সেমিফাইনালে না গিয়েও যেভাবে অনেক অর্জন পাকিস্তানের

২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসি ট্রফি আয়োজন নিয়ে পাকিস্তানি দর্শকদের উচ্ছ্বাসের কমতি নেইরয়টার্স

পাকিস্তানের মাঠে একটা আইসিসির টুর্নামেন্ট হচ্ছে। অথচ ঘরের মাঠেই কিনা পাকিস্তান খেলতে পারল একটি ম্যাচ! ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে হয়েছে আরব আমিরাতে। ঘরের মাঠের দুই ম্যাচের মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করাচিতে খেললেও আজ রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি হতে পারেনি বৃষ্টিতে

দুটি ম্যচ খেলে দুটিতেই হার, গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়—এই হলো ‘ঘরের মাঠে’ পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। তবে মাঠের ক্রিকেট থেকে চোখ সরিয়ে নিলে এই টুর্নামেন্ট থেকে অনেক কিছু পাওয়ার দেখছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে আজ পিসিবির মিডিয়া ডিরেক্টর সামিউল হাসান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেন, ‘আইসিসি ইভেন্ট হলো ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ। পিসিবির জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ছিল, কারণ ২৯ বছরের মধ্যে এই প্রথম এ রকম একটা ইভেন্ট পাকিস্তানে হচ্ছে। এটি আয়োজনের জন্য আমরা সবাই অনেক পরিশ্রম করেছি।’

আরও পড়ুন

স্বাগতিক পাকিস্তান ছাড়াও বিশ্বের আরও সাতটি শীর্ষ দলের অংশগ্রহণে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। এই টুর্নামেন্টে তাই বিশ্বকে পাকিস্তানের দেখানোর ছিল, বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে তারা সক্ষম। সামিউল হাসানও সেটাই বলেছেন, ‘আমাদের সবাইকে দেখানোর ছিল যে আমরা সফলভাবে আইসিসির ইভেন্ট আয়োজন করতে পারি। পাকিস্তান সম্ভবত ২৯ বছরের মধ্যে এই প্রথম এটি আয়োজন করছে। অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো এর মধ্যে অনেকবার আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পিসিবির মিডিয়া ডিরেক্টর সামিউল হাসান।
প্রথম আলো

সামিউল হাসানের আশা, সফলভাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের পর আইসিসির পরবর্তী চক্রে পাকিস্তান আরও বড় টুর্নামেন্ট পাবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য এই টুর্নামেন্টের অন্য তাৎপর্যও দেখেন তিনি, ‘আইসিসি ইভেন্ট আয়োজন থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, দেশের তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক ক্রিকেটের তারকাদের দেখানোর সুযোগও মেলে, তাদের খেলাটার সঙ্গে ভালোবাসায় জড়ানো যায়।

হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত তাদের সব ম্যাচ খেলছে দুবাইয়ে। এমনকি সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে উঠলে সেটিও দুবাইয়েই খেলবে তারা।

একই সঙ্গে পিসিবির স্টাফদের পেশাগত দক্ষতাও বাড়াতে সাহায্য করে এসব টুর্নামেন্ট।’ এই টুর্নামেন্ট ঘিরে পাকিস্তানের ভেন্যুগুলোতে কাঠামোগত যে সংস্কার হয়েছে, সেসবও ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে তাঁর আশা।
তবে এমন একটা আয়োজনেও পাকিস্তান ভারতের সহযোগিতা পায়নি। নিরাপত্তার কথা বলে তাঁরা এখানে খেলতেই আসেনি।

হাইব্রিড মডেলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত তাদের সব ম্যাচ খেলছে দুবাইয়ে। এমনকি সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে উঠলে সেটিও দুবাইয়েই খেলবে তারা। স্বাগতিক পাকিস্তানকেও টুর্নামেন্ট আয়োজনের স্বার্থে দুবাইয়ে ‘অতিথি’ হয়ে গিয়ে ম্যাচ খেলতে হয়েছে ভারতের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

এটাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ছাড়া আর কীই–বা বলতে পারেন সামিউল হাসান, ‘ভারতীয় দলের পাকিস্তানে না আসাটা দুঃখজনক। এটা দুর্ভাগ্যজনক, তবে এটা সরকারের সিদ্ধান্ত এবং এখানে আমাদের তেমন কিছু করার ছিল না। তবে ভারতীয় দল আমাদের মাঠে এসে খেললে সেটা হতো অসাধারণ একটা কিছু। আমাদের দর্শকেরা তাদের খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে পারত। একই সঙ্গে ভারতের ক্রিকেটাররাও এখানে খেলে আনন্দ পেত এবং আমাদের আতিথেয়তা উপভোগ করতে পারত।’

আজ রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ–পাকিস্তান ম্যাচটি হতে পারেনি বৃষ্টির কারণে
রয়টার্স

পিসিবির মিডিয়া ডিরেক্টর কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিয়েও, ‘পিসিবি ও বিসিবির মধ্যে কাজের সম্পর্কটা খুবই ভালো। এটা নতুন কিছু নয়, অনেক দিন ধরেই ক্রমেই এই সম্পর্কটা জোরালো হয়েছে। আমি আশা করি, বাংলাদেশ দল দ্রুতই আবার পাকিস্তান সফর করবে এবং পাকিস্তান দলও বাংলাদেশ সফরে যাবে। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ চলমান থাকবে।’ সামিউল হাসান জানিয়েছেন, দুই বোর্ডের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে তৃতীয় কোনো দল নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটা ত্রিদেশীয় সিরিজও হতে পারে।

ত্রিদেশীয় সিরিজ নিয়ে চলমান টুর্নামেন্টের মধ্যেই পিসিবি সভাপতি মহসিন নাকভির সঙ্গে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এফটিপির বাইরে জুলাই–আগস্টে পাকিস্তান দলকে বাংলাদেশ সফরে পাঠানোর ব্যাপারেও নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন পিসিবি সভাপতি।

পিসিবি ও বিসিবির মধ্যে কাজের সম্পর্কটা খুবই ভালো। এটা নতুন কিছু নয়, অনেক দিন ধরেই ক্রমেই এই সম্পর্কটা জোরালো হয়েছে।
সামিউল হাসান, পিসিবির মিডিয়া ডিরেক্টর

একই সঙ্গে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পিএসএলে খেলার সম্ভাবনা বাড়বে বলেও আশা সামিউল হাসানের, ‘পিএসএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা খুবই জনপ্রিয়। (নাহিদ) রানাকে নেওয়া হয়েছে। এখানে অনেক মানুষ ওর খেলা দেখার অপেক্ষায় আছে, যেমন তাঁরা দেখেছেন মাহমুদউল্লাহ–তামিমের খেলা। অনেক বাংলাদেশি ক্রিকেটারই এখানে ভালো খেলেছেন। আশা করি, তাঁদের জন্য এই সুযোগটা অব্যাহত থাকবে, যে রকম আমাদের ক্রিকেটাররা বিপিএলে খেলেন।’