মিরপুরে আরেকটি স্পিন দ্বৈরথ

মিরপুরের উইকেট দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেনশামসুল হক

ঠিক যেন গাছতলার পাঠশালা! শুধু গাছটাই নেই। মাঠের মাঝখানে উইকেটের পাশে গাছ থাকাটা অস্বাভাবিকও। তবে কাল অনুশীলন শেষ করে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড দুই দলই হোটেলে ফিরে যাওয়ার পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রায় সে রকমই এক দৃশ্য চোখে পড়ল।

আরও পড়ুন

একটা চেয়ার মতন আসনে বসে হাত নেড়ে নেড়ে বক্তৃতার মতো দিচ্ছেন কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা, তাঁর সামনে ঘাসের ওপর অর্ধবৃত্তাকারে মনোযোগী শ্রোতা হয়ে বসে আছেন মাঠকর্মীরা। বলা বাহুল্য, আজ এ মাঠে শুরু বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট নিয়েই মাঠকর্মীদের ব্রিফ করছিলেন মিরপুরের কিউরেটর।

টেস্ট শুরুর আগের দিন এ রকম দৃশ্য নতুন নয়। এ থেকে কোনো খবরের গন্ধ খুঁজে পাওয়াটাও বাড়াবাড়ি। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশে খেলা মানেই হলো উইকেট নিয়ে আলোচনাটা বাড়তি গুরুত্ব পাওয়া। বিশেষ করে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খেলা হলে কৌতূহলের কেন্দ্রে উইকেট থাকবেই।

অনুশীলনে কোচ হাথুরুসিংহের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান
শামসুল হক

সে কারণেই কাল বিকেলে মাঠের ওই দৃশ্যে অনেকের চোখ আটকে গেল। তার ওপর আজ শুরু দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ও নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদির দুই সংবাদ সম্মেলনেই নানাভাবে উইকেটের প্রসঙ্গ এল। কখনো প্রশ্নের কারণে, কখনো আবার প্রশ্নে উইকেট প্রসঙ্গ না থাকলেও। এই টেস্টের দলীয় সমন্বয় নিয়ে কথা বলতে গিয়েও দুজনই টেনে এনেছেন উইকেট ও কন্ডিশনের কথা।

আরও পড়ুন

কন্ডিশনের প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখা ভালো। নিম্নচাপের কারণে কাল যেমন সারা দিনই আবহাওয়া একটু মেঘলা ছিল, সকালের দিকে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিও হলো; আজকের আবহাওয়ার পূর্বাভাসও কিন্তু সে রকমই। আকাশ থাকবে মেঘলা এবং দুপুরের পর আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা।

গতকাল মিরপুরে অনুশীলনে মুশফিক
শামসুল হক

কাজেই মিরপুরে টেস্টের আলোচনায় যথারীতি গুরুত্ব পাচ্ছে উইকেট ও কন্ডিশন। সিলেট টেস্টে ‘উইকেট কেমন করে, কেমন করে’ কৌতূহলের শেষ প্রান্তে দেখা গেছে উইকেট আসলে তেমন কিছুই করেনি। চতুর্থ দিনেও অনেকটাই ব্যাটিংবান্ধব থেকে যাওয়া উইকেট থেকে স্পিনাররা সাফল্য পেয়েছিলেন মূলত ধৈর্যের পরীক্ষায় ভালো করে।

আরও পড়ুন

সিলেট আর মিরপুর এক নয়। সিলেটের উইকেটেও যে দুই দলের বোলিং সাফল্যই এসেছে স্পিনারদের হাত ধরে, মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটে সেই দুই দলের স্পিন লড়াই আরও বেশিই জমে ওঠার কথা। বাংলাদেশের একটাই দুশ্চিন্তা, গতকাল অনুশীলনে ব্যাটিং করতে গিয়ে আঙুলে চোট পেয়েছেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান। আজ তাঁর খেলা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। নিউজিল্যান্ড দলও মূলত মিরপুরের উইকেট মাথায় রেখেই বাংলাদেশে এসেছে পাঁচ স্পিনার নিয়ে।

গতকাল মিরপুরে অনুশীলনে নিউজিল্যান্ড দল
শামসুল হক

এ পর্যন্ত যা বলা হলো, মিরপুরের উইকেট নিয়ে সেটি হচ্ছে সাধারণ ধারণা। এই উইকেটই আবার কখনো কখনো অচেনা আচরণ করে বসে। কাল হাথুরুসিংহের কথায়ও এল তা, ‘অনেক সময় কয়েকটা সেশন না গেলে মিরপুরের উইকেট ঠিক বোঝা যায় না।’ মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে হাথুরুসিংহের তবু একটা ধারণা আছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে যেখানে মিরপুরের উইকেট মানেই স্পিন আর স্পিন। অথচ গত জুনে এই মাঠে সর্বশেষ টেস্টটা হয়েছিল রীতিমতো স্পোর্টিং উইকেটে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ দিনেই ৫৪৬ রানের পাহাড়সম জয় পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এ রকম উইকেটে যা হয়, উইকেট থেকে সাহায্য যা পাওয়ার সেটা পেয়েছিলেন পেসাররাই। ওই টেস্টের আগে মিরপুরে অনেক দিন খেলা না হওয়ায় কিউরেটর ও মাঠকর্মীরা উইকেট প্রস্তুত করার যথেষ্ট সময় পেয়েছিলেন। উইকেটে স্পিন কম ধরবে বুঝেই মিরপুরেও বাংলাদেশ টেস্টটা খেলেছিল তিন পেসার নিয়ে। এর আগে এপ্রিলে আয়ারল্যান্ড টেস্টের দিকে ফিরে তাকালে আবার মনে হতে পারে, যত যা–ই বলুন, মিরপুরের উইকেট আসলে স্পিনারদেরই বন্ধু।

আরও পড়ুন

সিলেটের উইকেটে জিতে আসা টেস্টটা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসে বাড়তি সঞ্জীবনী ঢালছে। তা ছাড়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের প্রথম সিরিজে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সুফলও পাচ্ছে দল। প্রথম টেস্টের একাদশে থাকা সাত ক্রিকেটার এই সিরিজের আগে জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলেছেন। টানা পাঁচ দিন মাঠে মনসংযোগ ধরে রাখা, প্রতিপক্ষের বড় জুটির সময়ও হাল ছেড়ে না দেওয়া—এসবকে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের চমৎকার বিজ্ঞাপন বলেই মনে হচ্ছে হাথুরুসিংহের। এই চক্রে ঘরের মাঠে নিয়মিত টেস্ট জয়ের যে লক্ষ্য স্থির করেছে বাংলাদেশ দল, সিলেটের অর্জনের পর কোচ এখন সেটা নিয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী, ‘ঘরের মাঠে সব টেস্ট জেতাই এখন বাস্তব লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের। আমার বিশ্বাস এটা আমরা পারব। এরপর বিদেশেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার চেষ্টা করব।’

ব্যাট-বলের অনুশীলনের আগে গা গরমের ফুটবল কেইন উইলিয়ামসনের।
শামসুল হক

২০২১ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা নিউজিল্যান্ড অবশ্য সিলেটে ধাক্কা খাওয়ার পর মিরপুরে জোরালোভাবেই ফিরে আসতে চাইবে। সেটা বলতে গিয়েও সাউদি এনেছেন উইকেট প্রসঙ্গ, ‘খেলাটা এবার ভিন্ন উইকেটে। আমরা এখানে স্পিনবান্ধব কন্ডিশনই আশা করছি। বোলিংয়ে আমাদের আরও ধারাবাহিক হতে হবে এবং এরপর ব্যাটিংয়েও ভালো জুটি গড়তে হবে।’

কন্ডিশন, উইকেট যে রকমই হোক; ক্রিকেটে এটাই আসলে শেষ কথা। খেলাটা শেষ পর্যন্ত ব্যাটে–বলে শক্তির পার্থক্য গড়ে দেওয়াতেই। সিলেটে যখন সেটা পারল বাংলাদেশ, প্রিয় মাঠ মিরপুরে নয় কেন!

আরও পড়ুন