বলছেন খালেদ মাহমুদ: ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ একটা বানানো জিনিস
বিসিবি পরিচালক থাকার সময়ও ‘কোচ’ পরিচয়টা ছিল খালেদ মাহমুদের নামের পাশে। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ আর বিপিএলে তো কোচিং করিয়েছেনই, একসময় ছিলেন জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলেও। বিসিবিতে ‘স্বার্থের সংঘাতে’র উদাহরণ দিতে গেলেই তাই চলে আসত তাঁর নাম।
যদিও খালেদ মাহমুদ মনে করেন না, স্বার্থের সংঘাত–জাতীয় কোনো কিছু তিনি কখনো ঘটিয়েছেন। বিসিবির সাবেক এই পরিচালক এবারের বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ। মিরপুরের একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে আজ দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মাহমুদ কথা বলেছেন মিডিয়া প্লাজায়।
স্বার্থের সংঘাতের প্রসঙ্গটা উঠল সেখানেই, যার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট ছিল, এটা আমি কখনোই মনে করি না। এটা একটা বানানো জিনিস ছিল। কাজ করলে যদি আমি সৎ থাকি, তাহলে আসলে কোনো সমস্যা হয় না।’
মাহমুদ দাবি করেছেন, বিসিবিতে একসময় তাঁকে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান পদে আসার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। তিনি সে দায়িত্ব নেননি। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, প্রিমিয়ার লিগ ও বিপিএলে কোচের কাজ করেন বলে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের দায়িত্ব নিলে সরাসরি স্বার্থের সংঘাত হতো। তিনি ছিলেন গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে। সেখানে স্বার্থের সংঘাতের সুযোগ ছিল না।
মাহমুদ বলেন, ‘এটাকে অনেকে রস দিয়ে বানিয়েছে, এ জন্য এটা নিয়ে বেশি কথা হয়েছে।’
বোর্ড পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ক্রিকেটে খালেদ মাহমুদের পরিচয় এখন কেবলই কোচ। তবে কোচিংটা তিনি শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটেই করাতে চান না, সুযোগ পেলে আবারও কাজ করার ইচ্ছা জাতীয় দলের সঙ্গে, ‘প্রেসিডেন্ট স্যারকে আমি বলে এসেছিলাম, আমি যেহেতু কোচিং করাই, তাঁদের যদি মনে হয় আমি সামর্থ্যবান, তাহলে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমি জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছি।’
তবে একটু অভিমানও যেন আছে তাঁর কথায়, ‘দেশ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের হয়তো ওই মেধাটা নেই যে কাজ করতে পারব। এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তবে হ্যাঁ, যেহেতু আমার পেশা কোচিং, যদি সে রকম সুযোগ থাকে, আমি অবশ্যই বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।’
ফারুক আহমেদের নতুন বোর্ড এসে অবশ্য এরই মধ্যে মোহাম্মদ সালাহউদ্দীনকে জাতীয় দলের সহকারী কোচ করেছে। প্রধান কোচ এখনো বিদেশিই, ফিল সিমন্স। মাহমুদের বিশ্বাস, স্থানীয় কোচদেরও সক্ষমতা আছে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার।
জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে স্থানীয় কোচরা প্রস্তুত কি না, এমন প্রশ্নে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘বিদেশি কোচরা কতটুকু প্রস্তুত? তারা যে এই দেশে আসে, তারা কতটুকু তৈরি হয়ে আসে? একটা কোচ দেখান তো, যারা এখানে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক ওপরে নিয়ে চলে গেছে। এমন তো হয় না। পারফরম্যান্সই শুধু এদিক-ওদিক হয়।’
মাহমুদের বিশ্বাস, পর্যাপ্ত সুযোগ ও সময় পেলে স্থানীয় কোচরাও নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন, ‘সালাহউদ্দীন যদি তিন বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলে কাজ করে, পারফরম্যান্সে ওঠানামা থাকতেই পারে; কিন্তু একটা সিরিজে খারাপ করলেই যদি বাদ দিয়ে দেন, তাহলে তো স্থিতিশীলতা আসবে না। আপনি তো বিদেশি কোচের ক্ষেত্রে এটা করেন না। ফিল সিমন্স যখন শুরু করল, বাংলাদেশের কোনো কোচ হলে তো আপনি ওকে বিসিবিতেই ঢুকতে দিতেন না! আপনাকে সময় দিতে হবে। বাংলাদেশের কোচরা প্রস্তুত নয়, এই কথা ভুল।’
কোচ হিসেবে সালাহউদ্দীনের প্রশংসাই করেছেন মাহমুদ, ‘সালাহউদ্দীন কিছুটা হলেও ছাপ রাখতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। আমি মনে করি, দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে পারলে আরও বেশি প্রভাব রাখতে পারবে এবং আরও বেশি বাংলাদেশি কোচকে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করতে দেখতে পারব। ফাস্ট বোলিং, ফিল্ডিংয়েও আমাদের অনেক কোচ তৈরি হয়ে গেছে। তাদের ব্যাপারেও ভাবতে পারে বিসিবি। আমি বিশ্বাস করি না যে ফিল্ডিং কোচও আমাদের বাইরে থেকে আনতে হবে।’