আগুনে বোলিংয়ের জয়েও ‘গলার কাঁটা’ জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেট জুটি

ইবাদতের বলে উড়ে যায় সিকান্দার রাজার স্টাম্পছবি: এএফপি

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচের ফল এতক্ষণে সবার জানা। বরং হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের সকালের একটা ছবির গল্প দিয়ে শুরু করি। মাঝ মাঠের একটি উইকেট বেছে নিয়ে বাংলাদেশ দলের পেসারদের গা গরম করতে বোলিং করান অ্যালান ডোনাল্ড।

হাসান মাহমুদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও ইবাদত হোসেনের বোলিং দেখে অবশ্য সেটিকে গা গরমের বোলিং মনে হয়নি। আগুনে বোলিংয়ে পেস বোলিং কোচের বেসবল-গ্লাভসে আঘাত করছিলেন তিনজনই। ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা সিরিজটাকে ২-১ করার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা ছিল পেসারদের শরীরী ভাষায়।

সকালের উত্তাপটা ছিল জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শুরুতেও। স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৫৬ রান নিয়েও সিরিজের শেষ ম্যাচটা জেতার চেষ্টা দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণে। হাসানের প্রথম ওভারেই আঘাত, অভিষেকেই ইবাদতের এক ওভারে জোড়া আঘাত তারই প্রমাণ। মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামও নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে উইকেট তুলে নিয়েছেন। তাতে চোখের পলকে জিম্বাবুয়ের ওপরের সারির ৬ ব্যাটসম্যান ড্রেসিংরুমে, স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ৪৯।

বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় তখনই। বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। সেটুকু লম্বা করেছে জিম্বাবুয়ের ১০ম উইকেটের জুটি। রিচার্ড এনগারাভা ও ভিক্টর নিয়াউচি মিলে ৫৮ বলে ৬৮ রান তুলে বাংলাদেশের জয়ের অপেক্ষা বাড়িয়েছেন। তাতে ১০৫ রানে হারের এই ম্যাচ থেকে জিম্বাবুয়ের একটি প্রাপ্তিও আছে। ১০ম উইকেটে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও এই সংস্করণে ১০ম উইকেটে এটি সর্বোচ্চ রান তোলার রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ৩২.২ ওভারে ১৫১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।

তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অপরিবর্তনীয় থাকলেও পরিবর্তন আনা হয় বোলিংয়ে। তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলামকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। দুই পেসারের জায়গায় দলে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও ইবাদত হোসেন। হাসানের সঙ্গে নতুন বল ভাগাভাগি করে নিজের ওয়ানডে অভিষেকটা রাঙিয়েছেন ইবাদত। গতিময় বোলিংয়ে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠ কাঁপিয়েছেন দুজন। প্রথম স্পেলে দুই পেসারের সৌজন্য ৩ উইকেট পেয়ে যায় বাংলাদেশ।

এক ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন ইবাদত
ছবি: এএফপি

অধিনায়ক তামিম ইকবাল গতির সঙ্গে স্পিনের মিশ্রণটা করেছেন দারুণ। পেসারদের ছোট ছোট স্পেলে বোলিং করিয়েছেন। নতুন বলে সুযোগ দিয়েছেন স্পিনারদেরও। মিরাজ ও তাইজুল পাওয়ার প্লেতেই একটি করে উইকেট নিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। তবে শেষটা করেছেন মোস্তাফিজ। লেজের সারির ব্যাটসম্যানদের আউট করে জিম্বাবুয়ে ইনিংসের ইতি টানেন তিনি। ৪ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ জিম্বাবুয়ের ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

বাংলাদেশ দলের ইনিংসে শুরুর গল্পটা তামিম ইকবালকে নিয়েই বলতে হয়। দারুণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আজও আরেকটু ভালো শুরু পেয়ে সেটি কাজে লাগাতে পারেননি। আজ হতাশাটা বেশি আউটের ধরনের কারণে। উদ্বোধনে তামিমের সঙ্গী এনামুল হকের সঙ্গে বোঝাপড়ার ভুলে রান আউট হন তিনি।

প্রথম দুই ম্যাচে ৬২, ৫০ রানের পর আজ ১৯ রানে থামে তামিমের ইনিংস। এক উইকেট পতনের পর হঠাৎই কি যেন হলো বাংলাদেশের। ৭ রানের ব্যবধানে নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিম আউট হন ক্যাচ তুলে। এক ওভার আগেও যে পাওয়ার-প্লে বাংলাদেশের জন্য আদর্শ মনে হচ্ছিল, সেটি ৩ উইকেটে ৪৭ রানের রূপ নিল।

এরপর বাংলাদেশের মান রক্ষা করেছেন এনামুল ও আফিফ হোসেন। এনামুলের ৭১ বলে ৭৬ রানের ইনিংসটি এসেছে প্রতি আক্রমণে। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসে তিনি বাংলাদেশকে দ্রুত তিন উইকেট হারানোর ঘটনা প্রায় ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের সে সেঞ্চুরি নিয়ে হতাশা, সেটি দূর করতে পারেননি সুযোগ পেয়েও। লুক জঙ্গুইয়ের বল থার্ড ম্যানে ঠেলে খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তিনি।