স্বপ্নযাত্রার আগে নির্ভার বাংলাদেশের যুবারা

জিশান আলমের সেলফিতে অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট দলের সতীর্থরাশামসুল হক

ব্লেজার পরে অস্বস্তিতে ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কয়েকজন ক্রিকেটার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল মাঠে এসে একজন হাতা টানছেন, আরেকজন বোতাম ঠিক করছেন। পেছন থেকে তাঁদের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেলেন হান্নান সরকার। নিজেই ব্লেজার ঠিক করার পরামর্শ দিলেন। বিসিবির বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক তিনি। কিন্তু খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দেখে মনে হবে তিনি তাঁদের কাছের বড় ভাই।

দূর থেকে তা দেখে হাসছিলেন যুবাদের প্রধান কোচ স্টুয়ার্ট ল। ব্যাটিং কোচ ওয়াসিম জাফরের সঙ্গে ছেলেদের নিয়ে মজা করছিলেন তিনি। তাঁদের গায়েও ব্লেজার। একটু পর জিনস ও টি–শার্ট পরে ভিড়ের মধ্যে হাসতে হাসতে ঢুকে পড়লেন শাহরিয়ার নাফীস। তা দেখে স্টুয়ার্ট ল একটু ঈর্ষান্বিত হলেন বলে মনে হলো। সবার গায়ে ব্লেজার, আর তাঁর গায়ে টি-শার্ট! একসময়ের কোচের সঙ্গে এ নিয়ে কিছুক্ষণ কথা চালাচালি করতে দেখা গেল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক নাফীসকে।

ওদিকে খেলোয়াড়েরা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছবি তোলার। আজকের আয়োজন মূলত ছবি তোলারই, ১৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন। আগামীকাল রাতে অনূর্ধ্ব-১৯ দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরবে। দেশ ছাড়ার আগে শেষবারের মতো আজই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন যুবারা।

অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল
প্রথম আলো

ফটোসেশন শেষে খেলোয়াড়দের ভিড়ের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেল সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ওয়াসিমকে। যুবাদের এই দলটার সঙ্গে ওয়াসিম কাজ করছেন দুই বছর হলো। এই দলটাকে তিনি কীভাবে দেখছেন? হাঁটতে হাঁটতে ওয়াসিম উত্তরে বলেন, ‘দারুণ। ছেলেরা অনেক পরিশ্রম করে নিজেদের গড়ে তুলেছে। যে জায়গায় আমরা ওদের দেখতে চেয়েছি, সেটা হয়েছে।’

আরও পড়ুন

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ভেন্যু শেষ মুহূর্তে বদলে যাওয়ায় অবশ্য একটু সমস্যা হয়েছে। বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল শ্রীলঙ্কায়। আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বকাপ শ্রীলঙ্কা থেকে সরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকায়। দুই দেশের কন্ডিশনে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য, তা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।

অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান
শামসুল হক

ব্যাটিং কোচ হিসেবে ওয়াসিমকেও ছেলেদের প্রস্তুত করার চ্যালেঞ্জটা নিতে হচ্ছে, ‘ভেন্যু বদলে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে এটা ঠিক। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে উপমহাদেশের স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যেত। কিন্তু হুট করে বদলে যাওয়ায় সেটা কঠিন হবে। তবে সেটা সবার জন্যই প্রযোজ্য। আমি বিশ্বাস করি, এই দলের সে সামর্থ্য আছে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার, ভালো করার।’

ওয়াসিম অবশ্য ছেলেদের ওপর প্রত্যাশার চাপ দিতে চাচ্ছেন না। মাঠে তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত দেখতে চান এই ভারতীয়, ‘ওরা চাপ নিয়ে খেলুক, তা চাইব না। ফল কেমন হবে, তা নিয়ে না ভাবুক।’

গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুবাদের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের কথা ওয়াসিম মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওরা কিন্তু এভাবে খেলেই এশিয়া কাপ জিতেছে, বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে এই অর্জন করল। আমাদের তাই ওদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।’

অনূর্ধ্ব–১৯ ক্রিকেট দলের সঙ্গে বোলিং কোচ সাবেক ক্রিকেটার নাজমুল হোসেন (বাঁ থেকে প্রথম)
প্রথম আলো

ওয়াসিম যখন কথা বলছিলেন, তখন একটু দূরেই সংবাদমাধ্যমের ভিড়ে আটকা পড়েছেন যুবাদের অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান। আকবরদের ২০২০ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর এবার তাঁর দল ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরবে, সেখানে তিনি সে প্রত্যাশার কথা জানালেন। আরেকবার ট্রফি স্বপ্নের গল্প শুনিয়ে গেলেন জিশান আলম, আহরার আমিনরা। এবার সে স্বপ্ন সত্যি করার পালা।