বাবাকে যারা কটূক্তি করত, তারাই এখন রাবেয়ার খেলা দেখে
কথাটা বলার সময় রাবেয়া খানের আনন্দটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। মুঠোফোনের ওপার থেকে গর্ব নিয়েই বললেন, ‘বাবাকে যারা কটূক্তি করত, তারাই এবার ওনার সঙ্গে বসে টিভিতে বিশ্বকাপের খেলা দেখেছে। এটা জেনে খুব খুশি লেগেছে।’ গত পরশু শেষ হওয়া নারী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন রাবেয়া।
এবারই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া রাবেয়া জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন লেগ স্পিন জাদু দিয়ে। অথচ ক্রিকেটে তাঁর শুরুটা ছিল পেসার হিসেবে। উচ্চতা কম হওয়ায় রাবেয়াকে লেগ স্পিনার হওয়ার পরামর্শ দেন বিকেএসপির কোচরা। সেই পরিবর্তনই বদলে দেয় তাঁর ভাগ্য।
একটা সময় অবশ্য রাবেয়ার পৃথিবী ছিল শুধু ফুটবলকে ঘিরে। প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবলে নজর কেড়ে সাভারের বিকেএসপিতে আসেন এক সপ্তাহের ক্যাম্পে। পাশের মাঠে মেয়েদের ক্রিকেট খেলতে দেখে খেলাটার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরে বাবার সম্মতি নিয়ে ২০১৯ সালে ট্রায়াল দিয়ে ভর্তি হয়ে যান বিকেএসপিতে।
বরিশালের উজিরপুরের কিশোরী রাবেয়ার জীবন বদলে যায় এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। কিন্তু মেয়ে রাবেয়ার ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাবা ইমদাদুল হক খানকে নিয়মিতই কটূক্তি শুনতে হতো। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড় রাবেয়া কাল ফিরে গিয়েছিলেন সেই দিনগুলোতে, ‘বরিশালে বাবাকে কেউ দেখলেই বলত, মেয়েকে কোথায় দিলা, খুব খারাপ কাজ করেছ ক্রিকেট খেলতে দিয়ে। আরও অনেক বাজে বাজে কথা শোনাত। কিন্তু বাবা আমাকে কোনো দিন এসব বলেননি, বুঝতেও দেননি।’
রাবেয়ার প্রাপ্তি—তাঁর ক্রিকেট খেলাকে অপছন্দ করা গ্রামের সেই লোকেরাই এখন তাঁর ভক্ত হয়ে উঠছে। খেলা দেখেছে তাঁর বাবার সঙ্গে বসে। মেয়ের সৌজন্যে গ্রামে বাবা এখন বিশেষ সম্মানও পান।
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাওয়ায় আফসোস আছে ৭ ম্যাচে ৭ উইকেট নেওয়া রাবেয়ার। বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলারও সুযোগ ছিল বলে তাঁর বিশ্বাস। কিন্তু কয়েকটি ম্যাচে খুব কাছাকাছি গিয়েও বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ শেষ করেছে মাত্র এক ম্যাচ জিতে।
পরশুর রাতে টেলিভিশনে ফাইনাল দেখার পরপর সেই আফসোসটা আরেকবার হলো রাবেয়ার, ‘ভারতকে যখন ট্রফি জিততে দেখলাম, তখন এত খারাপ লেগেছে…। মনে হয়েছে আমরাও তো ওখানে থাকতে পারতাম! সেমিফাইনালে যারা উঠেছে, তাদের কাউকে কাউকেও তো আমরা প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম!’
রাবেয়া স্বপ্ন দেখেন, বাংলাদেশ নারী দল একদিন বিশ্বকাপ জিতবে, ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন তাঁরা। কাল সকালে মোবাইল হাতে নিয়ে হারমানপ্রীত কৌর-স্মৃতি মান্ধানাদের ছবি দেখতে দেখতে যেন নতুন প্রতিজ্ঞাই করলেন তিনি। ‘আমি চাই বাংলাদেশ মেয়েদের ক্রিকেটে শীর্ষ দল হবে। কোনো একদিন হয়তো আমরা ফাইনাল খেলব, বিশ্বকাপে জিতব’—বলেছেন রাবেয়া।
মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন, অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা আছে ঘরোয়া ক্রিকেটেও। ফুটবল থেকে ক্রিকেটে এসে পেসার থেকে হয়ে গেছেন লেগ স্পিনার। রাবেয়া মাঠে কৌতূহলভরে দেখেন নিগার সুলতানার অধিনায়কত্ব, প্রশ্ন করে জেনে নেন নেতৃত্বের ছোটখাটো বিষয়ও। কে জানে, ক্রিকেটার রাবেয়া হয়তো ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু হওয়ারও স্বপ্ন দেখেন।