‘হারিয়ে যাওয়া’ অভিষেক একা মাঠে ফেরার লড়াইয়ে

অভিষেক দাস, অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের সময়েফাইল ছবি

অভিষেক দাসকে চেনেন? না চিনলেও দোষের কিছু নেই। তিন বছর ধরে খেলার বাইরে থাকলে যেকোনো খেলোয়াড়ের নামই স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়ার কথা। তবে বছরের যেকোনো সময়ই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গেলে আপনি অভিষেককে পাবেন। কখনো একাডেমি মাঠে, কখনো জিমনেসিয়ামে। আর খেলার সময় তাঁকে খুঁজে পাবেন গ্যালারিতে। চোটের কারণে যে খেলাটা থেকে তিনি প্রায় চার বছর ধরে দূরে, সেই খেলাটা অন্যদের খেলতে দেখাটাই যে আপাতত কাজ অভিষেকের!

২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের ২২ বছর বয়সী পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে দেখে কয়েক মাস আগে জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়ের বিস্ময়মাখা প্রশ্ন ছিল, ‘তিন বছর কেউ ইনজুরড থাকে? এটা কীভাবে সম্ভব!’ অভিষেকের কিছু বলার ছিল না। পিঠের ব্যথার কথা আর কতবারই–বা বলা যায়! তিনি শুধু হাসেন। সেই হাসির পেছনে লুকিয়ে হতাশার সমুদ্র। পিঠের ব্যথার কারণে যুব বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের পর গত প্রায় চার বছরে তিনি খেলতে পেরেছেন মাত্র একটি ম্যাচ, সেটাও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে।

আরও পড়ুন

বিসিবি তাদের মতো করে অভিষেককে সুস্থ করে তোলার অনেক চেষ্টাই করেছে। দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর পর তাঁকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেও খেলার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে কোনো দল অভিষেককে খেলাতে চায়নি। ইংল্যান্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েও অবস্থার উন্নতি না হলে গত বছর কাতারের ‘এসপেটার’ নামে এক স্পোর্টস মেডিসিন হাসপাতালে পাঠানো হয় অভিষেককে। তাঁর সঙ্গে যাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও আশিকুর জামান এবারের বিপিএল দিয়ে খেলায় ফিরবেন। কিন্তু অভিষেকের চোটের রহস্য ভেদই হয়নি এখনো। বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী তাঁর অবস্থার উন্নতি না দেখে হতাশ, ‘আমরা ছেলেটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করেছি।’ অস্ত্রোপচার একটা উপায় হলেও তাতে কতটা কাজ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অভিষেক দাস
সংগৃহীত

নড়াইলের ছেলে অভিষেক বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার পরামর্শে গত মাসে নিজ খরচে যান চেন্নাইয়ের শ্রী রামাচন্দ্র ইনস্টিটিউটে। মাশরাফিও সেখানে হাঁটুর চিকিৎসা করিয়েছিলেন। সেখানকার অভিজ্ঞ চিকিৎসক কার্তিক কৈলাস মাশরাফিকে দেখেছেন, এবার দেখলেন অভিষেককে। চেন্নাইয়ে তাঁর পরামর্শে এক মাস রিহ্যাব করে অবস্থার উন্নতিও হয়েছে কিছুটা।

আমরা ছেলেটার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করেছি।
বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী

মাঝারি মাত্রায় বোলিং শুরু করতে পেরে অভিষেক যেন অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখতে পেয়েছেন, ‘কী যে ভালো লাগছিল, বলে বোঝাতে পারব না।’ তবে চেন্নাইয়ে বোলিং করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে অভিষেকের বোলিং অ্যাকশনের একটা সমস্যা। বল ডেলিভারির পর ল্যান্ডিং ঠিকমতো না হওয়ায় পিঠে চাপ পড়ে তাঁর। পিঠের ব্যথার এটিও একটি কারণ।

আরও পড়ুন

কদিন আগে অভিষেক দেশে ফেরেন রিহ্যাবের কিছু প্রোগ্রাম নিয়ে। কিন্তু বিসিবিতে তাঁকে নিয়ে কাজ করার মতো ফিজিও-ট্রেনার নেই। কেউ কাজ করছেন জাতীয় দলের সঙ্গে, কেউ নিচ্ছেন বিপিএলের প্রস্তুতি। অভিষেককে যে নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলো করতে বলা হয়েছে, যেসবের সরঞ্জামও নেই বিসিবির জিমনেসিয়ামে। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কাজ করতে দরকার একজন কোচ। অভিষেক পাচ্ছেন না সে রকম কাউকেও। বিসিবির মেডিকেল কমিটির প্রধান মনজুর আলম এ নিয়ে বলেছেন, ‘ফিজিও-ট্রেনারদের কারোরই এখন অবসর বসে নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করে দেখছি কী করা যায়।’

তবু লড়ে যাচ্ছেন অভিষেক, যে লড়াইয়ে তিনি একেবারেই একা।