীরত্বে (১৩৮*) বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৬১ রানের লক্ষ্য সফলভাবে তাড়া করেছিল পাকিস্তান।
লোয়ার অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান সাকলায়েন মুশতাক, সাব্বির আহমেদ, উমর গুল ও ইয়াসির আলীকে নিয়ে ম্যাচটা বাংলাদেশের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ইনজামাম। ১ উইকেটের সেই হার বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্তগুলোর একটি হয়ে আছে।
মূলত গত বছরের অক্টোবরে মুলতানে ব্যাটিং-স্বর্গ বানিয়েও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট হারের পর স্পিন সহায়ক পিচ তৈরির উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান। এতে সফলও হয়। ঘরের মাঠে দলটি অল্প পুঁজি নিয়েও সর্বশেষ তিন টেস্টেই জিতেছে স্পিনারদের সৌজন্যে।
অক্টোবরে মুলতানেই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে ২৯৭ রানের লক্ষ্য দিয়েও জেতে ১৫২ রানের বিশাল ব্যবধানে। রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের শেষ টেস্টে পাকিস্তানকে মাত্র ৩৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারে ইংলিশরা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বেন স্টোকসের দল অলআউট হয় মাত্র ১১২ রানে। স্বাগতিকেরা লক্ষ্য টপকে যায় ৯ উইকেট হাতে রেখে।
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও একইভাবে ধরাশায়ী করে পাকিস্তান। মুলতানে সিরিজের প্রথম টেস্টে ক্যারিবীয়দের ২৫১ রানের লক্ষ্য দিয়ে ১২৩ রানে অলআউট করে মাসুদের দল, ম্যাচ জেতে ১২৭ রানে। সব মিলিয়ে অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর থেকে চলমান টেস্ট পর্যন্ত চার টেস্টে পতন হওয়া মোট ১৪৪ উইকেটের ১২৪টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। অর্থাৎ, মোট উইকেটের ৮৬.১১%!
স্পিন সহায়ক পিচ বানানোয় ম্যাচগুলোর দৈর্ঘ্যও কমে এসেছে। মুলতানে গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটা তবু চতুর্থ দিনে গড়িয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডিতে তাদের বিপক্ষে শেষ টেস্ট আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুলতানে এই সিরিজের প্রথম টেস্ট তো তৃতীয় দিনেই শেষ হয়ে গেছে।
মুলতানে চলমান টেস্টেও যেভাবে টপাটপ উইকেট পড়ছে, তাতে আগামীকাল তৃতীয় দিনেই ফল আসা একরকম নিশ্চিত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬৩ ও ৬৬.১ ওভারে ২৪৪ (ব্রাফেট ৫২, ইমলাখ ৩৫, জাঙ্গু ৩০, সিনক্লেয়ার ২৮; সাজিদ ৪/৭৬, নোমান ৪/৮০)। পাকিস্তান: ১৫৪ ও ২৪ ওভারে ৭৬/৪ (বাবর ৩১, কামরান ১৯; সিনক্লেয়ার ২/৪১)।