স্ত্রী–সন্তানের ভরণপোষণে মাসে ৪ লাখ রুপি দিতে হবে শামিকে, আদালতের নির্দেশ

স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে মোহাম্মদ শামিইনস্টাগ্রাম

ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামিকে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার ভরণপোষণ খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৪ লাখ রুপি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্ট। দাম্পত্য নিয়ে বিবাদে শামি ও তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহান আলাদা বসবাস করছেন। আদালতে লড়াই চলছে দুজনের। আইনি লড়াই চলাকালে শামিকে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার ভরণপোষণ বাবদ প্রতি মাসে এ পরিমাণ অর্থ দিতে হবে জানিয়েছে ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই।

আরও পড়ুন

কলকাতার আলিপুর আদালত ২০১৮ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন, শামিকে প্রতি মাসে স্ত্রীর জন্য ৫০ হাজার রুপি এবং কন্যার জন্য অতিরিক্ত আরও ৮০ হাজার রুপি করে দিতে হবে। তখন হাসিন কলকাতার এ নিম্ন আদালতে আরও বেশি অর্থ দাবি করেছিলেন। নিজের জন্য ৭ লাখ রুপি ও কন্যার জন্য ৩ লাখ রুপি চেয়েছিলেন। কিন্তু আলিপুর আদালত দাবিটি খারিজ করে ওই রায় দেন। হাসিন তা মানতে না পেরে কলকাতার উচ্চ আদালতে আপিল করেন। এরপর কলকাতার হাইকোর্ট থেকে নতুন এই নির্দেশ দেওয়া হলো।

বিচারক অজয় কুমার মুখার্জি বলেন, হাসিনের ব্যক্তিগত খরচ নির্বাহে দেড় লাখ রুপি এবং কন্যার জন্য আরও আড়াই লাখ রুপি প্রতি মাসে দিতে হবে শামিকে।

আপিলে হাসিনের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়, ভারতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার শামির আর্থিক অবস্থা ভালো এবং প্রতি মাসে ভরণপোষণ হিসেবে তিনি আরও বেশি অর্থ দিতে সক্ষম। ২০২১ অর্থবছরে শামির আয়কর রিটার্নের তথ্য অনুযায়ী, তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ৭.১৯ কোটি রুপি। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৬০ লাখ রুপি আয় করেন ভারতের হয়ে চলতি বছর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতা এ পেসার। হাসিন তখন দাবি করেছিলেন, কন্যা ও তাঁর নিজের মিলিয়ে প্রতি মাসে ৬ লাখ রুপির বেশি খরচ হয়।

আরও পড়ুন

সবকিছু শোনার পর কলকাতা হাইকোর্ট হাসিনের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। বিচারক অজয় মুখার্জির ভাষায়, ‘দুই আবেদনকারীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমার বিবেচনায়, প্রথম আবেদনকারীর (স্ত্রী) জন্য প্রতি মাসে ১,৫০,০০০ রুপি এবং কন্যার জন্য ২,৫০,০০০ রুপি করে প্রদান ন্যায়সংগত হয়।’ আদালত এ কথাও জানিয়েছেন, শামি চাইলে তাঁর কন্যার শিক্ষা এবং অন্যান্য খাতে খরচের জন্য আরও বেশি অর্থও দিতে পারেন।

আলিপুর আদালত কিসের ভিত্তিতে শামিকে প্রতি মাসে খুব অল্প পরিমাণ অর্থ ভরণপোষণ হিসেবে দেওয়ার রায় দিয়েছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতার হাইকোর্ট। সংশোধিত এ রায়ের আগের রায় সংশোধন করার কথাও বলা হয়। যুক্তি হিসেবে শামির অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং হাসিনের আর বিয়ে না করা ও সন্তান নিয়ে আলাদা থাকার কথা বলা হয়েছে।

ভারতের হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছেন শামি
শামির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

আইপিএলের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাবেক মডেল ও চিয়ারলিডার ছিলেন হাসিন জাহান। ২০১৪ সালে হাসিন ও শামি বিয়ে করেন এবং পরের বছর তাঁরা কন্যাসন্তানের মুখ দেখেন। ২০১৮ সালে এসে জানা যায়, দাম্পত্যজীবন ভালো কাটছে না হাসিন ও শামির। ভারতের হয়ে ৬৪ টেস্ট, ১০৮ ওয়ানডে ও ২৫ টি-টোয়েন্টি খেলা শামির বিরুদ্ধে নির্যাতন, যৌতুকের জন্য হয়রানি ও ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তোলেন হাসিন। শামি সংসার চালানোর খরচও দিচ্ছেন না, তখন এই অভিযোগও করেছিলেন হাসিন।

আরও পড়ুন

দীর্ঘ সময় বিচ্ছেদের পর ২০২৩ সালে নিজ কন্যার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে আবেগমাখা একটি পোস্ট করেছিলেন শামি, ‘দীর্ঘদিন পর তার মুখ দেখে সময়টা স্থির হয়ে গিয়েছিল। শব্দে প্রকাশের সামর্থ্য থেকেও তোমাকে বেশি ভালোবাসি, বেবো।’ ১ ঘণ্টার মধ্যে ওই পোস্টে ১ লাখ ৬০ হাজার লাইক পড়েছিল।

হাসিন অবশ্য শামির সেই পোস্টের সত্যতা নাকচ করে দাবি করেছিলেন, সবার মনোযোগ কাড়তেই তিনি ওই পোস্ট দিয়েছেন। তখন ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারকে হাসিন বলেছিলেন, ‘এটা স্রেফ লোকদেখানো কাজ। আমার মেয়ের পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে এবং নবায়নের জন্য শামির সইয়ের প্রয়োজন ছিল। এ জন্য সে (মেয়ে) তার সঙ্গে দেখা করেছে। তাকে (মেয়ে) নিয়ে একটি শপিং মলে গিয়ে এমন দোকানে সে (শামি) ঢুকেছে, যে ব্র্যান্ডের সঙ্গে সে সংযুক্ত। কোনো পয়সা খরচ হয়নি।’

হাসিন তখন আরও বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে একটি গিটার ও ক্যামেরা কিনতে চেয়েছিল, যেটা শামি কিনে দেননি, ‘শামি কখনো আমার মেয়ের খোঁজ নেয় না। সে শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। এক মাসে আগে সে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেছে কিন্তু তখন কিছুই পোস্ট করেনি। তার সম্ভবত (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) পোস্ট করার কিছু নেই, তাই এটা আপলোড করেছে।’